দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃএকজন গত এক মাসের বেশি সময় ধরে সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে আলোচ্য। আর একজনের খবরই জীবন- সংগ্রাম।এক ফ্রেমে ধরা দিলেন দুজনে। মহিষাদল কুমুদিনী ডাকুয়া মঞ্চে আবেগে ভাসলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। বুকে জড়িয়ে ধরলেন খেজুরির ‘কাগজ বুড়ি’কে।

তাঁর আসল নাম বাসন্তী ত্রিপাঠী। ৮১ বছরের ‘তরুণী’। গোটা খেজুরি তাঁকে কাগজ বুড়ি নামেই চেনে। গত ৪০ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ পৌঁছে দেন তিনি। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, পায়ে হাঁটাই ভরসা। মার্চের শেষে তখন সবে লকডাউন শুরু হয়েছে। গোটা দেশ কার্যত ভাইরাসের ভয়ে ঘরবন্দি। কিন্তু কাগজ বুড়ি ভয়হীন। কারণ খবর পৌঁছে দিতে হবে তো। দেশ-দুনিয়ায় কী কী হচ্ছে তা জানানোকে কর্তব্য মনে করেই এই কাজ করে গিয়েছেন বাসন্তীদেবী।

হাঁটার গতি শ্লথ হয়েছে বয়সের ভাড়ে। কিন্তু তাতে মনের জোর কমেনি একটুও। রবিবারের অনুষ্ঠানে কাগজ বুড়িকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় মহিষাদল কুমুদিনী ডাকুয়া মঞ্চে। সেখানে শুভেন্দু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু রায়, বুক সেলার্স গিল্ডের কর্ণধার ত্রিদীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা বলেন, কাগজ বুড়ি আসার পর যখনই জেনেছেন শুভেন্দু আসবেন তখন থেকেই উত্‍সাহিত। উদ্যোক্তাদের জানিয়েছেন, শুভেন্দু বহুবার তাঁকে সাহায্য করেছেন।
খেজুরি যেমন কাগজবুড়িকে চেনে তেমন শুভেন্দুও নন্দীগ্রাম-খেজুরির নাড়িনক্ষত্র জানেন। অনেকের মতে, খেজুরি যেমন কাগজবুড়ির জীবন সংগ্রাম দেখছে গত চার দশক ধরে তেমন শুভেন্দুর লড়াইও সেখানে রূপকথার মতো।

সংসার চালাতেই কাগজের হকারি শুরু করেছিলেন বাসন্তীদেবী। সেসময়ে অনেকেই নিন্দেমন্দ করতেন। ‘ঘরের বউ হকারি করছে!’ কিন্তু সেসবে কান দেননি। খবর পৌঁছে দিয়েছেন খেজুরির ঘরে ঘরে, চায়ের দোকানে। তারপর কখন যে তিনি মানুষের কাগজ বুড়ি হয়ে গিয়েছেন জানতেও পারেননি। খবরকে ভালবেসেই দশকের পর দশক ধরে মাইলের পর মাইল হাঁটা হয়ে গিয়েছে। তবু ক্লান্তি নেই।

সংসারের ভার তাঁর কাঁধে অনেকটা। দুবেলা জল-মুড়ি খান কাগজ বুড়ি। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলেন, ওই পয়সাটুকু বাঁচিয়ে নাতি-নাতনিকে পড়াশোনার জন্য দেবেন। খবরের গতিতে ছুটে চলেছেন কাগজ বুড়ি। ৮১ বছর বয়সেও।ক্লান্তিহীন তাঁর এই পথ চলার সাক্ষী খেজুরির মানুষেরাও, এদিন আবেগে ভাসলেন তাঁরাও ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here