দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আজ, সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক- এই সফরে মুখ্যমন্ত্রীর দু’রকম কর্মসূচিই রয়েছে। তাই আসন্ন বিধানসভা ভোটের নিরিখে এই সফরটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এই সফরে চা-বাগানের গৃহহীন শ্রমিকদের জন্য চা-সুন্দরী প্রকল্প বিশদ ভাবে ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী ৷

ইতিমধ্যে আবাসন ও শ্রম দপ্তর যৌথ সমীক্ষা চালিয়ে সাতটি চা-বাগানের ৩,৬৯৪ জন শ্রমিকের নামের তালিকা বানিয়েছে। চিহ্নিত হয়েছে জমিও। মুখ্যমন্ত্রী চান ভোটের আগেই গৃহহীন শ্রমিকদের জন্য ঘর তৈরির কাজ শুরু করতে। কোচবিহারে মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহারের মানুষের আবেগকে সম্মান দিয়ে সূচনা হবে রাজ্য পুলিশের নতুন নারায়ণী ব্যাটেলিয়ানেরও। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগডোগরায় নেমে মুখ্যমন্ত্রী যাবেন জলপাইগুড়ি। সেখানেই তাঁর রাত্রিবাসের কথা। আগামিকাল, মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি শহরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশ করে তিনি কোচবিহার রওনা দেবেন।

বিকেলে মেডিক্যাল কলেজ ও নারায়ণী ব্যাটেলিয়ানের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। বুধবার কোচবিহারে রয়েছে রাজনৈতিক সভা। সেখান থেকে শিলিগুড়ি ফিরবেন মমতা। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। তাই ভোটের অঙ্কে রাজ্যের এই প্রান্তে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য দুশ্চিন্তার কিছুটা অবকাশ থাকছে। এর মধ্যে পাহাড়ে বিমল গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তন এবং তৃণমূলের হয়ে তাঁর ধারাবাহিক প্রচারে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছে শাসকদল। কিন্তু ডুয়ার্সের চা-বাগান ও কোচবিহার নিয়ে উদ্বেগ কমেনি৷

সম্প্রতি কোচবিহারে প্রবীণ বিধায়ক মিহির গোস্বামীর দলত্যাগ চাপ বাড়িয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে নারায়ণী ব্যাটেলিয়নের সূচনা কোচবিহারে তৃণমূলকে ফায়দা দিতে পারে। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন কোচবিহার রাজা। তাঁর সেনাবাহিনীর নাম ছিল ‘নারায়ণী সেনা’। কোচবিহারের মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে ‘নারায়ণী সেনা’ নামটির সঙ্গে। কামতাপুরি আন্দোলনকারীরাও তাঁদের বাহিনীকে ‘নারায়ণী সেনা’ নাম দিয়েছেন। রাজ্য পুলিশের ব্যাটেলিয়ানের নামকরণ তাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। চা-বাগানে দলকে জনপ্রিয় রাখতে ‘চা-সুন্দরী’ প্রকল্পও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা অনেকের। চলতি বাজেটে গৃহহীন চা-শ্রমিকদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দিতে এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু লকডাউনের জেরে কাজ বিশেষ এগোয়নি। গত সেপ্টেম্বরে উত্তরবঙ্গ সফরের সময় এই প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই আবাসন ও শ্রম দপ্তর যৌথ সমীক্ষা চালিয়ে সুরেন্দ্রনগর, কালচিনি, মুজনাই, রেডব্যাঙ্ক-সহ সাতটি চা-বাগান চিহ্নিত করে। এই সব বাগানের উদ্বৃত্ত যে জমিতে বর্তমানে শ্রমিদের ঝুপড়ি রয়েছে, সেখানেই তৈরি হবে এই আবাসন প্রকল্প। এককথায়, চা-শ্রমিকদের কলোনি তৈরি হবে।

প্রথম দফায় ৩,৬৯৪ জন চা-শ্রমিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর একটি অংশ মহিলা। প্রত্যেক পরিবার দু’টি ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম সমৃদ্ধ একটি করে ছোট একতলা বাড়ি পাবে। বাড়িতে জল, বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকবে। সামনে রাস্তা, কিছুটা ফাঁকা জায়গা রাখা হবে। প্রতিটি বাড়ি তৈরির খরচ পড়বে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা। এ বার উত্তরবঙ্গ সফরের দিনক্ষণ স্থির হতেই মুখ্যমন্ত্রী ‘চা-সুন্দরী’ প্রকল্পের খোঁজ নেন। তিনি জলপাইগুড়ি থাকাকালীনই প্রকল্পের অগ্রগতি দেখে নিতে চান। নবান্নের কর্তাদের কথায়, রাজ্যে এই মুহূর্তে ৩৭০টি চা-বাগান রয়েছে। সেখানে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ। এর ৫০ শতাংশই মহিলা আদিবাসী। এঁদের বিদ্যুৎ, জল, চিকিৎসা-সহ নানা সমস্যা রয়েছে। বাগানের ধারে ঝুপড়িতে বসবাস করেন। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত, বাগানের উদ্বৃত্ত জমি, যেখানে চা-গাছ লাগানো হয় না, সেখানেই পাকা কলোনি তৈরি করে দেওয়া হবে, যেখানে সুস্থ জীবনযাপনের সুবিধে থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here