দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সর্বদল বৈঠক। কিন্তু টেবিল জুড়ে বসার দিন এখন নেই। সবটাই স্ক্রিনে। ভিডিও কনফারেন্সে। নরেন্দ্র মোদীর ডাকা সেই সর্বদল বৈঠকে আজ থাকতে পারেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী, এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি—দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কেউই বলতে গেলে এড়িয়ে যাচ্ছেন না এই বৈঠক। কারণ, প্রসঙ্গ চিন।

লাদাখ সীমান্তে চিন বেমক্কা হামলার ঘটনায় ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু এবং তা ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে সে ব্যাপারেই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সর্বসম্মত অবস্থানে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন।

অতীতে পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর উপর পাক জঙ্গিদের হামলার পর ঠিক এভাবেই সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর দিনক্ষণ দেখে বালাকোটে হামলা করেছিল বায়ুসেনা।

চিন প্রসঙ্গে সেই অ্যাডভেঞ্চারিজম নয়াদিল্লির যে নেই তা গত ৪৮ ঘন্টাতেই পরিষ্কার। বরং নয়াদিল্লি বেজিংকে বারবার এই প্রস্তাবই দিচ্ছে যে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হোক। তবে এও কঠোরভাবে জানিয়েছে, ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে তাঁবু গেড়েছে লাল ফৌজ। গালওয়ান উপত্যকায় ঐতিহাসিক ভাবে অধিকার ভারতেরই। তা কোনওদিনই চিনের অংশ ছিল না। সুতরাং গাজোয়াড়ি চলবে না।

কূটনৈতিক ভাবে নয়াদিল্লি যখন এভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেমেছে, তখন ঘরোয়া পরিবেশে লাদাখ সংঘাত নিয়ে পারদ যে উর্ধ্বমুখী তা দৃশ্যত স্পষ্ট। চিনা সামগ্রী বর্জনের ডাক দেওয়া হচ্ছে। কোথাও ধর্না হচ্ছে, কোথাও চিনা সামগ্রী জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার অর্থ গরিষ্ঠ সংখ্যক ভারতীয়র ভাবাবেগে এই চিনা হামলা আঘাত হেনেছে। এই ভাবাবেগকে সন্তুষ্ট করার দায়ও এখন সরকারেরই।

পর্যবেক্ষকদের মতে, সেই সঙ্গে দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলির দায়ও এখন যথেষ্ট। দ্বিদলীয় ব্যবস্থার মতো একটা রাজনৈতিক সর্বসম্মতি গড়ে তুলতে হবে। সেনাবাহিনীকে অবগত রেখে সেই সর্বসম্মতি গড়ে তোলার নেতৃত্বে থাকতে হবে মোদী সরকারকে।

আজকের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্ভাব্য উপস্থিতিও তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, দেশ যখন সীমান্তে সংকটে পড়েছে তখন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠকে উপস্থিত না থাকলে দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সেই কারণেই সম্ভবত বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন তৃণমূলনেত্রী।

তবে পর্যবেক্ষকদের অনেকের এও মত, শুক্রবারের বৈঠকে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে সনিয়া গান্ধীর বক্তব্য। কারণ, বিদেশ নীতি নিয়ে সারা বছর আঞ্চলিক নেতৃত্বের দৃশ্যত কোনও মাথাব্যাথা থাকে না। তাদের কোনও আলোচনায় বিশেষ অংশ নিতে দেখা যায় না। বরং কংগ্রেস সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসাবে বরাবর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। 

এ ব্যাপারে কংগ্রেস দলের বক্তব্যের ঘরোয়া রাজনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বও রয়েছে। মোদী অনুগামীরা বাইরে যাই বলুন, সনিয়া গান্ধীর বক্তব্যকে অন্তত এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকেও।

আজকের বৈঠকে অন্ধ্রের ওয়াইএসআর কংগ্রেস নেতা জগন্মোহন রেড্ডি, টিআরএস নেতা এম কে স্ট্যালিন, শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে, অখিলেশ যাদব, সুখবীর বাদল, নীতীশ কুমার, হেমন্ত সোরেন প্রমুখের থাকার কথা। একমাত্র মায়াবতীর ব্যাপারটা এখনও স্পষ্ট নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here