অশোক মজুমদার

ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপারে সিপিএম এর সুনাম ছিল। কিন্তু ব্রিগেডের সমাবেশে সিপিএম নেতৃত্ব যেভাবে স্রেফ কিছু আসন বাড়ানোর লোভে উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী আইএসএফ এর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন তা নজিরবিহীন। আব্বাসকে তেল দেওয়ার জন্য সেলিম এর মত সিপিএম নেতাও তাদের প্রধান জোটসঙ্গী কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকে যেভাবে বক্তব্য শেষ করার কথা বললেন, তা অকল্পনীয়। আসলে সিপিএম এরকমই সুবিধাবাদী, কিন্তু অনেকদিন তাদের এই রূপ দেখা যায়নি, তাই অনেকের চোখে লাগতে পারে। দেখলাম, পক্ককেশ বিমানদা থেকে শুরু করে ততটা তরুণ নয় সুজন চক্রবর্তী সব্বাই আব্বাসকে তেল দিয়ে কুল পাচ্ছেন না, ভোট বড় বালাই! দিশাহীন বামপন্থা যখন কোন মতে ভেসে ওঠার জন্য, নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য ধর্মান্ধদের তোষণ করে তখন ছবিটা ঠিক এমনই দাঁড়ায়।

আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকির বাচনভঙ্গী ও আস্ফালন একেবারে ধর্মান্ধ নেতাদের মত। নিজের অ্যাজেন্ডা ছাড়া তার আর কোন কথা নেই। তিনি জানেন, সংখ্যালঘু ভোটের জন্য সবাই তাকে তেল দিচ্ছে। তাই তার যা খুশি বলার স্বাধীনতা আছে এবং তিনি তার সদ্বব্যবহারও করেছেন। যারা আব্বাসের কাছে এভাবে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়ে নতজানু হলেন, তাদের কাছে আমার একটিই প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আব্বাস কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও বড় শক্তি! আপনারা বহু অনুরোধ সত্বেও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোট করতে রাজি হলেন না! শেষ অবধি নৌকা ভেড়ালেন আব্বাসের ঘাটে!

জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার ‘ঐতিহাসিক ভুল’এর পর এটা আপনাদের দ্বিতীয় ‘ঐতিহাসিক ভুল’। সাম্প্রতিককালে বাংলার রাজনীতি তো বটেই গোটা ভারতের রাজনীতিতেই এত বড় ভুল আর কেউ করেননি। আব্বাসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে কংগ্রেসের দ্বিধা আছে, ছিলও। কারণ জোট হলে মুর্শিদাবাদ, মালদহে কংগ্রেসের তাদেরকে আসন ছাড়তে হবে। আপনারা কংগ্রেসকে চাপ দিয়ে আব্বাসকে এই জোটে সামিল করেছেন। একটা সাম্প্রদায়িক দলকে আপনারা বৈধতা দিলেন! ইতিহাস এরজন্য কোনদিন আপনাদের ক্ষমা করবে না।

সত্যি বলতে কি আব্বাস নিজেও এতটা আশা করেনি। দেখছিলাম সে দৃশ্যতই আপ্লুত। কারণ এত মানমর্যাদা তাকে এর আগে কেউ দেয়নি। ব্রিগেডের ময়দানে সে এর জন্য আপনাদের ধন্যবাদ দিয়েছে। আমার রাজনৈতিক জ্ঞান সামান্য কিন্তু লক্ষ্য করেছি, ইতিহাসের একেকটা গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে সিপিএম ঠিক এমনই ভুল করে।

এটা করে আপনারা বিজেপি’রই সুবিধা করে দিলেন। বাংলার মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে মুসলমান তোষণের অভিযোগ আনেন তারা। আপনারা সেটাকেই জোরদার করলেন। এতে বিজেপির হিন্দু ভোট সংহত করার পরিকল্পনা আরও জোরদার হল। আসলে আপনারা এক ঢিলে দু পাখি মারতে চেয়েছিলেন। এক, নিজেদের সংখ্যালঘু ভোট বাড়ানো। দুই, আব্বাসকে তোল্লাই দিয়ে মালদা, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের আসন কমিয়ে তাদের দরাদরি করার ক্ষমতা দুর্বল করে দেওয়া। ধর্মান্ধরা কাউকে বিশ্বাস করেনা, তাদের দাবি আরও বাড়বে। অন্যদিকে তাদের সঙ্গী হওয়ার জন্য আপনাদের বিরুদ্ধে বিজেপির আক্রমণ আরও তীব্র হবে। দুর্বল সিপিএম এই আক্রমণ সামলাতে পারবে না। আমার অনেক বামপন্থী বন্ধুরা এতদিন অভিযোগ করতো, মমতা মুসলমানদের তোষণ করেন। গতকালের ব্রিগেডের ঘটনার পর তারা কী বলবেন তা আমার জানতে ইচ্ছে করছে!

কিন্তু অতিকৌশলে নিজেদেরই ডুবতে হয়। একদা কৌশল পার্টি বলে পরিচিত সিপিআই একারণেই ডুবেছে। সিপিএম এর অবস্থাও তাই হবে। বাংলার মানুষ মূলত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে। তারা বিজেপির মত, আইএসএফ এর রাজনীতিকেও ঘৃণা করে। এতে আপনারা আপনাদের ট্র্যাডিশনাল ভোটব্যাংক হারাবেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলী, মালদা, মুর্শিদাবাদের কিছু আসনের জন্য বড় বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেললেন আপনারা। কারণ বাংলার সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক তৃণমূলের দিকেই থাকবে। আপনাদের আম ও ছালা দুটোই যাবে।

আবার বলছি কমরেড জ্যোতি বসু কে প্রধান মন্ত্রী হতে না দেওয়া ঐতিহাসিক ভুল আপনাদের অনেক কমরেড সহ সাধারণ মানুষ এখনও বলেন । এবার ছোকরা আব্বাস কে নিয়ে পক্কো কেস বাম নেতারা ব্রিগেডের মঞ্চে যেভাবে আদেখেলপনা করলেন দ্বিতীয় বার এই ঐতিহাসিক ভুলের জন্য আপনাদের সেকেন্ড মে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here