দেশের সময় ওয়েবডেস্ক : বকেয়া মেটানোর জন্য কেন্দ্রকে ‘ডেডলাইন’ বেঁধে দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রেড রোডে তিনি ধরনায় বসেছেন। তার আগেই কেন্দ্র থেকে পাওয়া গেল টাকা!

নবান্ন সূত্রে খবর ৯৫১ কোটি ৫৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জলজীবন মিশন প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। শুক্রবারই এই চিঠি কেন্দ্রের জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে দেওয়া হয়েছে নবান্নকে।

সূত্রের খবর, জল জীবন মিশনের আওতায় রাজ্যকে ৪৫৬ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র।

হতে পারে এ ঘটনা একেবারে কাকতালীয়। ঘটনাচক্রে এদিনই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে বাংলার সামাজিক প্রকল্পগুলিতে টাকা পয়সার পাওনা গণ্ডা নিয়ে যে রকম ঘটনাপ্রবাহ চলছে তাতে কোনও কিছুই আর কেউ সরলরেখায় দেখতে চাইছে না।

কেন্দ্রীয় সরকার এদিন যে অর্থ বরাদ্দ করেছে তা অবশ্য বাংলার বকেয়া পাওনা নয়। সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন রাজ্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী ছিলেন তখন থেকেই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে নল বাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প নিয়ে অতিসক্রিয় হয়েছিলেন। তার কারণও রয়েছে। কলকাতায় বাড়িতে বাড়িতে ট্যাপের মাধ্যমে জল সরবরাহ হয়।

কিন্তু জেলায় অধিকাংশ জায়গায় নলকূপের জল এখনও পানীয় হিসাবে বহু মানুষ ব্যবহার করে। অথচ বাংলায় আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের সমস্যা প্রবল। যা শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। এই কারণে নদীর বা হৃদের জল তথা সারফেস ওয়াটার পরিস্রুত করে বাড়িতে বাড়িতে সরবরাহ করার যোজনা নেওয়া হয়। এই প্রকল্পে সাহায্যের জন্য ইউপিএ সরকারের আমল থেকে একটি যোজনা ছিল। তার নাম জাতীয় রুরাল ড্রিঙ্কিং ওয়াটার মিশন। মোদী জমানায় আর পাঁচটা পুরনো প্রকল্পে নতুন জামা পরানোর মতই এর নাম হয় জল জীবন মিশন। 

শুক্রবার সেই প্রকল্প খাতে কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৯৫১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। তবে এটা যেমন ভাল খবর, তেমনই এতে রাজ্যের উপর চাপও রয়েছে। জল শক্তি মিশনের আওতায় কেন্দ্র-রাজ্য অংশীদারিত্ব হল ৫০:৫০। অর্থাৎ রাজ্যকেও এই প্রকল্প খাতে ৯৫১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে।

জল জীবন মিশন খাতে একটি এসক্রো অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কেন্দ্র ওই টাকা রিলিজ করার পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্য সরকারকেও সম পরিমাণ টাকা এসক্রো অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। তা ছাড়া চিঠিতে এ কথাও পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে যে এই টাকা কোনওভাবেই অন্য খাতে ঘোরানো যাবে না।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রের থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য শুক্রবার রেড রোডে ধরনায় বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এরপরেই তিনি জানান, যদি রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রের নিয়ম মানে সেক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি বকেয়া টাকা মিটিয়ে ফেলা হবে। উল্লেখ্য, ৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এরই মধ্য়ে কেন্দ্রের টাকা দেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, ‘বাংলার যে বকেয়া রয়েছে তা শীঘ্রই মিটিয়ে ফেলা হবে। তবে এক্ষেত্রে কেন্দ্র যে নিয়মগুলি উল্লেখ করেছে তা মানতে হবে। রাজ্যের কাছে একাধিক বিষয় নিয়ে কেন্দ্র প্রশ্ন করে। রাজ্য সেগুলির জবাব দিচ্ছে। কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমিও পর্যালোচনা করছি। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।’ পাশাপাশি একটি ভিডিয়ো বার্তায় বোসের দাবি, বাংলার মানুষ যাতে ন্যায় পান সেই কারণে মোদী সরকার পদক্ষেপ করছে।

উল্লেখ্য, কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে একাধিকবার বকেয়া না মেটানোর অভিযোগ তুলেছে রাজ্য। এর আগে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলের অন্যান্য সাংসদরা দিল্লিতে গিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।

১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা থেকে শুরু করে গ্রাম সড়ক যোজনাতেও টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র, এই অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রকে নির্দিষ্ট ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ের মধ্যে টাকা না মেটালে ধরনায় বসবেন বলেও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ তিনি ধরনায় বসেছেন।

কেন্দ্রের লাগাতার বঞ্চনার প্রতিবাদে রেড রোডে ধর্নায় বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রেড রোডে পৌঁছে প্রথমে আম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান তিনি। তার পর চলে যান মঞ্চে।


শুক্র ও শনিবার ধর্না মঞ্চে থাকবেন মমতা। মমতা এদিন ধর্না মঞ্চে আসেন কালো পাড় সাদা শাড়ি পড়ে। গায়ে কালো শাল। ধর্না মঞ্চে মমতার পাশে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই কালো পোশাক পরে এসেছেন। মঞ্চে আছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজারা। রয়েছেন অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, সুজিত বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস কুমাররা। প্রায় একবছর আগে গত বছরের মার্চ মাসে একই জায়গায় ধর্নায় বসেছিলেন মমতা। এবারও বসলেন ১০০ দিনের কাজের বকেয়া, আবাস যোজনার টাকার দাবিতে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রকে সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন মমতা। তার মধ্যে সদুত্তর না পাওয়ায় বকেয়ার দাবিতে ধর্না শুরু করলেন মমতা। 

এদিকে ধর্নামঞ্চ থেকে প্রশাসনিক কাজও সামলাবেন মমতা। মঞ্চের পেছনে তৈরি করা হয়েছে ছোট মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠকও করবেন মমতা। মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা ভেবে মাইক বাজানোর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও রেড রোডের সামনে কোনও স্কুল নেই। তবুও সতর্ক থাকতে চাইছে নেতৃত্ব। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here