পার্থসারথি সেনগুপ্ত ,কলকাতা কালো পোশাক পরেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে রেড রোডে আমেবেদকার মূর্তির পাদদেশে আজ থেকে দু দিন ব্যাপি ধর্ণার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এদিন কালো চাদর পরিধান করেই তিনি ধর্না মঞ্চে আসেন। সেখানে সেখানে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা তো বটেই, এমনকি কেন্দ্রীয় বাজেট অন্তর্সার শূন্য সেই সব পাল্টা অভিযোগ তুলে তিনি কামান দাগলেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। তার ধারণা, কেন্দ্রীয় সরকারের পরতে পরতে মিথ্যার বেসাতি।

তার কটাক্ষ, “সবই ২৫ বছরের রূপরেখা! ২৫ বছর পর কি হবে, তাই নিয়ে যদি বাজেট হয়, তো এখন খাবে কি? ক্যাগে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সবই মিথ্যা। ক্যাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ২০০৩ সালের হিসাব মেলে নি। তা ২০০৩ সালে কি আমি ছিলাম, আমি হিসাব দেব? ২০১১ সালে আমি এসেছি, তার পরের হিসাব দেব। পুরোটাই মিথ্যা কথা। গ্রেট লায়ার। কে বলছে ইউটিলাইজাশেন সার্টিফিকেট দেয় নি। সব দেওয়া হয়েছে। “

বাংলার বকেয়া পাওনা-গণ্ডার দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে সম্প্রতি জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, ক্যাগের রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য। আর এরপরই বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তুলে ধরেন ক্যাগ রিপোর্টের প্রসঙ্গ। সুকান্তর দাবি, প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার হিসেব দেয়নি রাজ্য। আর এই নিয়ে তুমুল হইচই পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। এই বিতর্কের আবহেই এবার প্রধানমন্ত্রীকে ‘স্ট্রং’ চিঠি পাঠালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে ধরনামঞ্চ থেকে মমতা নিজেই জানালেন সে কথা।

এমন অভিযোগও তোলেন তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যখন জন্ম হয় নি, তখনকার নথি চেয়েছ। তার সংযোজন, “সমস্ত কেন্দ্রীয় অফিস ও এজেন্সিগুলিকে পার্টি অফিস বানিয়ে দিয়েছে। আমরা পার্টি বাজি করি নি। ওদের বেটি পড়াও, বেটি বাচাও কর্ম সূচিতে দেশ জুড়ে বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা। বিজ্ঞাপনই দিচ্ছে ওই টাকার। আমাদের কন্যাশ্রী টা দেখুন। ওদের কর্মসূচিতে রাজ্য ওয়ারী পাঁচ টাকাও মিলবে না। বিজ্ঞাপনটা বাদ দিলে। আর আমাদের এখানে? মেয়েরা স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে তিন দফায় কন্যা শ্রীর টাকা পাচ্ছে। অন্যদিকে, ক্লাস নাইনে উঠলে তারা পায় সাইকেল, আর টুয়েলভ এ স্মার্ট ফোন। “

এদিন একশো দিনের কাজ বা আবাস যোজনা নিয়েল তথা কথিত অসঙ্গতি ঘিরে কেন্দ্রের নানা অসঙ্গতির অনুযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন মমতা। তার পাল্টা অভিযোগ, এগুলি সম্পুর্ন ভিত্তিহিন। এই প্রসঙ্গে তিনি পয়লা ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা তার চিঠি থেকে উদ্ধৃত করেন। তাতে তিনি জানিয়েছেন, রীতি মত ২০০২-৩ আর্থিক বছর থেকে ২০২০,-২১ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ২৯ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকল্প খাতে হিসাব পেশ তথা ইউ সি বকেয়া রয়েছে বলে দিল্লি অভিযোগ তুলেছে। তার পাল্টা যুক্তি, ইউসি দেওয়া হয়েছিল। আর তা দেওয়া হয়েছিল বলেই পরবর্তী দফায় বিভিন্ন প্রকল্প গুলির টাকা এসে ছিল। তার প্রশ্ন, “না হলে কি দিল্লি টাকা দিত। “

তিনি মোদীকে জানিয়েছেন, যে যে তাদের বিভিন্ন্ প্রকল্পে ট্যাক্স দিয়েছিল সেই সব মন্ত্রককেই ইউ সি মিটিয়ে দেওয়া হয়েছ। বরং সেই সব মন্ত্রকে খোঁজ করলেই এই সব নথি পাওয়া যাবে। আর গত ডিসেম্বরেই প্রধানমন্ত্রীকে মমতা অনুরোধ করেছিলেন এই বিষয়ে যেন দিল্লীতে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যেন পশ্চিমবঙ্গের এই ইস্যুটির মীমাংসা করে কেন্দ্র। মমতা বিস্মিত যে ২৩ জানুয়ারির সেই বৈঠকে প্রসঙ্গটি ওঠেই নি!

প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে মমতার পাঠানো সেই ‘স্ট্রং’ চিঠিতে কী কী বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে? সে কথাও আজ ধরনা মঞ্চ থেকে জানালেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, প্রত্যেকটি ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট যে সময়মতো দেওয়া হয়েছে, সে কথা উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে। প্রধানমন্ত্রী যে সুদীপকে বলেছিলেন, ক্যাগ রিপোর্ট দেখে নেওয়ার জন্য… সে প্রসঙ্গও আজ উঠে আসে মমতার গলায়। বললেন, ‘কী দেখব! পুরো মিথ্যে কথা বলা হয়েছে। ক্যাগের কাছে কোনও তথ্যই ছিল না, কী লিখতে হবে, কী লিখতে হবে না। এটি একটি বিকৃত তথ্য, যা বিজেপি দলের তরফে লেখা হয়েছে।’

রেড রোডের ধরনা মঞ্চ থেকে হিসেবে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘আমরা সব হিসেব দিয়েছি। তৃণমূল তাহলে চোর? আমরা তোমরা সবাই সাধু? কেন্দ্র তো সব বিভাগেই ৩০ শতাংশ করে কমিশন নিচ্ছে। আমি তাই কড়া চিঠি দিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে।’ এমত অবস্থায় আগামী ১৩ তারিখ পর্যন্ত ধরনা কর্মসূচি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার পর্যন্ত এই ধরনা কর্মসূচিতে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। এরপর তৃণমূলের অন্যান্য শাখা সংগঠন এই কর্মসূচি চালিয়ে নিয়ে, সেই নির্দেশ দিয়ে যান এদিনের মঞ্চ থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here