দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিকবার বলেছেন, “এটা যুদ্ধের যুগ নয়।” ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে সমর্থন করেনি ভারত।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারতকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলি। ভারত প্রত্যেকবারই জানিয়েছে, তারা কোনও পক্ষে যেতে নারাজ, নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে চায়।

স্বাধীনতার পর থেকেই রাশিয়া ভারতের বন্ধু। আর গত কয়েক বছরে উল্কার গতিতে বেড়েছে ভারত-মার্কিন ঘনিষ্ঠতা। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় সফরের পর তো, মহাকাশ থেকে প্রতিরক্ষা – বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মজবুত অংশীদারিত্বের ছবি ধরা পড়ছে। তাহলে কি কিছুটা হলেও আমেরিকার দিকে ঝুঁকছে ভারত? না, তার নিরপেক্ষ অবস্থানেই আছে নয়া দিল্লি।

গতকাল, বৃহস্পতিবার মস্কোয় রুশ উদ্যোগপতিদের এক সমাবেশে যোগ দেন পুতিন। সেখানেই রুশ পণ্য এবং ব্র্যান্ডগুলিকে উৎসাহ দিতে গিয়ে, তাঁর বক্তৃতায় ভারতের উদাহরণ টানেন রুশ প্রেসিডেন্ট। মন্তব্য করেন, ভারতীয় অর্থনীতিতে মোদীর উদ্যোগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা শোনা গেল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখে। মোদীকে ‘রাশিয়ার মহান বন্ধু’ বলে জানালেন তিনি। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের প্রশংসায় মুখর হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মোদীর মতো করেই তিনি ডাক দিলেন ‘আত্মনির্ভর রাশিয়া’ গড়ারও! দেখুনভিডিও

https://twitter.com/MeghUpdates/status/1674449342084816898?t=QHF33Mhjc9kIpFhnctUCXw&s=19

পুতিন এদিন বলেন, ‘রাশিয়ার মহান বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি কয়েক বছর আগে একটি দারুণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন, মেক ইন ইন্ডিয়া। ভারতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব আজ সকলের চোখে পড়ছে।’ ভারতের এই উদাহরণ টেনে এদিন ‘আত্মনির্ভর রাশিয়া’ গড়ার ডাক দেন পুতিন। তিনি জানান, রাশিয়ার অর্থনীতিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, যাতে বিদেশ থেকে আর কোনও পণ্য আমদানি না করতে হয়। নিজেদেরই আধুনিক পণ্য, পরিষেবা এবং প্রযুক্তি উৎপাদন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, পুতিনের এই প্রশংসার পিছনে কারণও রয়েছে বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল। কারণ গত দু’বছরের যুদ্ধ পরিস্থিতির পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের দেশগুলির সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি ঘটছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই রাশিয়া এবং আমেরিকা-সহ অন্য পশ্চিমী দেশগুলির মধ্যে মধ্যে কোনও একটির পক্ষ বেছে নিচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে একমাত্র ব্যতিক্রম ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনেক চাপের মুখেও নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকেছে ভারত। যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার পথে হাঁটার কথা বললেও সরাসরি রাশিয়ার বিপক্ষে যায়নি তারা। বরং একদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন, অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন– দু’জনেই ভারতকে পরম মিত্র বলছে। ফলে সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বেশি কাছের বন্ধু কে হবেন, তার যেন প্রতিযোগিতা চলছে। পুতিনের মন্তব্যেও তারই প্রতিফলন।

যদিও ভারতৃরাশিয়ার সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব নতুন নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই রাশিয়া ভারতের বন্ধু। ভারত-মার্কিন ঘনিষ্ঠতা বরং গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। তবে তাতে যে রাশিয়ার দিক থেকে কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি, তারই যেন প্রমাণ মিলল গতকাল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদার প্রশংসা শোনা গেল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর নির্দেশ দিয়েছিলেন পুতিন। তারপর থেকে বহু বিদেশি সংস্থা, বিশেষ করে পশ্চিমী সংস্থাগুলি রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এদিন তাঁর বক্তৃতায় এই সংস্থাগুলিকেও একহাত নেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি অভিযোগ করেন কিছু কিছু বিদেশি ব্র্যান্ড, তাদের রুশ বাজার থেকে বিদায় নেওয়াটাকে, প্রচারের কাজে লাগাচ্ছে। পশ্চিমে যে রুশ বিরোধী মনোভাব রয়েছে, তাকে উসকে দিয়ে নিজেদের পণ্যের বিপণন করতে চাইছে। তবে এই ধরনের প্রচার কৌশল তাদের কোনও উপকার করবে না বলে দাবি করেন ভ্লাদিমির পুতিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here