কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো আর খুব বেশিদিন বাকি নেই। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সর্বত্র পুজো পুজো গন্ধ। যাঁরা ঘুরতে ভালোবাসেন, দুর্গাপুজোর ছুটিতে তাঁদের প্ল্যান সাড়া। প্রত্যেক বছরের মতোই এবারও দুর্গাপুজোয় প্রচুর পর্যটক ভিড় জমাবেন উত্তরবঙ্গে।

ট্রেনে তো জায়গা নেই। পুজোরও তো আর মোটে মাসখানেক বাকি। মাথায় হাত উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীদের। পর্যটক কোথায়? সামান্য যে কয়েকশো পর্যটক, পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার হোম-স্টেতে বসে রয়েছেন। কিন্তু দার্জিলিং, মিরিক, কালিম্পংয়ে পর্যটকের দেখা নেই বললেই চলে। খাঁ খাঁ করছে বেশির ভাগ হোটেল, লজ, রিসর্ট। পুজোর মরশুমে বুকিংয়ের এমন বেহাল দশা কবে এসেছে মনে করতে পারছেন না উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

পুজোয় ট্রেনের বুকিং হয়েছে দেদার। কিন্তু দার্জিলিংয়ের হোটেল, লজ, রিসর্টে বুকিং তেমন আহামরি নয়। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সন্দীপন ঘোষও বুকিংয়ের হাল দেখে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘গরমের সময়ে এত ভালো ব্যবসার পরে পুজোর বুকিংয়ের হাল কেন এত খারাপ সেটা আমাদেরও মাথায় ঢুকছে না। দার্জিলিংয়ে বুকিং ৩৫ শতাংশ হলে সিকিমে তাও নেই। বিমান ভাড়া একটা কারণ হতেই পারে। আবার এমনও হতে পারে যে পর্যটকেরা শেষ মুহুর্তে বুকিং করতে পারেন।’

পুজোতে উত্তরবঙ্গে মূলত তিন ধরনের পর্যটক বেড়াতে আসেন। রাজ্যের পর্যটকেরা আকাশে পেঁজা মেঘ দেখলেই বাক্সপ্যাঁটরা গোটাতে শুরু করেন। মাঙ্কি টুপি থেকে বিয়ের শাল, কিছুই বাদ পড়ে না। ভিনরাজ্যের পর্যটকেরা আসেন। আর আসেন বিদেশিরা। বিদেশিরা পুজোর পরে মূলত বড়দিনকে সামনে রেখে পাহাড়ে আসেন। ইদানীং বাংলাদেশি নাগরিকরাও প্রচুর সংখ্যায় পাহাড়ে আসছেন। তবে তাঁদের বেশির ভাগেরপছন্দ মূলত পাহাড়ের বর্ষা। সেই কারণে এ বার গরমের পরে বর্ষার মরশুমেও পাহাড়ে প্রচুর পর্যটক ছিল।

আরও একটি কারণ রয়েছে, সেটা হলো অনেকেই পুজোর চারটে দিন, বিশেষত অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দিতে পুজো মণ্ডপে যেতে চান। পাহাড়ে সেটা সম্ভব কি না তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে অনেকের। পর্যটন ব্যবসায়ীদের কাছে ঘন ঘন ফোন আসছে এই ব্যাপারে। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘এখনও বুকিং ভালো নয়। আবার খারাপও নয়। বেশির ভাগ বুকিং হোমস্টেতে। এমনটা কিন্তু হয় না। আমরা ঠিক করেছি, পাহাড়ে পর্যটকদের পুজো মণ্ডপে ঘোরানোর ব্যবস্থা রাখব। পর্যটকদের সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

ষষ্ঠী থেকে লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত বুকিং মোটামুটি ভালো। কিন্তু তার পরে আবার ফাঁকা। দীপাবলির সময়ে কিছুটা ভিড় থাকবে। অথচ পুজোর বুকিং মানে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে চলে সেই বড়দিন পর্যন্ত। মূলত দুটি কারণে এই অবস্থা বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। দু’টি বিমান সংস্থার বাগডোগরা হয়ে যাতায়াত অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ফলে ফেরাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ার ভয়ের ভিনরাজ্যের পর্যটকেরা উত্তরবঙ্গে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তা ছাড়া দুটি বিমান সংস্থার অনুপস্থিতির জেরে বিমান ভাড়া অসম্ভব বেড়ে গিয়েছে। বাগডোগরা-আমেদাবাদের যাতায়াতের ভাড়া ১৭ হাজার টাকার কাছাকাছি। যেখানে বারো হাজার টাকায় দুবাই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।

এই পরিস্থিতিতে ,কারও গন্তব্য দার্জিলিং, কেউ বা রওনা দেবেন সিকিম-গ্যাংটকের উদ্দেশে। আর পুজোর আগেই রাজ্যের পর্যটকদের জন্য সুখবর।

পর্যটকদের বিপুল চাপ সামলাতে নামানোহচ্ছে শিলিগুড়ি-কলকাতা এসি রকেট বাস৷ ভাড়া ১,২৪৫ টাকা৷ মাত্র ১১ ঘন্টায় সেই বাসে চেপে আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার গন্তব্যে ৷ পাশা পাশি কোচবিহার , আলিপুরদুয়ার এবং শিলিগুড়ি থেকে চলবে আরও পাঁচটি স্পেশাল সুপার নন এসি বাস৷ মাএ ৪৫০ টাকা ভাড়ায় ৷ এমনই উদ্যোগ নিয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগম (NBSTC) ৷ মঙ্গলবারই এসি বাসগুলি চলে এসেছে ডিপোতে ৷ যাত্রী পাওয়া মাত্র সেগুলি চালানো হবে বলে দাবি নিগমের ৷

কলকাতা ও শিলি গুড়ি ডিপো থেকে একটি করে এসি বাস চালানো হবে ৷ হাতে রাখা হচ্ছে আরও একটি ৷ যাত্রী চাহিদা বুঝে সেটিকেও নামানো হবে রাস্তায়৷মাঝ পথে কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, ফরাক্কা, মালদহ, রায়গঞ্জ এবং ইসলামপুরে থামবে এই বাস৷

অন্যদিকে,দুর্গা পুজোর আগেই চালু হচ্ছে বাগডোগরা-গ্যাংটক নয়া হেলিকপ্টার পরিষেবা। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পিএস তামাং এই ঘোষণা করেছেন। নয়া হেলিকপ্টারে যাত্রীদের জন্য ২৭টি আসন বরাদ্দ থাকবে। যাত্রীদের জন্য ২৫টি ও ভিভিআইপিদের জন্য ২টি আসন বরাদ্দ করা হচ্ছে।

আগেই এই রুটে পাঁচ আসনের কপ্টার পরিষেবা চালু করেছিল সিকিম সরকার। ভাড়া নেওয়া হত ৩ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু কপ্টারে মাত্র পাঁচটি আসন থাকার কারণে সমস্যার মুখোমুখি হতেন পর্যটকরা। সেই কারণে বেশি আসনের কপ্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পুজোর আগে এই হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করা হলে উত্তরবঙ্গের পর্যটনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। দার্জিলিং ও ডুয়ার্সের রিসর্ট ও হোটেল শিল্পেও এর প্রভাব পড়তে পারে। সেই কারণে এবার উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি সিকিমেও পুজোর মরশুমে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

ধসের কারণে বিভিন্ন সময়ই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শিলিগুড়ি ও সিকিমের লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই সময় হয়রানির মুখে পড়তে হয় পর্যটকদের। আটকে পড়ার কারণে অনেক সময়ই পর্যটকদের বিমান বা ট্রেন ধরতে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সেক্ষেত্রেও পর্যটকরা জরুরি ভিত্তিতে এই হেলিকপ্টার পরিষেবার সুযোগ নিতে পারবেন।

হেলিকপ্টারে বাগডোগরা থেকে সিকিমের গ্যাংটক অবধি যেতে ৩৫ মিনিটি সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে। তবে এখনও কত টাকা ভাড়া নেওয়া হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সিকিমের পর্যটন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাড়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হেলিকপ্টার সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত হয়ে গেলেই তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে সিকিম পর্যটন দফতর সূত্রে খবর, আগের তুলনায় ভাড়ার অঙ্কে খুব বেশি বদল হবে না।

প্রতি মুহূর্তের আপডেট খবর জানতে এবং ভিডিয়ো দেখতে ফলো করুন দেশের সময় ডিজিটাল চ্যানেল। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here