দেশের সময়ওযেবডেস্কঃ বিধানসভায় বড় জয়ের পর প্রথম বার সাংগঠনিক বৈঠেকর ডাক দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুর দু’টোয় তৃণমূল ভবনে ওই বৈঠকের ডাক দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে আসতে বলা হয়েছে দলের লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী ও পুরসভার চেয়ারম্যান তথা পুর প্রশাসকদের। তবে শুক্রবার দলের তরফে নতুন নির্দেশ দিয়ে জানানো হয়, দূরের জেলার জনপ্রতিনিধিদের আসতে হবে না। নির্বাচনের সময় থেকেই পুরসভাগুলি কার্যত প্রশাসকহীন হয়ে পড়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে দল কী ভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে বৈঠক আলোচনা হতে পারে ওই বৈঠকে। ভোটের সময়ে যাঁরা দল ছেড়েছিলেন, তাঁদের দলে ফেরানো হবে কি না, তা নিয়েও হতে পারে আলোচনা।

ঠিক কী নিয়ে এই বৈঠক তা এখনও পরিষ্কার না হলেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত উঠে আসবে এই বৈঠকে, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে জোর দেওয়া হবে এক ব্যক্তি এক পদে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল নেত্রী চান, যে কোনও ব্যক্তি একটিই পদে থাকুন, এবং সেই দায়িত্ব ভালো ভাবে সামলান।

সূত্রের খবর, যেসব দলত্যাগীরা এখন দলে ফিরতে চাইছেন তাদের নিয়েও সিদ্ধান্ত প্রণয় হতে পারে এই বৈঠকে। তাছাড়া তৃণমূল চায় কলকাতা-সহ ১১০টি পুরসভার নির্বাচন যত শিঘ্র সম্ভব সেরে ফেলতে। তার জন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েও কথা হতে পারে।


এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি নরেন্দ্র মোদির প্রতিস্পর্ধী হিসেবে দা়ঁড় করিয়ে দিয়েছে। এখন পাখির চোখ ২০২৪-এ দিল্লিদখল। আর তা করতে গেলে ২০১৯-এর লোকসভার ফলও পাল্টাতে হবে তৃণমূলকে। সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক দুর্বলতার জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। সূত্রের খবর, এই জোয়ারের মধ্যেও কেন হুগলি, বাঁকুড়ায় আশানুরূপ ফল হল না তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ থাকছে আজ। সাংগঠনিক কাঠামোয় জোর দিতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার কোনও নরম সুরই বরদাস্ত করবেন না। দলে থাকতে হলে কাজ করতে হবে, এমনটাই বুঝিয়ে দেওয়া হতে পারে এই বৈঠকে।

তবে এসবের পরেও একটি ক্লাইম্যাক্স হয়তো অপেক্ষা করেছে এদিনের বৈঠকে। এক যুবনেতার অভিষেক হতে পারে আজ। নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে বসে সামগ্রিক ভাবেই জোর দেওয়া হতে পারে তারুণ্যে।

অর্থাৎ এক কথায় বললে আজ পাঁচটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে এদিনে বৈঠকে যথা-১ এক ব্যক্তি এক পদ নীতি, ২ পুরভোট ৩ দলত্যাগীদের নিয়ে  সিদ্ধান্ত  ৪ লোকসভা ভোটস্ট্র্যাটেজি ৫ যুবনেতার অভিষেক। উল্লেখ্য আজকের বৈঠকে থাকবেন প্রশান্ত কিশোর। তিনি কোনও পর্যবেক্ষণ জানান কিনা, এই নিয়ে জল্পনা থাকবে।

সরকার নিয়ে দিদি যখন এতটা ব্যস্ত তখন সংগঠনের রসায়নে একটা বড় বদলের ইঙ্গিত দিগন্তে উঁকি দিচ্ছে বলে মনে করছিলেন অনেকেই। সম্ভবত সেই বদল বা সংস্কারের সূত্রপাত হতে পারে আজ। ভোটের পর শনিবার তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে প্রথম সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছেন দিদি। সূত্রের মতে, এই বৈঠকের দুটি অধ্যায় থাকবে।

প্রথমে হবে কোর কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকে দল কিছু নীতিগত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তার পর বিকেলে হবে বিধায়ক, সাংসদ, জেলা সভাপতিদের নিয়ে গণ বৈঠক। সেই বৈঠকে কোর কমিটির প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে অনুমোদিত হবে।


এখন কৌতূহলের বিষয় হল, কী প্রস্তাব পাশ হবে কোর কমিটিতে?


তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, এর একটি ক্ষুদ্র ছবি রয়েছে। আরেকটি রয়েছে বৃহৎ ছবি। ক্ষুদ্র ছবি হল, দলে গঠনতন্ত্রে হয়তো কোনও বদল হবে না। তবে হ্যাঁ, মন্ত্রিসভায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অনেককেই সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। মোদ্দা কথা হল, এক ব্যক্তি এক পদ শর্ত কায়েম হতে পারে দলে।

দলের একাধিক সূত্রের মতে, এ ব্যাপারে জোরালো দাবি রয়েছে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ, তিনি মনে করেন, গত জমানায় যে ভাবে একেক জন নেতা বা মন্ত্রীর অনেক দায়িত্ব ছিল, তাতে সংগঠনের বিষয় অবহেলিত হয়েছে। এমনও ছিল যে, কেউ তিনটি দফতরের মন্ত্রী, কোনও উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সেই সঙ্গে দুই জেলার সভাপতি। যেমন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি দমকল, আবাসন ও পরিবেশ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। সেই সঙ্গে কলকাতার মেয়র। হাউজিং বোর্ডের চেয়ারম্যান। আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা জেলার সভাপতি।

তবে অনেকের মতে বৃহৎ ছবিটাই অনেক বেশি তাৎপর্যবহ হয়ে উঠতে পারে। এই ভোটের পর তৃণমূলের মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন অঘোষিত নম্বর টু। এই ভোটে তিনি তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। সংগঠন ও প্রচারের অনেকটাই তিনি সামলেছেন। ফলে আগামী দিনে ক্রমশ তিনি যে সংগঠনে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন তা অনিবার্য। তৃণমূলে প্রবীণতন্ত্রের অবসানও এখন সময়ের অপেক্ষা। কোর কমিটির বৈঠকে যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা সেই প্রক্রিয়ার দিকেই সংগঠনকে নিয়ে যাবে।

সূত্রের মতে, শনিবারের এই বৈঠকে আক্ষরিক রদবদল ঘোষণার সম্ভাবনা কম। হয়তো কেবলই নীতিগত অবস্থানের ব্যাখ্যা করা হবে। তার প্রকৃত বাস্তবায়ন শুরু হবে হয়তো আরও কয়েকদিন পর থেকে।

তৃণমূল ভবনে এলেন মমতা, অভিষেক।চলছে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক। রয়েছেন সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ববি হাকিম, গৌতম দেব, অরূপ বিশ্বাস, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এই বৈঠক শেষ হলে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here