দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হুঁশিয়ারির পরেও ভোটের লড়াইয়ে অনড় থাকায় ৬১ জনকে বহিষ্কার। উত্তর ২৪ পরগনায় একসঙ্গে ৬১ জন বিক্ষুব্ধকে বহিষ্কার করল তৃণমূল। জেলার ২৫ পুরসভায় ৬১ জন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দলকে বহিষ্কার। জেলাজুড়ে টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেন ৬৭ জন। হুঁশিয়ারির পর আগেই ৬ জন ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। চূড়ান্ত হুঁশিয়ারির পরেও অনড় থাকায় ৬১ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত।

প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর পথে নেমেছিলেন বিক্ষুব্ধরা। শাসকদলে টিকিট না পেয়ে সোজা নির্দলে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে দলের উপর মহলের তরফ থেকে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয় তাদের। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় অনেক বিক্ষুব্ধ প্রার্থী কথা শুনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেও বেশিরভাগই তা করেননি। সেই কারণে গোঁজ কাঁটা সরাতে এবার কঠোর তৃণমূল। উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হল ৬১ জনকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বনগাঁর ৩ নং এবং ১৭ নং ওয়ার্ডের এবারের পুর নির্বাচনের কংগ্রেস প্রার্থী মলয় আঢ্য ও ঋতুপর্ণা আঢ্য কে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ তবে এব্যপারে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ক্যামেরার সামনে কোন মন্তব্য করেনি৷

বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, শুধু নির্দলের প্রার্থী নয়,যারা তৃণমূলের কর্মী ছিলেন অথচ অন্যান্য দলের টিকিটে এবারের পুর নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তাঁদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে আমি চাই তাঁরা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন হন এবং আগামীদিনে মূল স্রোতে ফিরে আসুক। বনগাঁর ২২টি আসনে জয়লাভ করবে তৃণমূল৷
১৩ নং ওয়ার্ডের কংগ্রেসপ্রার্থী তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য-র কন্যা ঋতুপর্ণা আঢ্যে-র কথায় , আমি তৃণমূলটা সেভাবে কখনও করিনি তবে বাবা- মায়ের জন্য সমর্থন করতাম, বহিষ্কার প্রসঙ্গে বলেন, এব্যপারে কিছু বলার নেই, আজ কংগ্রেসের সঙ্গে পথ চলছি আগামীদিনেও এই পথেই চলব।

অন্যদিকে ১৪ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী কবিতা বালা, বলেন, লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ব না, এই নির্বাচনে জিতে এই ওয়ার্ডকে উপহার দেব আমার প্রিয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷

একই কথা শোনা গেল ৯ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সুমীত্রা দত্ত রায়- এর মুখে৷ তাঁর কথায়, আমি খুশি দলের সিদ্বান্তের কথা শুনে , তবে আমার সিদ্ধান্তে আমি অনড়, নির্দলেই লড়ব এবং জয়ের পর দিদিকে সেই উপহার তুলে দেব৷

জিতে দলে ফিরব! এমন আশ্বাস দিয়ে ভোটে প্রচার করছেন তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা। তাঁদের উদ্দেশেই এ বার কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার নিজের নাকতলার বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে এক প্রশ্নের উত্তরের পার্থ বলেন, “দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, দলের প্রার্থীদের হারিয়ে জেতার স্বপ্ন দেখে যদি কেউ ভেবে থাকেন দলে ফিরে আসবেন, সেই ভাবনা সফল হবে না। কারণ যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা জিতবেন না। তেমনই ফিরে আসাও হবে না।”


দলত্যাগীদের বার্তা দিতে গিয়ে পার্থ বলেন, “অনেকেই তো বিজেপি-তে গিয়ে আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। তাঁদের সবার জন্য দল দরজা হাট করে খুলে দেয়নি। তাই যাঁরা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই— নির্দল প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি করবেন, আবার ফিরে আসার স্বপ্ন দেখবেন, দুটো এক সঙ্গে হবে না। জেতার স্বপ্নও পুরণ হবে না। দলেও ফেরা যাবে না।”

গত ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনেও বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতানেত্রী টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন তৃণমূল প্রার্থীদের হারিয়ে কাউন্সিলরও হয়েছেন। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে আয়েশা কনিজ, ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে রুবিনা নাজ এবং ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্বাশা নস্কর জিতলেও এখনও তৃণমূলে তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। এই তিন প্রার্থী জয়ের পর তৃণমূলে ফিরবেন বলে আগাম ঘোষণাও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দলে ফেরা যাবে না।

সূত্রের খবর, জেলায় টিকিট না পেয়ে মোট ৬৭ জন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে দলের নির্দেশে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করায় ছাড় পেয়েছেন ছয় জন। বহিষ্কৃত ৬১ জন নির্দল প্রার্থী। জানা গিয়েছে, দল থেকে নির্দল প্রার্থীদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ের মধ্যে প্রার্থীপদ যারা প্রত্যাহার করেছেন তাঁরা এখনও দলে রয়ে গিয়েছেন বাকিদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোবর ডাঙার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুভাস দত্ত। তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় তিনি জানান, তৃণমূল ছেড়ে দিলাম। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে আছি।

এরপর রবিবার তিনি নিজে সংবাদ মাধ্যমকে ডেকে বলেন তিনি প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে নিলেন। যেহেতু অফিসিয়ালি প্রার্থী পদ প্রত্যাহারের সময় সীমা শেষ সেই কারণে তিনি হ্যান্ড বিল বিলি করে ওই ওয়ার্ডের মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি পুরভোটে লড়ছেন না। পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে থাকবেন বলেও জানা গিয়েছে। তবে যে সকল প্রার্থী এখনও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি আগামীতে যদি তাঁরা জেতেনও তাদের দলে নেওয়া হবে না বলে জানা গিয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নির্দেশ মত মধ্যমগ্রামে তৃণমূল কার্যালয়ে মন্ত্রী রথীন ঘোষ এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে এই বহিষ্কারের ঘোষণা করেন। উপস্থিত ছিলেন দমদম ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থ ভৌমিক।

ব্যারাকপুর তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থ ভৌমিক জানান, “প্রায় ৬১ জন নির্দলের হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণে রাজ্যের দুই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও রথীন ঘোষের উপস্থিতিতে আমরা এই ৬১ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করলাম।”

এ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়
বলেন, ”সবাইকে তো টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়। যারা নির্দলে দাঁড়িয়েছেন, তারা যদি পুনরায় দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেন, তবে দল তাঁদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপে শিথিলতা আনবে। কিন্তু, দলের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা নির্দলে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া হবে দল।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here