দেশের সময় : চেয়েছিলেন গরিবের ‘রবিন হুড’ হতে। কিন্তু হয়ে উঠেছিলেন বনগাঁর ‘বেতাজ বাদশা’। তলে তলে বাড়ছিল সাম্রাজ্য। সীমান্ত অঞ্চল ছেড়ে সেই সাম্রাজ্য পৌঁছে গিয়েছিল দুবাইয়ে। কানাঘুঁষো ছিল, একাধিক বেআইনি কাজে জড়িয়ে তিনি। আর সেসবের জন্যই আশ্রয় নেওয়া রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে। দলে থেকেও দলের ক্ষতি করছেন তিনি। উঠেছিল এমনও গুরুতর অভিযোগ। ফলে একসময় দল তাঁর ডানা ছাঁটলেও পুরোপুরি ছেঁটে ফেলেনি। হয়তো ফেলতে পারেনি। তাই আপাতভাবে তৃণমূলে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও সাম্রাজ্য বিস্তারে কোনও খামতি ছিল না তাঁর।

একটি পথ বন্ধ হওয়ার আগেই খুলে গিয়েছে আয়ের অন্য পথ। সেসব গোপন পথে এসেছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। জড়িয়ে পড়লেন ইডির জালে। পড়ল হাতকড়া। গ্রেফতার হলেন বনগাঁর প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য ওরফে ডাকু। আর এটাই এই মুহূর্তে বনগাঁর সবচেয়ে বড় খবর। টক অফ দ্য টাউন। 

এখন প্রশ্ন, ডাকু কি একা? নাকি এরপর বনগাঁর আরও কোনও রথী-মহারথীর নাম জড়াবে? কারও নাম কি বলে দেবেন ডাকু? জল্পনা চরমে। ইডি গ্রেফতার করলেও শঙ্কর আঢ্যকে অবশ্য এখনই দল থেকে ছেঁটে ফেলার পথে হাঁটছে না বনগাঁর তৃণমূল নেতৃত্ব। বরং তাদের মুখে সাবধানবাণী।

তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলছেন, বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে ইডি, সিবিআইকে ব্যবহার করছে। আইন আইনের পথে চলবে। আর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আমাদের দলের জেলা সভাপতি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দলের একজনের সুসম্পর্ক থাকতেই পারে। এর মধ্যে অন্যায় কী আছে।

বিজেপি অবশ্য তোপ দাগতে ছাড়ছে না। তাদের বক্তব্য, গোটা তৃণমূল দলটাই চোরে ভরে গিয়েছে। আগে বড় নেতারা গ্রেফতার হয়েছেন। এখন ছোটরা গ্রেফতার হচ্ছেন। কেউ পার পাবেন না। প্রত্যেককেই জেলে যেতে হবে। এঁরা মানুষের টাকা লুট করেছেন। মানুষ এঁদের ভোট বাক্সে জবাব দেবেন। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের তোপ, তদন্ত যদি সঠিকভাবে এগয়, তাহলে দেখা যাবে কয়েকশো কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তির মালিক শঙ্কর আঢ্য। কলকাতা, দীঘা, দিল্লি, দুবাই সবত্রই বেআইনি সম্পত্তি। আমরা চাই, দুর্নীতির শিকড়ে পৌঁছক ইডি। তাহলে মানুষ জানতে পারবে তৃণমূল নেতাদের আসল চরিত্র।

এদিকে, শুক্রবার সন্দেশখালির ঘটনার পর ওই দিনই গভীর রাতে শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতার করে গাড়িতে তোলার পরই ডাকুর অনুগামীরা কেন্দ্রীয় এজেন্সির গাড়িতে হামলা চালান। ভেঙে দেওয়া হয় গাড়ির কাচ। ইডির গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন মহিলারা। চলে কুকথা। তারপরও ইডির গাড়ি শঙ্কর আঢ্যকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় ইট ছুড়তে থাকেন ডাকুর অনুগামীরা। সেই ইটের ঘায়ে ইডি আধিকারিকদের একটি গাড়ির পিছনের কাচ ভেঙে যায়। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে কিছুদিন আগেই শঙ্কর আঢ্যকে নোটিস পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু সেসময় হাজিরা এড়ান তিনি।

তবে এবার আর নিজেকে আড়াল করতে পারলেন না। বনগাঁর একসময়ের এই দাপুটে তৃণমূল নেতার বাড়ি ও তাঁর শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সাড়ে আট লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে খবর ইডি সূত্রে। শঙ্করের বাড়ি ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির পাশাপাশি বাঘাযতীনে তাঁর চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডি।

মেট্রোপলিটনে শঙ্কর আঢ্যর সহযোগী বাবলু দাসের ফ্ল্যাটেও হানা দেন ইডির আধিকারিকরা। সন্দেশখালির ঘটনার পর কোনওরকম ঝুঁকি নেয়নি বনগাঁ থানার পুলিশ। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও শঙ্কর আঢ্যর বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। শুক্রবার বেলা বারোটা নাগাদ একবারই বাড়ি থেকে বাইরে বের হন বনগাঁর প্রাক্তন চেয়ারম্যান। সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এনিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। ইডি আধিকারিকরা এসেছেন। তাঁরা নিজেদের মতো কাজ করছেন। তদন্তে সহযোগিতা করছি।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরেই রাজনীতিতে পা রাখা শঙ্কর আঢ্যর। ২০০৫ সালে প্রথমবার বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলর হন। পরে চেয়ারম্যান। বালু’র ছত্রছায়াতেই তরতরিয়ে উত্থান হতে থাকে তাঁর। একইসঙ্গে উল্কার গতিতে বাড়তে থাকে সম্পত্তি। বনগাঁয় শঙ্কর আঢ্যর প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। কোন টোটো স্ট্যান্ডে কার টোটো দাঁড়াবে কিংবা কে কোন রুটে অটো চালাবেন, তা যেমন তাঁর অঙ্গুলিহেলন ছাড়া সম্ভব হত না, তেমনই রাস্তার পাশে ফুচকা বা আলুকাবলির স্টল দিতে গেলেও লাগত তাঁর অনুমতি, এমনটাই অভিযোগ। আর এই অনুমতির জন্য শঙ্কর আঢ্যকে মাসোহারা দিতে হত বলে অভিযোগ। 

জোর করে জমি-বাড়ি লিখিয়ে নেওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে শঙ্কর আঢ্য ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে। যদিও এসবই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও অপপ্রচার বলে আগে একাধিকবার জানিয়েছেন শঙ্কর আঢ্য। কিন্তু কীভাবে তাঁর সম্পত্তি হল, তার কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। ডাকুর সাম্রাজ্য বিস্তারের নেপথ্য কাহিনী ছিল গোপন রহস্যে মোড়া। শঙ্কর আঢ্যর একাধিক ব্যবসা রয়েছে।

বনগাঁ ও পেট্রাপোলে তাঁর বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের কাউন্টার। অভিযোগ, একসময় ভারত-বাংলাদেশে ধুর সিন্ডিকেট চালাতেন তিনি। বনগাঁ ও বাগদায় রয়েছে তাঁর সোনার দোকান। শহরে রয়েছে হোটেল। কিন্তু এসবের বাইরেও তাঁর নামে ও বেনামে রয়েছে বিপুল সম্পত্তি।

কখনও মাদক মামলায়, কখনও বা খুনের মামলাতেও নাম জড়িয়েছে তাঁর। আর এসব থেকেই নিজের স্বচ্ছ ইমেজ প্রমাণ করতে তিনি রবিন হুড হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। নিজের এলাকাতেই চোখ ধাঁধানো দুর্গাপুজো করতেন। ধর্মীয় উৎসবে খরচ করতেন লাখ লাখ টাকা। বস্ত্র বিতরণ, মানুষজনকে বসে খাওয়ানো ছিল তার মধ্যে। ইডির অবশ্য দাবি, শঙ্কর আঢ্যের বাড়ি থেকে যেসব নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে তাতে লেনদেন সংক্রান্ত অনেক অনেক সন্দেহজনক তথ্য মিলেছে।

শঙ্করের স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যও বনগাঁ পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন। কিন্তু বকলমে ডাকুই সবটা সামলাতেন। তিনি রীতিমতো বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। যে কোনও বিষয়ে সেই বাহিনীর অনুমোদন ছাড়া বনগাঁয় কোনও কাজ হতো না বলে অভিযোগ। 

এই বাহিনীর অত্যাচারে একসময় বনগাঁরা অনেক ব্যবসায়ীও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। যদিও ডাকু দলে কোণঠাসা হয়ে ওঠার পর সেই বাহিনীর প্রভাব কিছুটা কমেছিল। ২০২১ সালে বনগাঁ উত্তর বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন শঙ্কর। কিন্তু টিকিট পাননি তিনি। এরপরই ভোট প্রচারে নিজেকে গুটিয়ে নেন ডাকু। তীব্র গোষ্ঠীকোন্দলে বনগাঁ মহকুমার সবক’টি আসন হারতে হয় তৃণমূলকে। ডাকুর বিরুদ্ধে সাবোতাজের অভিযোগ ওঠে। এরপরই দলের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।

বনগাঁর শিমূলতলায় বাড়ি শঙ্কর আঢ্যের। তাঁর বাড়ি থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে তাঁর শ্বশুর বিনয় ঘোষের বাড়ি। শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে একযোগে দু’টি বাড়িতেই তল্লাশি শুরু করেন ইডির আধিকারিকরা। তখন বাড়িতে ছিলেন না শঙ্কর আঢ্য। বেলা দশটা নাগাদ তিনি বাড়িতে আসেন। তারপরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যদেরও। স্ত্রী, ছেলে এবং ভাই মলয় আঢ্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডির আধিকারিকরা। একসময় ইডির আধিকারিকরা শঙ্করের শ্বশুর ও শ্যালকের স্ত্রীকে নিয়ে শ্যালকের শ্বশুরবাড়িতেও যান। শঙ্করের ভাই মলয়ের আইসক্রিমের কারখানা রয়েছে চাঁদপাড়ার দোগাছিয়ায়।

মলয়কে নিয়ে সেই কারখানাতেও হানা দেন ইডির আধিকারিকরা। শঙ্করের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের অফিস চালান যিনি, তাঁর বাড়িও শিমূলতলায়।

অন্যদিকে, ডাকুর কলকাতার অফিসের দায়িত্বে রয়েছেন দুই কর্মী। তাঁদের বাড়িতেও হানা দেয় ইডি। সূত্রের খবর, শঙ্করের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ডিরেক্টর পদে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও একাধিক আত্মীয়। আর্থিক দুর্নীতিতে তাঁদের কোনও যোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে ইডি। 

স্বামীর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য বলেছেন, শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন ইডির অফিসাররা। নানারকম কাগজপত্র দেখছিলেন। আমরা তাঁদের সবরকম সহযোগিতা করেছি। হঠাৎ করে রাত বারোটা নাগাদ এক অফিসার এলেন। একটা কাগজ দেখিয়ে বললেন, এটা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিঠি। তাঁর ভিত্তিতেই আমার স্বামীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। জ্যোৎস্না আঢ্যর দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দলের জেলা সভাপতি ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি আসতেন। আমরাও যেতাম। এর জন্য গ্রেফতার কেন, বুঝতে পারছি না।

রেশন দুর্নীতি মামলায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর ইডির নজর পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলির দিকে। রেশন দুর্নীতির টাকা শঙ্কর আঢ্যর বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের মাধ্যমে ঘুরপথে পাচার করা হত কি না, সেটাই খতিয়ে দেখছেন ইডির আধিকারিকরা। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় সংস্থার আড়ালে অন্য কোনও লেনদেন চলত কি না, সেটাও ইডির স্ক্যানারে।  

১৫ কোটি থেকে শুরু, এর পর শেয়ার বাজারের মতোই একশো থেকে হাজার হয়ে রেশন দুর্নীতি মামলায় আর্থিক তছরুপের গ্রাফ পৌঁছে গেল একে বারে ১০ হাজার কোটিতে। উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেপ্তারের পর গত শনিবার আদালতে এমন তথ্যই পেশ করেছে ইডি। আদালতে কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, ধৃত শঙ্কর তাঁর ফরেক্স সংস্থার (বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার সংস্থা) মাধ্যমে মোট ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়েছেন।

যার মধ্যে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক একাই পাঠান ১০ হাজার কোটি টাকা। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, মোট ৯০টি ফরেক্স সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং দুবাইয়ে ২ হাজার কোটি টাকা পাঠানো হয়েছিল বলে প্রমাণও মিলেছে। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ জ্যোতিপ্রিয়র একারই কি না, সে বিষয়েও তদন্ত চলছে।

শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা জ্যোতিপ্রিয়র ঘনিষ্ঠ শঙ্কর ওরফে ‘ডাকু’কে গ্রেপ্তার করে ইডি। এর পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। শনিবার সকালে জোকা ইএসআই হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার পরে তাঁকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টের ইডি বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়।

শঙ্করকে ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে ইডি-র আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী বিচারক শুভেন্দু সাহার উদ্দেশে বলেন, ‘শঙ্কর আঢ্যের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। শঙ্করের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় এজেন্সির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি অবৈধ টাকা ভুয়ো নথিপত্রের মাধ্যমে বিদেশে গিয়েছে। এরমধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী।’

একই সঙ্গে ইডি-র আরও এক আইনজীবী ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়ালে বলেন, ‘তদন্তে আরও কিছু উঠে আসতে পারে। ফলে শঙ্কর আঢ্যকে হেফাজতে নেওয়া জরুরি।’ আদালতে এদিন ইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১০ বছর ধরে এই দুর্নীতি চলছে। এরপরেই বিচারক বিষ্ময় প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, ‘এত টাকার লেনদেন হচ্ছে, আর বলা হচ্ছে এটা নাকি গরিব রাজ্য!’

যদিও দুর্নীতির সঙ্গে মক্কেলের কোনও যোগ নেই বলে পাল্টা দাবি করেন ধৃত শঙ্করের আইনজীবী জাকির হোসেন। বিচারকের কাছে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন,‘দীর্ঘদিনের ব্যবসা শঙ্করের। আরবিআই-এর নিয়ম মেনেই ব্যবসা করেছেন মক্কেল। কোনও খোঁজ নেওয়ার থাকলে তারা নেবে। ইডি মাত্র ৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে বাড়ি থেকে। আর বিদেশি মুদ্রা বিনিময় কোনও অবৈধ কাজ নয়। তাই যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক।’

ইডিও পাল্টা দাবি করে, বিদেশে টাকা পাঠাতে গিয়ে শঙ্করের সংস্থা ভুয়ো নথিপত্র ব্যবহার করত। কখনও টিকিট কেনার নাম করে, কখনও পাসপোর্টের নথি ব্যবহার করে দেখানো হতো, বিভিন্ন ব্যক্তি বিদেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হতো না। অন্য কারও নথি ব্যবহার করে জ্যোতিপ্রিয়র টাকা যেত বিদেশে। তদন্তকারীদের যুক্তি, মিল মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরে প্রথমে তা ডলারে কনভার্ট করা হতো।

এর পর নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যেত। প্রশ্ন উঠছে, সেই টাকা কি সবই জ্যোতিপ্রিয়র? নাকি তার মধ্যে আরও অনেকের টাকা রয়েছে? কারণ, শঙ্কর যে ২০ হাজার কোটি টাকা বাইরে পাঠিয়েছেন তারমধ্যে আপাতত ১০ হাজার কোটির হদিশ মিলেছে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, ‘জ্যোতিপ্রিয় এবং শঙ্করের যোগসাজশের মাধ্যমেই ওই টাকা বিদেশে গিয়েছে। এরমধ্যে দু’হাজার কোটি কোথায় পাঠানো হয়েছে তাও নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা গিয়েছে। বাকি টাকার খোঁজ চলছে।’

তদন্তে উঠে এসেছে, খাতাকলমে ৯০টি কোম্পানি শঙ্কর ওরফে ডাকুর দেখানো থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করতেন দুজনেই। এই কোম্পানিগুলি কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশের সীমান্তে। টাকা লেনদেনের চক্রে শঙ্করের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখছে ইডি। যদিও শঙ্কর সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, তিনি বা তাঁর পরিবার কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। এমনকী তিনি জ্যোতিপ্রিয়কেও চেনেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here