দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার একটি জরুরি মিটিং করছিলেন চন্দননগরের সিপিএমেএর যুবনেতা গোপাল শুক্লা। সে সময়েই হঠাৎ তাঁর ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি অচেনা অ্যাকাউন্ট থেকে কল আসে। রিসিভ করতেই এক মহিলার নগ্ন ছবি ভেসে ওঠে স্ক্রিনে ! সেই স্ক্রিনেরই এক কোণে গোপাল বাবুকেও দেখা যায়, ভিডিও কলে যেমনটা হয়।

স্পষ্টতই সাইবার অপরাধীর কবলে পড়েন গোপাল শুক্লা। ভিডিওকল চলা অবস্থায় স্ক্রিনশট নিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার ফাঁদ পাতে। জানায়, টাকা দিলে এই ছবি ছড়িয়ে বদনাম করা হবে। সাইবার পরিভাষায় একে বলা হয় ‘সেক্সটরশন’ । এসব ক্ষেত্রে সামাজিক বদনাম হওয়ার ভয়ে অনেকেই টাকা দিতে রাজি হয়ে যান। কিন্তু এক্ষেত্রে গোপাল শুক্লা ভয় না পেয়ে সোজা পুলিশে অভিযোগ করেন।

এর পরে প্রথমে চন্দননগর থানায় যান, সেখান থেকে চুঁচুড়ায় চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সোমবার রাতে। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে সচেতনতা প্রচার শুরু করেছে পুলিশ।

তারা জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে অচেনা নম্বরের ভিডিও কল রিসিভ করলেই এই ফাঁদে পরতে পারেন যে কেউ। কয়েক সেকেন্ডের নগ্ন ভিডিও দেখানোর পরেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেল।

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম অথবা টুইটারের মত সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও কলের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকার দাবি করে সাইবার অপারাধী।

গোপাল শুক্লা জানিয়েছেন, সেদিন অচেনা নম্বরে ভিডিও কল রিসিভ করতেই বিপত্তি। পায়েল রেড্ডি নামে এক জনের ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে কল আসে এবং নগ্ন হয়ে ব্ল্যাকমেল করা হয়। বিষয়টা তাঁর জানা ছিল, তাই টাকা দেওয়ার কথা ভাবেনইনি তিনি। তবে সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে যে কেউ এই ফাঁদে পা দিতে পারেন। তাই তড়িঘরি ফেসবুকে ঘটনা জানিয়ে বন্ধুদের সতর্ক করেন তিনি। তার পরেই সাইবার থানায় অভিযোগ জানান।

সম্প্রতি চন্দননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলকে আলাদা থানায় পরিণত করা হয়েছে। সেখানেই ওসি উৎপল সাহার নেতৃত্ব একটি দল অপরাধ দমনের কাজ করছে। প্রায় প্রতিদিনই এই ধরনের অভিযোগ জমা পড়ছে। তাই চন্দননগর পুলিশের পক্ষ থেকে লাগাতার সতর্কতা মূলক প্রচার করা হচ্ছে, সাইবার অপরাধের ফাঁদে পা না দিতে। তাও দেখা যাচ্ছে অনেকেই নিজেদের অজান্তে বা অজ্ঞতার কারণে এই ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন।

সম্প্রতি সাইবার ক্রাইম থানা থেকে ‘সাইবার লাইটস রিস্ক ভিশন’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে মোবাইলের সিম কার্ড কেনা থেকে শুরু করে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলে কী কী ভাবে প্রতারণার শিকার হতে পারেন সাধারণ মানুষ, তা ছোট ছোট ভিডিওর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।

ব্যাঙ্কে প্রতারণা, এটিএম ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে প্রতারণা, মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে প্রতারণা, পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণা এবং সেক্সটরশনের মত প্রতারণার শিকার যাতে না হন সাধারণ মানুষ, সে জন্য সচেতন করা হয়েছে।

বস্তুত, বহু এমন মানুষ আছেন, যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও কীভাবে অপরাধের শিকার হয়ে যাবেন তা বুঝতেই পারেন না। তাঁদের জন্য ইউটিউবে বিনামূল্যে সচেতনতার পাঠ শেখাচ্ছে পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here