দেশের সময় ,কলকাতা : রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য ওরফে ডাকু।

আপাতত ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। অনেকদিন হয়ে গিয়েছে পরিবারের থেকে দূরে। প্রায় প্রতিদিন শঙ্করকে দেখতে তাঁর মেয়ে ঋতুপর্ণা আঢ্য পৌঁছে যাচ্ছেন। তবে চোখের দেখা টুকুই সার। দু-দন্ড বসে যে বাবার সঙ্গে সময় কাটাবেন তা হচ্ছে না। এর মধ্যে শনিবার শঙ্করকে দেখে আবেগ প্রবণ হয়ে গেলেন তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য। আদালত কক্ষের বাইরে হাউহাউ করে কেঁদে লুটিয়ে পড়লেন তিনি।

আজ আদালতে তোলা হয় শঙ্করকে। আদলতকক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় কেঁদে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী। কার্যত স্বামীর পায়ে কাছে বসে পড়েন। বলতে থাকেন শঙ্করের চেহারা খারাপ হয়ে গিয়েছে। জ্যোৎস্নাকে বলতে শোনা যায়, “হ্যাঁ গো তোমার চেহারার কী হাল হয়েছে। তোমাকে তো দেখে চেনা যাচ্ছে না।” এরপর শঙ্কর নিজের স্ত্রীকে তোলেন।তার পর তাঁকে সান্ত্বনা দেন। অন্যদের জানান, স্ত্রীকে যেন সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় সেখান থেকে।

শনিবার কলকাতা নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয় শঙ্করকে। রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছে ইডি। শনিবারই তাঁর ইডি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু আদালতে শঙ্কর জামিনের আবেদন জানাননি। ভাল চিকিৎসা পরিষেবার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

আদালতে শঙ্করের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলের একটি কিডনি নেই। রক্তে শর্করার মাত্রা এবং রক্তচাপও অনেক বেশি। ভাল চিকিৎসা পরিষেবার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তবে ইডি তার বিরোধিতা করে। ইডির আইনজীবী জানিয়েছেন, শঙ্করের অসুস্থতা নতুন নয়। তবে আপাত ভাবে তিনি ‘সুস্থ’। জেলেও তাঁর চিকিৎসা হতে পারে। তাঁর যদি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়, জেল হাসপাতালের চিকিৎসক সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সওয়ালে ইডির আইনজীবী জানান, এসএসকেএম হাসপাতালে অনেকে ভর্তি হয়ে মাসের পর মাস কাটিয়েছেন। কী অসুখ তাঁদের আছে, জানা যায়নি। শঙ্করের এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না তাঁরা।

প্রসঙ্গত গত ৫ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় শঙ্করের বাড়িতে প্রায় ১৭ ঘণ্টা টানা তল্লাশি চালায় ইডি। তার পর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শঙ্করকে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ইডি। পরে তাঁকে আদালতে হাজির করিয়ে ইডি জানায়, ২০ হাজার কোটি টাকার বিদেশে লেনদেন হয়েছে শঙ্করের একাধিক ফরেক্স সংস্থার মাধ্যমে। রেশন ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে সেই টাকার যোগ থাকতে পারে বলে ইডির অনুমান। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ওই ২০ হাজার কোটির মধ্যে অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি জ্যোতিপ্রিয়ের। শঙ্কর অবশ্য সে সব অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছেন।

তবে গ্রেফতারির পর থেকে এখনও অবধি সাংবাদিকরা যখনই শঙ্কর আঢ্যকে প্রশ্ন করেছেন তখনই তাঁর কিছু কিছু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। বারবার নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আজও আদালতে প্রবেশের সময় তিনি বলেছেন, তাঁর কোনও ডিলার নেই। তবে এই দুর্নীতির মূল মাথা কে? সেই প্রশ্ন যদিও এড়িয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি দাবি করেছিলেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই।

বস্তুত, পুরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে রেশন দুর্নীতির খোঁজ পান ইডি আধিকারিকরা। গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। আদালতে ইডি দাবি করে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁর মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিককে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে নাম ছিল এই শঙ্কর আঢ্যর। সেখান থেকেই ‘ডাকু’-র খোঁজ পান তাঁরা। এরপর গ্রেফতার করা হয় বনগাঁর দাপুটে এই তৃণমূল নেতাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here