দেশের সময়, কলকাতা : মঙ্গলবারের মনখারাপের বিকেল পেরিয়ে বুধবারের বিষণ্ণ সকাল। নির্দিষ্ট সময়ে রবীন্দ্রসদনে গানস্যালুট দিয়ে উস্তাদ রাশিদ খানকে শেষযাত্রায় রওনা করিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উপস্থিত অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, দেবাশিস কুমার, রাজ চক্রবর্তী প্রমুখ। আগে ঠিক ছিল, টালিগঞ্জের সমাধিস্থলে সমাধিস্থ করা হবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকপাল রাশিদ খানকে। বুধবারের ঘোষণা, উত্তরপ্রদেশের ভূমিপুত্রকে জন্মভিটেয় সমাধিস্থ করা হবে। এদিন রাতের বিমানে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর দেহ। ওখান থেকে বদাউনে পৌঁছে যাবে শিল্পীর নশ্বর দেহ।  

ছবিগুলি তুলেছেন ধ্রুব হালদার ৷

গান স্যালুটে শেষবিদায় জানানো হল উস্তাদ রশিদ খানকে। বুধবার বেলা একটায় রবীন্দ্রসদন চত্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হল শিল্পীকে।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এই নক্ষত্রের বিদায়ে মঙ্গলবার থেকেই শোকের ছায়া নেমেছে সঙ্গীত জগতে। সংগীতপ্রেমী আপামর জনসাধারণও শোকস্তব্ধ। রবীন্দ্রসদন চত্বরে গান স্যালুটে তাঁকে শেষ বিদায় জানানোর পর তাঁর নশ্বর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের বঁদায়ুতে। সেখানেই পারিবারিক রীতি মেনে কবর দেওয়া হবে তাঁকে।

এদিন সকাল থেকেই রবীন্দ্রসদনে শিল্পীকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। ফুল আর চোখের জলে তাঁকে স্মরণ করলেন বাংলার প্রথিতযশা শিল্পীরাও। মঙ্গলবার পিয়ারলেস হাসপাতালে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন উস্তাদ রশিদ খান।

প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার এই শিল্পী। চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষে আচমকাই ছন্দপতন। সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল। পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। মঙ্গলবার বিকেলে সেখানেই নিভল দীপ। অতীত হয়ে গেলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এই কিংবদন্তী শিল্পী।

পিস ওয়র্ল্ডের পরিবর্তে বাঙুরে নিজের বাড়িতেই মঙ্গলবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিল্পীর দেহ। সেখান থেকে সকাল ৯টায় তাঁকে নিয়ে রবীন্দ্রসদনের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর পরিবার। সকাল থেকে তাঁর বাড়ির সামনে ছিল অগুন্তি অনুরাগীর ভিড়। সেই ভিড় ক্রমশ পৌঁছে যায় রবীন্দ্রসদনে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে সেখানেও। সদন সাজানো তাঁর ছবিতে, ফুলে। নেপথ্যে বেজেছে শিল্পীর গাওয়া শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। পুষ্পস্তবকে, চোখের জলে তাঁকে সম্মান জানান সবাই। একপাশে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। যাঁকে সদ্যপ্রয়াত শিল্পী ‘মা’ সম্বোধন করতেন। তাঁর নির্দেশে তদারকিতে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, বিধায়ক প্রমুখ।

সাদা বেদি সাদা পু্ষ্পস্তবকে সাজানো। বুকে, পায়ের কাছে রক্ত লাল গোলাপের তোড়া। গায়ে জড়ানো কাশ্মীরী শাল। এভাবেই অনন্তশয্যায় শায়িত শিল্পী। রাশিদ খানের স্ত্রী, দুই মেয়ে, ছেলে অঝোরে কাঁদছেন।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ  নাকতলার বাড়ি থেকে শিল্পীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্রসদনে৷ ভক্তদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে শায়িত রাখা হয় দেহ। দুপুর একটায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গান স্যালুটে সম্মান জানানো হয় প্রয়াত শিল্পীকে। প্রথমে ঠিক ছিল টালিগঞ্জের কবরখানায় সমাহিত করা হবে তাঁকে। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদল করা হয়। উত্তরপ্রদেশের বঁদায়ুর ভূমিপুত্র তিনি। সেখানেই সমাহিত করা হবে রশিদ খানকে।

নির্দিষ্ট সময়ে শুরু গানস্যালুট। নির্দিষ্ট সময় মেনে শেষবিদায় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পীর দেহ শীতের মিঠেকড়া রোদ গায়ে মেখে খোলা আকাশের নীচে শায়িত। সেই পর্ব মিটতেই শিল্পীর দেহ নয়ে শবযান রওনা দেয় তাঁর নাকতলার বাড়িতে। সেখানেও নীরবে অপেক্ষমান উস্তাদজির অসংখ্য ভক্ত। তাঁদের থেকে বিদায় নিয়ে রাতে রাজধানীর পথে রওনা হবেন শিল্পীর পরিবার।    

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here