দেশের সময় ,কলকাতা: পাখির চোখ লোকসভা ভোট। তাই দলীয় সংগঠনের হাল ধরে আসরে খোদ সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে দলের জেলাওয়াড়ি বৈঠক। মমতা নিজেই জেলাওয়াড়ি বৈঠকের নেতৃত্ব দেবেন। ‘নবীন-প্রবীণ’ বিতর্কের মধ্যেই ঘাসফুল শিবিরের পর্যালোচনা বৈঠক হচ্ছে।

এ দিনের বৈঠক হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি ও মুর্শিদাবাদের নেতাদের সঙ্গে। তবে তৃণমূল ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকে থাকবেন কি থাকবেন না। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এখনও পর্যন্ত বৈঠকে থাকা নিয়ে অভিষেকের কোনও বার্তা যায়নি বলে সূত্রের খবর।

জানা গিয়েছে, আজ বিকেল চারটে নাগাদ কালীঘাটে অর্থাৎ নিজের বাসভবন থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন সুপ্রিমো। এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য জেলার নেতৃত্বদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি।

তৃণমূল কংগ্রেসের নজরে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার ৫টি লোকসভা আসন। এই ৫ সংসদীয় আসনের মধ্যে তৃণমূলের হাতে রয়েছে ৩টি লোকসভা। বিজেপির হাতে রয়েছে ২টি। এই ৫ লোকসভা আসন রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২০০৭ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক ভাবে লাভবান। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে ভাল ফল করে তৃণমূল। বাম আমলে সেই ফল গোটা রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জেরে তখন রাজনৈতিক মহলের নজরে তৃণমূল কংগ্রেস।

ইতিমধ্যেই এই দুই লোকসভা আসনের বুথ স্তরীয় সংগঠনে একাধিক বদল এসেছে। যদিও নন্দীগ্রামের বুথস্তরীয় বদল নিয়ে নানা অনুযোগ উঠে এসেছে তৃণমূলের অন্দরে৷ কাঁথিতেও বুথ স্তরীয় ক্ষেত্রে একাধিক বদল এসেছে। প্রকাশ্যে না বললেও দলের অন্দরে এই নিয়ে চর্চা হয়েছে। যদিও গত ৮ অগাস্ট নেতাজি ইন্ডোরের বিশেষ অধিবেশন থেকে নানা বুথস্তরীয় বিষয় উঠে আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের বাকিদের অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরুপ বিশ্বাস, সুব্রত বক্সীকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

২০২১-এর বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম আসন হারলেও দুই মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রামের মতো এলাকায় ভাল ফল করে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক বৈঠকে এই সব জেলায় আগে থেকেই পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে লোকসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল শাসক দল।পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের দুই সংসদ সদস্যই তৃণমূল কংগ্রেসের। দু’জনেই অধিকারী পরিবারের সদস্য। যে অধিকারী পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব দীর্ঘতর হয়েছে জোড়াফুল শিবিরের। বিরোধী দলনেতার জেলার এই দুই আসন নিয়ে চর্চা আছে বিজেপির অন্দরেও৷

রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলের প্রেস্টিজ ফাইট। তাই রাজনৈতিক ভাবে এখন থেকেই জমি শক্ত করতে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস।

অন্যদিকে পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। সেখানে লোকসভা ভোটের ফলের হিসাবে ম্যাচ ১-১। মেদিনীপুর আসন বিজেপির দিলীপ ঘোষের হলেও ঘাটাল আসন তৃণমূলের হয়ে ধরে রেখেছেন সাংসদ দেব। জঙ্গলমহলের জেলা হিসাবে পরিচিত মেদিনীপুর লোকসভা আসনের জন্যেও এখন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় জোড়া ফুল। যে কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অজিত মাইতি সকলকে নিয়ে বসে আলোচনার কথা বলেছিলেন। ঝাড়গ্রাম নিয়েও জনপ্রতিনিধিরা যে উদাসীন থাকছেন সেটাও বিশেষ অধিবেশন থেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জঙ্গলমহলের এই আসনের দখল বিজেপি নিয়েছিল। যদিও বিধানসভায় বদলে যায় সেই ফলাফল।

তবে শুধু বৈঠকই নয়। নতুন বছরের শুরুতেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১৯ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ থাকতে পারেন মমতা। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কোচবিহারে সভা করার রয়েছে তাঁর। প্রশাসনিক সভার পাশাপাশি কর্মি সভাও করতে পারেন তিনি।

অপর দিকে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ডায়মন্ড হারবারে রিভিউ বৈঠক করবেন তৃণমূল সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বেঠকে থাকবেন জেলাশাসক,বিডিও, পঞ্চায়েত প্রধান থেকে পুর প্রধানরাও। আমতলা নব নির্মিত অডিটোরিয়ামে হবে এই রিভিউ বৈঠক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here