দেশের সময় ,কলকাতা দেশজুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কবে থেকে লাগু হবে, তা কেউ জানেন না। তবে শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফের একবার ঘোষণা করেন, লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ কার্যকর হবে। এটা সকলের জানা, এই ইস্যু নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায় কতটা স্পর্শকাতর।

ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির অন্যতম প্রধান মুখ তথা বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ৭ দিনের মধ্যে সিএএ কার্যকর হবে বলেছিলেন। কিন্তু অল্পদিনেই তিনি তাঁর মন্তব্য থেকে সরে আসেন। আর মমতা বালা ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ঠিক কেমন তা কারোর অজানা নয়। এই আবহে মমতা বালা ঠাকুরকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্যসভা ভোটের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। চারজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই চারজন হলেন মমতা বালা ঠাকুর , সুস্মিতা দেব, নাদিমুল হক, এবং সাগরিকা ঘোষ। 

মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপির থেকে তৃণমূলের ঝুলিতে আনতে মরিয়া প্রচেষ্টা করছে শাসক শিবির। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন বা তার পরবর্তী কয়েকটি নির্বাচন দেখলে বোঝা যাবে মতুয়ারা বিজেপির দিকেই ঝুঁকে পড়েছিল। বনগাঁ, রানাঘাটের মতো জায়গায় তৃণমূল কাজের কাজ করতেই পারেনি। তবে বিজেপির কাজে সন্তুষ্ট না হয়ে ২০২১ সালের পর মতুয়ারা গেরুয়া বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার প্রবণতা দেখায়। এই লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের ভোট সুরক্ষিত করতেই তৎপর তৃণমূল। মমতা বালাকে রাজ্যসভার প্রার্থী করে সেই লক্ষ্যেই এগোতে চাইছে শাসক শিবির বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। 

আবীররঞ্জন বিশ্বাস, শান্তনু সেন আর শুভাশিস চক্রবর্তী যে রাজ্যসভার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ যাবেন এবং নাদিমুল হক ফের প্রার্থী হতে পারেন তা আগেই আন্দাজ করা গেছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হল। 

রাজ্যসভার পাঁচটি আসন শূন্য হচ্ছে আগামী এপ্রিল মাসে। বিধানসভায় বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে ওই পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিই পাওয়ার কথা তৃণমূলের। রবিবার দুপুরে দেখা গেল তৃণমূলের যাঁরা প্রার্থী হচ্ছেন তাঁদের মধ্যে নাদিমুল হক, সুস্মিতা দেব পুরনো মুখ। অন্য প্রার্থীরা হলেন প্রাক্তন সাংসদ মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর এবং সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ।

পুরনোদের মধ্যে এবার রাজ্যসভার জন্য মনোনয়ন পাননি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা (সদর) তৃণমূলের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী, আবীররঞ্জন বিশ্বাস এবং শান্তনু সেন। 

যে নামগুলি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে নাম থাকা সুস্মিতা আগে তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। তবে গত বছর তাঁর আসনে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর সুস্মিতাকে রাজ্যসভায় পাঠান হয়নি। অন্যদিকে সাগরিকা ঘোষ জাতীয় সংবাদমাধ্যমে পরিচিত নাম। এমন একজনকে রাজ্যসভার জন্য মনোনীত করে চমক দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মমতার ক্ষমতায় আসার নেপথ্যে মতুয়া ফ্যাক্টর বিস্তর কাজ করেছিল। কিন্তু, ধীরে ধীরে সেখানে গেরুয়া আধিপত্য বাড়তে থাকে। বর্তমানে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সার্বিক প্রেক্ষাপটে মমতাবালা ঠাকুরকে প্রার্থী করা তৃণমূলের অন্যতম ‘মাস্ট্রারস্ট্রোক’ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মমতাবালা ঠাকুরের নাম ঘোষণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ফের মমতা বালাকে টিকিট দেওয়ার এই পদক্ষেপ তৃণমূলের মতুয়া ভোট ঘরে ফেরানোর চেষ্টা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

উল্লেখ্য, এবার রাজ্যসভায় চারটি আসনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। সুস্মিতা দেব তৃণমূলে রাজ্যসভা সাংসদ ছিলেন। ২০২১ সালে তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন। মানস ভ্যুঁইয়া রাজ্যসভার আসন ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়নি। কিন্তু, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ফের একবার তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

অন্যদিকে,সাগরিকা ঘোষ একজন বিখ্যাত সাংবাদিক। তিনি রাজদীপ সরদেশাই স্ত্রী এবং বিখ্যাত লেখিকাও। তাঁকে দাঁড় করানো অনেকটাই সারপ্রাইজ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। অন্যদিকে, নাদিমুল হকও বাংলার সাংবাদিকতা দুনিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম। তিনি একটি সংবাদ পত্রের সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন।

উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের আগেই ১৫ রাজ্যের মোট ৫৬টি রাজ্যসভা আসনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে নির্বাচন। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫৬টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলার পাঁচ আসন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিয়েও আরও একাধিক রাজ্যগুলির রাজ্যসভা নির্বাচন হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে আছে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, রাজস্থান,উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, মধ্যপ্রদেশ,ওডিশা, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here