দেশের সময় কলকাতা: রাত পোহালেই শুরু পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনা। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গণনা, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই চলবে কাউন্টিং পঞ্চায়েত ভোটের গণনা শুরু হবে। আগামিকাল শুরু হয়ে, বুধবার পর্যন্ত গণনা চলতে পারে বলে জানা যাচ্ছে ৷

তার আগে সব জেলাশাসক ও জেলা পঞ্চায়েত অফিসারের কাছে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন পাঠিয়ে দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ তাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, গণনা কেন্দ্রের মধ্যে কোনও পুলিশ কর্মী ঢুকতে পারবে না। একমাত্র রিটার্নিং অফিসার যদি মনে করেন যে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যার জন্য পুলিশ দরকার, তবই সশস্ত্র পুলিশ গণনা কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকতে পারবেন।

রাজ্যে মোট ৩৩৯টি কেন্দ্র গণনা শুরু হবে সকাল ৮টায়। প্রথমে গ্রাম পঞ্চায়েত, তারপর পঞ্চায়েত সমিতি এবং সবশেষে জেলা পরিষদের গণনা হবে। গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফল ঘোষণা হবে টেবিলে। বকি দু’টো ঘোষণা করবেন বিডিও। প্রত্যেক স্তরে ২ রাউন্ড করে গণনা হবে। কিছু ক্ষেত্রে বাড়তে পারে। অর্থাৎ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ মিলিয়ে মোট ৬ রাউন্ড গণনা হবে। কন্টিনিউয়াল প্রসেসে চলবে গণনা।

কমিশন জানিয়েছে, স্ট্রং রুম থেকে ব্যালট বাক্স গণনা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য পারলে একটি করিডর বানাতে হবে। যাতে বিনা বাধায় মসৃণ ভাবে ব্যালট বাক্স গণনা কেন্দ্রে আনা যায়। ওই করিডরে কোনও বাইরের লোক বা মিডিয়াকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।

তা ছাড়া প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে মিডিয়ার জন্য লক্ষ্ণণরেখা টেনে দেওয়া হবে। গণনা কেন্দ্রের চারপাশে নিরাপত্তার তিনটি বলয় থাকবে। প্রথম বলয় পেরিয়ে মিডিয়া কর্মীরা দ্বিতীয় বলয়ের কাছে যেতে পারবেন, কিন্তু কতদূর পর্যন্ত তাঁরা যেতে পারবেন তা রিটার্নিং অফিসার বলে দেবেন। রিটার্নিং অফিসার চাইলে গণনা কেন্দ্রের মধ্যে একবার মিডিয়া কর্মীদের ডেকে ফটো তুলতে দিতে পারেন। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই ব্যালটে দেওয়া ছাপ্পা বা কাউন্টিংয়ের পরিসংখ্যানের ছবি তোলা যাবে না।

গণনা কেন্দ্রের মধ্যে মোবাইল, ট্যাব বা আই-প্যাড নিয়েও ঢোকা যাবে না। গণনা কেন্দ্রের মধ্যে কমিউনিকেশন ও মিডিয়া রুম থাকবে। কাউকে ফোন করতে গেলে সেখানে গিয়েই করতে হবে।

গণনার জন্য বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। থাকছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীও। এদিন দুপুরে সমস্ত জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা পঞ্চায়েত অফিসারদের রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে টেক্সট মেসেজ করে বলা হয়েছে, কোন গণনা কেন্দ্রে কীভাবে কত বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে তা বুধবার সকালের মধ্যে জানাতে হবে। কারণ, বুধবার এ ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্ট রিপোর্ট চাইতে পারে।

পঞ্চায়েত ভোটের দিন বহু বুথে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। কমিশন এদিন স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, গণনাকেন্দ্রে সিসিটিভই ক্যামেরা বাধ্যতামূলক ভাবে থাকতে হবে। ওই ক্যামেরার ফুটেজ সুরক্ষিত রাখতে হবে।

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকে ভোটেন দিন, অর্থাৎ গত শনিবার পর্যন্ত হিংসার অভিযোগ উঠেছে। ভোট পরবর্তী সময়ে অনেক জায়গাতেই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়ন পর্ব থেকে এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার বলি ৪১ জন। ভোটের দিনের সংঘর্ষের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। ভোটের দিন রাজ্যের সব বুথে পৌঁছতে পারেনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে গণনার দিন ৩৩৯টি কেন্দ্রে আঁটসাঁট নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। প্রত্যেক গণনাকেন্দ্রে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় হবে ভোট গণনা।

মঙ্গলবারের মধ্যেই গণনা শেষ হওয়ার কথা। যদি তা না হয়, তবে গণনার কাজ টানা চলবে। গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে ফল ঘোষণা করবেন কাউন্টিং অফিসার। বাকি পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে ফল ঘোষণা করবেন বিডিও। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্তরে দু’রাউন্ড করে গণনা হবে। কোথাও কোথাও তিন রাউন্ড। প্রতি গণনা কেন্দ্রের জন্য এক জন করে পর্যবেক্ষক থাকবেন। দার্জিলিং, কালিম্পং ছাড়া প্রতি জেলায় থাকবেন এক জন করে বিশেষ পর্যবেক্ষক। ৩৩৯টি ভোটগণনা কেন্দ্রে স্ট্রংরুমের সংখ্যা ৭৬৭। গণনাকক্ষের সংখ্যা ৩,৫৯৪। ৩০,৩৯৬টি টেবিলে চলবে গণনা।

ভোট নিয়ে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। ব্যালটবাক্স লুটের অভিযোগও উঠেছে। সে কারণে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ভোট গণনার সময় ব্যালট পেপারের বৈধতা যাচাই করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নির্দেশ, ব্যালট পেপারে প্রিসাইডিং অফিসারের সই ছাড়া এবং তার পিছনে রাবার স্ট্যাম্প ছাড়া সেগুলি গণ্য করা হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here