দেশের সময় , কলকাতা : সবুজ-মেরুন মঞ্চে তিনি যেন ফুটবল প্রেমী। মোহনবাগান যে ভারতসেরা হয়েছে সে খবর শনিবারই জানতেন। তখনই জানিয়েছিলেন ফুটবলারদের সংবর্ধিত করতে সোমবার দুপুরে মোহনবাগান তাঁবুতে আসবেন তিনি।

সেই মতো মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির হলেন। আইএসএলের ট্রফি হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন। আর মন জয় করে নিলেন বাগান সমর্থকদের। বাংলার কোনও টিম সর্বভারতীয় স্তরে ভালো পারফর্ম করলে মমতা বরাবর সম্মান জানিয়েছেন। কেকেআর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান করেছিলেন। মোহনবাগানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে কেন!

মোহনবাগান কেন ব্রাজিলের সঙ্গে খেলবে না? কেন খেলবে না ইতালির সঙ্গে? মোহনবাগান কেন পোল্যান্ডের সঙ্গে খেলবে না? মোহনবাগানের বিশ্বকাপ চাই। সোমবার সবুজ মেরুন তাঁবুতে হাজির থেকে স্বপ্ন দেখালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুধু তাই নয়, সোমবার ক্লাব তাঁবুতে মমতা আচমকা স্লোগান তুলেছেন, ‘‘আমার বিশ্বকাপ চাই। আমার বিশ্বকাপ চাই। সারা বিশ্বে মোহনবাগানকে সেরা দেখতে চাই।’’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, সারা বিশ্বে বাংলার ফুটবলকে আমি সেরা দেখতে চাই। এরজন্য যা দরকার আমাদের করতে হবে।

মোহনবাগান নামের আগে এটিকে থাক, তিনি নিজেও চাননি। জানা ছিল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা ছিলেন মোহনবাগানঅন্ত প্রাণ। ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ খেলা থাকলে কালীঘাটে পুজো দিতেন। মোহনবাগানের বিজয় উৎসবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কখনও ক্লাবের ‘অতিবড় সমর্থক’, কখনও আবার ফিরে গেলেন অতীতে। দেখে মনে হচ্ছিল যেন সমর্থকদের মতো তিনি নিজেও মোহনবাগান ভারতসেরা হওয়ায় উচ্ছ্বসিত, তৃপ্ত। আবার সেই তিনি ইস্টবেঙ্গলের প্রতি স্পর্শকাতর। আসলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো, তাই সাফল্যে যেমন আছেন, তেমনই ব্যর্থ হলে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য আছেন। ভিন্ন রঙে মমতাই ধরা দিলেন বাগানের উৎসবের মঞ্চে। 

মমতা বললেন, ‘আমি কোনও একটা টিমের সাপোর্টার নই। আমি সব দলের সমর্থক।’ তবে, মোহনবাগান এবং ফুটবলের সঙ্গে তাঁর যোগ যে ছেলেবেলা থেকে, তাও বলতে ভুললেন না। মমতা বলেন, ‘আমার বাবা স্বাধীনতার আগে কালীঘাট মিলন সঙ্ঘের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাই ফুটবলের সঙ্গে আমার পরিবার জড়িয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। মোহনবাগানের খেলা হলে কালী বাড়িতে পুজো দিতে যেতেন আমার মা। যে দিন আইএসএল ফাইনাল ছিল, সেই দিন ভোরবেলা স্বপ্ন দেখি, মোহনবাগান জিতে গিয়েছে। খেলা শুরুর আগেই যে স্বপ্নটা দেখেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে।’ বলার সময় যেন তৃপ্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে।

রিমুভ এটিকে আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে চলছে মোহনবাগানে। এ খবর যে মমতা রাখেন, তা পরিষ্কার করে দিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটিকে মোহনবাগান নয়, এখন ক্লাবের পরিচয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস। আমি অরূপকে বলেছিলাম, এটিকে শুনতে ভালো লাগে না।’ মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বলার পরই ক্লাব তাঁবুতে হাজির অগণিত সমর্থক হাততালি দিয়ে ওঠেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘মোহনবাগান আমাদের পথ দেখিয়েছে। আগামী দিনে চাইব, মোহনবাগান বিশ্বের সেরা ক্লাব হোক। ব্রাজিল, পোল্যান্ড, ইতালির মতো দেশের ক্লাবগুলোর সঙ্গে খেলতে দেখতে চাই মোহনবাগানকে।’

ছবিগুলিতুলেছেন ধ্রুব হালদার ৷

এদিন সরকারের পক্ষ থেকে ফুটবলারদের হাতে মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্লাবকে দেওয়া হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীকে ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্ত জানিয়েছেন, আগে যে রাজ্য সরকার ক্লাবকে আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন, সেই থেকে কী করা হয়েছে। আধুনিকমানের ক্লাব তাঁবু, মাঠ সংস্কার ছাড়াও ভিআইপি বক্স, আধুনিক প্রেস বক্স করা হয়েছে। ক্লাব সচিব ভবিষ্যতেও মুখ্যমন্ত্রীকে দলের পাশে থাকার অনুরোধ করেছেন।  

মোহনবাগানের সাফল্যের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইস্টবেঙ্গলকেও শরিক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিছুটা সহানুভূতির সুরে বলেন, ‘ইস্টবেঙ্গল ভালো দল বানাতে পারেনি। যে কারণে ওরা সাফল্য পাচ্ছে না। তবে আর্থিক কারণেই ইস্টবেঙ্গল ভালো দল গড়তে পারেনি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here