দেশের সময় , ঠাকুরনগর: জনস্রোতে ভাসছে ঠাকুরনগর। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে শুরু হয়েছে মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১২ তম জন্মতিথি এবং মতুয়া ধর্ম মহামেলা।

ঠাকুরনগর মতুয়া ধামে ছবিগুলি তুলেছেন দেবানন্দ পাইন৷

ঠাকুরনগর বারুণি মেলা উপলক্ষে ভক্ত সমাগম। লক্ষ লক্ষ মতুয়াদের সমাগম হয় ৷

সেই উপলক্ষে কয়েক লক্ষ মতুয়া সম্প্রদায়ের ভক্ত পুণ্য লাভের জন্য কামনা সাগরে স্নান করেছেন। সময় যত গড়িয়েছে ততই মতুয়া সম্প্রদায়ের ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে। তিথি মেনে রবিবার সকাল ৫টা বেজে ৫৭ মিনিট থেকে স্নানের পুণ্য যোগ শুরু হয়।

পুলিশ-প্রশাসনের হিসেব অনুয়ায়ী, রবিবার মতুয়া ধর্ম মহামেলা উপলক্ষে পুণ্যস্নান সারতে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন, প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ। যদিও অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দাবি, রবিবার দুপুর পর্যন্ত ঠাকুরবাড়িতে এসেছেন প্রায় ২৫ লক্ষ পুণ্যার্থী। একই কথা জানালেন মতুয়াভক্ত প্রসেনজিৎ বিশ্বাস ৷ তাঁর কথায় এদিনই ২৫ লক্ষ্যেরও বেশি ভক্ত পুণ্যস্নান করেছেন ‘কামনা সাগরে’ ৷

রবিবার সন্ধ্যাতেও দেখা গেল, ঠাকুরবাড়িতে যাওয়ার ঢল অব্যাহত মতুয়া ভক্তদের। মতুয়া মহাসঙ্ঘের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ বার মেলায় প্রায় ৪৫-৫০ লক্ষ মানুষ আসবেন। মেলা চলবে ২৪ মার্চ পর্যন্ত।

রবিবার বিকেলে এসে পৌঁছনো কয়েকজন মতুয়া ভক্ত জানালেন, পুণ্যতিথিতে স্নান করতে পারলে ভাল লাগাত। তবে আসতে দেরি হয়ে গেল। এ দিন ‘কামনা সাগরে’ স্নান করতে ভক্তদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে ভিড়ের কারণে।

গোপাল গোঁসাই নামে এক ভক্তের কথায়, ‘‘আমরা এ বার ১০০ জনের দল নিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে মেলায় এসেছি।

মেলা ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যও ভাল হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন অনেকে। এক দোকানির কথায়, ‘‘এ বার ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচশোটি ডাঙ্কা এনেছিলাম। সবই প্রায় বিক্রির মুখে। বছরের এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। সারা বছরের মূল আয় এখান থেকেই করি। করোনার সময়কালে মেলা না হওয়ায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম কিন্তু এবছর বেশ লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি’’

শনিবার মেলায় যোগ দিতে মতুয়া ধামে আসেন কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল। তাঁকে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে মরিয়া সব রাজনৈতিক দলই। এই আবহে মতুয়া মেলার আয়োজন ঘিরেও রাজনীতির আঁচ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ট্যুইট করেন, মতুয়া মহামেলা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। তা মতুয়া সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। আমার অনুরোধ, সবাই এই মেলা দেখুন, দয়া ও সেবার পথ দেখানোর জন্য ঠাকুর শ্রীশ্রী হরিচাঁদজীর প্রতি মানবজাতি চিরঋণী হয়ে থাকবে।

আর এই ট্যুইটকে সামনে রেখেই তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন ঠাকুরবাড়ির সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘এই রাজ্যের অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রী যিনি হরি গুরুচাঁদকে অসম্মান করে আনন্দে আটখানা হয়ে নেচে বেড়াচ্ছে ৷ রাজ্য সরকারের কোনও প্রয়োজন আমাদের পড়বে না’

মেলার আয়োজন নিয়ে তৃণমূলকে খোঁচা দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। কেন্দ্রকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর।

ঠাকুরবাড়ির আরেক সদস্য তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর পাল্টা নিশানা করেছেন কেন্দ্রকে। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ও সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মতুয়া ধর্মের জন্য যা ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়, ছুটি, জলসত্র করেছি রাজ্য সরকারের অর্থ দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী এসে মেডিক্যাল কলেজের ঘোষণা করতে পারত কিন্তু সেটা করেনি।’ একুশের বিধানসভা ভোটের ফলে দেখা যায়, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় মতুয়া ভোটের সিংহভাগই গিয়েছে বিজেপির দিকে।

হিসেব উল্টে যায় পুরসভা ভোটে। মতুয়া অধ্যুষিত বিভিন্ন জায়গায় হারানো জমি অনেকটাই ফেরাতে সক্ষম হয় তৃণমূল। এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে মতুয়া মেলা ঘিরে ফের উত্তপ্ত ঠাকুরবাড়ির ময়দান। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here