দেশের সময়: অশান্ত মণিপুর। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণই নেই। বিচ্ছিন্নতাবাদী কুকি জঙ্গিদের গুলিতে এবার প্রাণ হারালেন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা এক জওয়ান। ঘটনাটি ঘটেছে মণিপুরের সেরু এলাকায়। জঙ্গি হামলায় গুরুতর জখম অসম রাইফেলসের আরও দুই জওয়ান। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মণিপুরের কাকচিং জেলার সুগনুতে সেরু প্র্যাকটিক্যাল হাইস্কুলে মোতায়েন ছিলেন জওয়ানরা। সেখানেই মঙ্গলবার ভোরে ধেয়ে আসে জঙ্গিদের গুলি। আচমকা এভাবে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে, ভাবতে পারেননি জওয়ানরা। তবে এই অতর্কিত হামলার ধাক্কা সামলে জওয়ানরাও পাল্টা জবাব দেয়। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দু’পক্ষের মধ্যে চলতে থাকে গুলি বিনিময়। এতেই গুরুতর জখম হন বিএসএফ জওয়ান রঞ্জিত যাদব। তাঁর শরীরে গুলি লাগে। তাঁকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় কাকচিংয়ের জীবন হাসপাতালে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার ভোর চারটে থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত ডিউটি ছিল রঞ্জিতের। পশ্চিমবঙ্গের ভাটপাড়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুগিয়াপাড়ার বাসিন্দা রঞ্জিনের কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছিয়েছে মঙ্গলবার রাতে। দেহ আসতেই গোটা এলাকার মানুষ জড়ো হন তাঁর বাড়িতে। শহিদ ওই জওয়ানের স্ত্রী, সন্তান ছাড়াও রয়েছেন বাবা-মা ও ভাই-বোন। বাড়িতে রোজগেরে বলতে তিনিই ছিলেন একমাত্র। কয়েক বছর আগে বিএসএফে চাকরি পেয়েছিলেন। তারপর পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরেছিল।

স্ত্রী কৌশল্যা জানিয়েছেন, স্বামীর সঙ্গে সোমবার রাত আটটা নাগাদ শেষবার কথা হয়েছিল। বাব-মায়ের শরীর কেমন আছে, তার খোঁজ নিচ্ছিল। বলেছিল, আমার এখানে গুলিগোলা চলছে। বেশিক্ষণ কথা বলতে পারব না। কয়েক মিনিট কথা বলার পরই ফোন রেখে দিয়েছিল। আমাকে সাবধানে থাকতে বলেছিল। বলেছিল, ছেলেকে আর পরিবারের যেন আমি খেয়াল রাখি। কিন্তু ওটাই যে শেষ কথা হবে ভাবতে পারিনি। মঙ্গলবার সকালে ডিউটিতে যোগ দেওয়ার পরই জঙ্গি হামলা হয়। আমার সব শেষ হয়ে গেল। এখন কী নিয়ে থাকব, জানি না।

এদিকে, মণিপুরে জঙ্গি হামলায় জখম অন্য দুই জওয়ানকে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় মন্ত্রীপুখরিতে। সেখানেই তাঁদের চিকিৎসা চলছে। এদিকে, জঙ্গি হামলার পরই শুরু হয়েছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একে সিরিজের দু’টি রাইফেল। ৫১ মিমি একটি মর্টার, দু’টি কার্বাইন সহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। ইম্ফল ওয়েস্ট জেলাতেও জঙ্গিদের সঙ্গে সেনা সংঘর্ষের খবর মিলেছে। পরিস্থিতি এতটাই অশান্ত যে, মণিপুরে ইন্টারনেট বন্ধের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আপাতত ১০ জুন পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here