দেশের সময়: বিপত্তি থেমে নেই। কার্যত ‘শনির দশা’ চলছে ভারতীয় রেলে। এবার বেলাইন হল মালগাড়ি। মঙ্গলবার রাতে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর শাহপুরা এলাকায় ভিতোনিতে একটি মালগাড়ির দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়। যদিও রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বড়সড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। ওই লাইনে ট্রেন পরিষেবাও স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে, মঙ্গলবারই জোড়া বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান ভারতীয় রেলের যাত্রীরা। সকালে শিয়ালদহ-আজমের এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় হঠাৎই আগুনের ফুলকি দেখা যায়। আতঙ্কি যাত্রীরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন। ট্রেনটি তখন উত্তর-মধ্য রেলের প্রয়াগরাজ ডিভিশনের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। তড়িঘড়ি ট্রেনটিকে কৌশাম্বি জেলার ভরওয়াড়ি স্টেশনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। দেখা হয়, ঠিক কোথা থেকে ওই আগুনের ফুলকি ছড়াচ্ছে। প্রাথমিকভাবে রেলের তরফে জানানো হয়েছে, শর্টসার্কিট থেকেই ওই ঘটনা ঘটে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর ফের ট্রেনটি ছাড়ে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিপত্তি দেখা দেয় সেকেন্দ্রাবাদ-আগরতলা এক্সপ্রেসে। ওই ট্রেনের বি-৫ এসি কোচে আচমকা ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান যাত্রীরা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বিষয়টি রেলকর্মীদের নজরে আনেন। ওড়িশার ব্রহ্মপুর স্টেশনে দাঁড় করানো হয় ট্রেনটিকে। উদ্বিগ্ন যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। বি-৫ কোচটি বদলানোর দাবিতে স্টেশনে বিক্ষোভও দেখান যাত্রীরা। এনিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়।

রেলের তরফে জানানো হয়, কোচের শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ইউনিট থেকে ওই ধোঁয়া বের হচ্ছিল। কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। রেলকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেন। যাত্রী সুরক্ষা খতিয়ে দেখার পরই ট্রেনটি ফের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। এদিকে, বালেশ্বরে ওই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পরদিনই মহারাষ্ট্রে বেলাইন হয় একটি টয়ট্রেন। রেল সূত্রে খবর, মাথেরান হিল স্টেশন থেকে নেরালের দিকে যাওয়ার সময় টয়ট্রেনটির ইঞ্জিনের একটি চাকা লাইন থেকে নেমে যায়। প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায় ট্রেনটি। যাত্রীরা হতচকিত হয়ে পড়েন। যদিও কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বিপত্তির জেরে বাতিল হয় ওই দিনের ট্রেনযাত্রা। টিকিটের ভাড়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। ভারতীয় রেলে এত বিপত্তি কেন? উঠছে এই প্রশ্ন।


রেল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরজন্য অন্যতম দায়ী কর্মী সঙ্কট। ভারতে ৬৭ হাজার কিমির বেশি রেলপথ। সাত হাজারের বেশি স্টেশন। গত পাঁচ বছরে ৮১৩টি নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। কিন্তু রেলে স্থায়ী কর্মীর শূন্যপদ বর্তমানে ৩ লক্ষ ১১ হাজারের বেশি। কর্মীর অভাবে রক্ষণাবেক্ষণে খামতি দেখা দিয়েছে। আর এরই জেরে বারবার বিপত্তির মুখে পড়ছে ভারতীয় রেল।


এদিকে ভয়াবহ স্মৃতিকে সঙ্গী করেই আজ, বুধবার থেকে ফের যাত্রা শুরু করছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এদিন দুপুর ৩টে ২০ মিনিটে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়বে চেন্নাইগামী করমণ্ডল। বিকল্প রুট না থাকায় বাহানাগা বাজার স্টেশনের উপর দিয়েই যাবে ট্রেনটি। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত লাইন সরিয়ে নতুন করে রেললাইন পাতা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলের উপর দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় তার গতি অনেকটাই কম থাকবে।


আজ, বুধবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে। হাজির থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারই তিনি ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম হয়ে ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা বাংলার বাসিন্দাদের দেখতে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কটক হাসপাতালে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দেন, এখন রাজনীতি করার সময় নয়। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই কর্তব্য। তিনি মনে করিয়ে দেন, মৃতদেহ নিয়ে যেন কোনওভাবেই রাজনীতি না করা হয়। বলেন, এতগুলো মানুষের প্রাণ গেল কীভাবে, সেটা যেন সামনে আসে। কোনও কিছু যেন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা না হয়।

দুর্ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে তাঁদের চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারা কারা? এখনও জানা যায়নি। পাশাপাশি রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের পাশাপাশি দুর্ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছি সিবিআইকে। তদন্তে নেমেই তারা অন্তর্ঘাত তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এমনকী করমণ্ডল দুর্ঘটনার পিছনে জঙ্গিযোগের সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছে সিবিআই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here