হিয়া রায়, দেশের সময়

রায়গঞ্জ: কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া, ইসলামপুরে পদযাত্রা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুলের পদযাত্রা যে পথে এগিয়েছিল, সেই পথ ধরেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে হাঁটবেন তৃণমূল নেত্রী।

প্রসঙ্গত, সোমবার বিকালে শিলিগুড়ির সভা সেরেই মমতা জানান, কর্মসূচির পরিবর্তন হচ্ছে। শুধু রায়গঞ্জ ও বালুরঘাটের সভা নয়। তার পাশাপাশি চোপড়া, ইসলামপুর ও রায়গঞ্জে পদযাত্রাতেও অংশ নেবেন তিনি। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে দুপাশে ভিড় ছিল উপচে পড়ার মতো। প্রচুর মানুষ ফোন হাতে ছুটে আসেন মুখ্যমন্ত্রীর ছবি তোলার জন্য। আজ রায়গঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমঞ্চে বিদ্রোহী বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরী। সিনিয়র লিডার বলে উল্লেখ করলেন।

পরে রায়গঞ্জের সভা থেকে মমতা বলেন, “বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে হারিয়ে বাংলায় জিততে পারে একমাত্র শুধু তৃণমূল।”

যা দেখে অনেকেই ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। বস্তুত, জোটের অন্যতম মুখ নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর অনেক আগেই আসন রফা নিয়ে জটিলতার জেরে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলায় একাই লড়বে তৃণমূল।

এদিনও নেত্রীর বক্তব্যে সেই কথারই ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে বাংলায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোট হওয়ার সম্ভবনা আরও অনিশ্চিত হল বলেই মনে করা হচ্ছে।

কাকতালীয়ভাবে, সোমবার রাহুলের পদযাত্রা যে পথ ধরে এগিয়েছিল, এদিন সেই পথ ধরেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে হাঁটেন তৃণমূল নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পদযাত্রাতে পা মিলিয়ে ছিলেন অসংখ্য মানুষ। মমতাকে দেখতে রাস্তার দু’ধারে মানুষের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।

রায়গঞ্জের সভা থেকে মমতা আরও বলেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যে ডিম খাওয়া বন্ধ করেছে, মাছ খাওয়া বন্ধ করেছে, মাছ খাওয়া বন্ধ করেছে। দোকানগুলো বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,’ রায়গঞ্জের সভা থেকে এভাবেই বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কেউ সাদা পরে, তো কেউ লাল পরে, কেউ হলুদ পরে, তো কেউ বেগুনি পরে, এটা মানুষের অধিকার। বিজেপি রাজ্যগুলিতে কী করছে, ডিম খাওয়া বন্ধ, সব দোকান ভেঙে দিয়েছে। ক্ষমতায় এসেই বন্ধ করে দিয়েছে। ডিম খাওয়া বন্ধ, মাছ খাওয়া বন্ধ, মাংস খাওয়া বন্ধ। সব দোকান বুলডোজার দিয়ে মধ্যপ্রদেশ – রাজস্থানে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’

মমতা আরও বলেন, ‘আপনি কী খাবেন আপনার ব্যাপার। আপনি মাছভাত খাবেন, না দুধভাত খাবেন এটা আপনার অধিকার। আপনি সালোয়ার পরবেন, না সাড়ি পরবেন, না প্যান্টজামা পরবেন, না মাথায় ওড়না দেবেন, আপনাদের নিজস্ব অধিকার। এই অধিকার কেউ কখনও কাড়তে পারে না। এবার ওদের বাজেট হবে না, আমাদের হবে। ওদের ভোট অন অ্যাকাউন্ট হবে। তাতেও দেখবেন মিথ্যা কথা বলছে।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রায়গঞ্জে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে, ইসলামপুর নতুন পুলিশ জেলা হয়েছে, কালিয়াগঞ্জে মেগা কার্পেট ক্লাস্টার হয়েছে। ৮ হাজার কার্পেট শিল্পী কাজ করেন। সবকিছু হয়েছে। আপনাদের তুলাইপাঞ্জি চাল সারা দেশে বিখ্যাত। জলস্বপ্ন প্রকল্পে ৫ লাখ ৮১ হাজার মানুষের কাছে জল পৌঁছবে বাড়ি বাড়ি। তার মধ্যে ১ লাখ ৫৭ হাজার মানুষের বাড়িতে জল ইতিমধ্যেই পৌঁছে দিয়েছি। বাদবাকিটা আর ৭-৮ মাসের মধ্যে সকলের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে।’

এদিন ফের একবার এনআরসি নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র আবার বলছে এনআরসি করব, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি করব, আবার বলছে একতন্ত্র চলবে, গণতন্ত্র নয়। বর্ডার এলাকায় বিএসএফ বলছে আমার কার্ড নিতে হবে। বলবেন তোমার এক্তিয়ার নেই, এটা রাজ্য সরকারের এক্তিয়ার। আমার আধার কার্ড আছে, আমার রেশন কার্ড , আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক।’ মমতার প্রশ্ন, ‘নাগরিক না হলে মতুয়ারা ভোট দেয় কী করে? এগুলো মিথ্যা কথা বলছে, আপনারা ইতিমধ্যেই নাগরিক। মনে রাখবেন আমরা সবাই নাগরিক। আমরা বাংলায় এআরসি চালু করতে দেব না, আগেও দিইনি, এখনও করতে দেব না।’

প্রসঙ্গত, গতকাল উত্তরবঙ্গে সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিএসএফের অত্যাচারে মানুষ তটস্থ। বিএসএফ সীমান্তে আলাদা আইডেনটিটি কার্ড দিতে চায়।আমি বলে দিচ্ছি, নেবেন না সেই কার্ড। বলবেন আমাদের আধার কার্ড রয়েছে, রেশন কার্ড রয়েছে। ওই কার্ড যদি নেন, তাহলে এনআরসি-তে পড়ে যাবেন। সব থেকে বাদ চলে যাবেন। কোনও সরকারি সুবিধা পাবেন না কিন্তু।” বস্তুত, বরাবরই সিএএ-এনআরসি ইস্যু নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হবে বলে ‘গ্যারান্টি’ দেওয়ার পরপরই ফের সরব হন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সেই উত্তরই দিলেন বিএসএফ-এর ইস্টার্ন কমান্ড ডিআইজি এসএস গুলারিয়া।

তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, কোনও রকম পরিচয় পত্র বানানোর অধিকার বিএসএফ-এর নেই। তবে একটি গেট পাস দেওয়া হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। বিএসএফ কর্তা বলেছেন, “আমরা জানতে পেরেছি সীমান্ত এলাকায় কিছু জায়গা আছে যেখানে কেউ কেউ ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়ে রেখেছেন। আর সেই কারণে একটি গেট পাস দেওয়া হচ্ছে। সেটি দেখালে বিএসএফ অন্যপ্রান্ত তাঁদের যেতে দেয়। সেখানে গিয়ে তাঁরা চাষবাস করে আবার ফেরত আসে।” অর্থাৎ যাঁদের হয়ত জমি রয়েছে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ বা যাঁদের বাড়ি বাংলাদেশে কিন্তু জমি রয়েছে এ দেশে। তাঁদের দেওয়া হচ্ছে গেট পাস। কোনও ভাবে দেশের ভিতর যাতে অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করতে না পারে সেই জন্যই এই গেটপাস বলে জানিয়েছেন এসএস গুলারিয়া।

তিনি এও বলেছেন, “আলাদা পরিচয়পত্র তৈরি করার অধিকার আমাদের নেই। অনেক সময় দেখা যায় ভুয়ো আধার কার্ড দেখিয়ে বাংলাদেশিদের একাংশ অনুপ্রবেশ করে। সব সময় সেটা ধরা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই এই গেট পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here