দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভারতীয় মাটি ছুঁল এয়ারবাস এ৩২০ বিমানের চাকাটা।মনে মনে তিনি বলে উঠলেন, ‘মা তুঝে সালাম’। 

তিনি মহাশ্বেতা চক্রবর্তী। এই বিমানের চালক। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকারের ‘অপারেশন গঙ্গা’য় সামিল হয়েছিলেন।

ফিরিয়ে এনেছেন ৮০০ ভারতীয় পড়ুয়াকে। বুধবার ২৩ মার্চ সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির (এসএনইউ) অডিটোরিয়াম হলে তাঁকে সম্বর্ধনা দিল এসএনইউ। ছিলেন এসএনইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের  সিইও শঙ্কু বোস প্রমুখ।

রাজ্য তথা দেশের গর্ব বছর ২৪-এর মহাশ্বেতার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরে। যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের তৈরি এয়ারবেসের বিভিন্ন নিদর্শন দেখেই বিমান চালক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। পাশে থেকে সাহস আর উৎসাহ যুগিয়েছিলেন তাঁর বাবা, মা এবং শিক্ষকরা।

কিন্তু তার জন্য যখন তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেন তখন ভারতীয় বিমান বাহিনীতে পাইলট হিসেবে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির কোনও সুযোগ ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই যোগ দিয়েছেন বাণিজ্যিক বিমান পরিষেবায়। ভারতীয় পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি একেবারে আচমকাই এসেছিল তাঁর সামনে। তাঁকে ফোনে জানানো হয় সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। 

মহাশ্বেতার ভাষায়, ‘মা’কে যখন বললাম তখন মা ভেবেছিল আমি ইয়ার্কি করছি। ফিরে আসার পর মা বলেছিল, আমি তোমার জন্য গর্বিত।’

ভারতীয় পতাকা হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের দল। ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশ থেকে তাঁদের বিমানে তুলে নেওয়া হয়েছিল।

প্রবল ঠান্ডা সেই সঙ্গে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, যা থেকে বহু পড়ুয়াই কাবু হয়ে পড়েছিলেন। মহাশ্বেতার কথায়, ‘চোখের সামনে এঁরা দেখেছেন কীভাবে মানুষ হত্যা হয়েছে। রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থা হয়েছিল তাঁদের। অনেকেই বারবার বলছিলেন, বাড়ি যাব মা’র কাছে যাব। 

পড়ুয়াদের এই মানসিক অবস্থাটা কোনওদিন ভুলব না।’ অদম্য মনের জোরের অধিকারিণী মহাশ্বেতা এদিন অডিটোরিয়ামে উপস্থিত পড়ুয়াদের এক প্রশ্নের উত্তরে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যদি তুমি পাইলট হতে চাও তবে ইচ্ছেটাকে বাড়াতে হবে। কঠিন বলে কিছু হয় না।’

বাড়ি ফিরে পেয়েছেন বীরের সম্মান। আপ্লুত তিনি বাবা, মা, প্রতিবেশী এবং অন্যদের ভালোবাসা পেয়ে। দেশে ফেরার পর যেদিন বাড়ি ফিরে এলেন সেদিন তাঁর পছন্দের সবকটি খাবারই ছিল খাবার টেবিলে। এর আগে কোভিড পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছেন বা দেশের নানা জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন করোনার সঙ্গে মোকাবিলার নানা সামগ্রী।

যদিও পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি একটু আলাদা করেই দেখতে চান তিনি। কিন্তু তার জন্য কিন্তু এতটুকু অহঙ্কারও স্পর্শ করেনি তাঁকে। এই বীরাঙ্গনার ভাষায়, ‘আমি কিছুই করিনি। শুধু দেশের সেবা করেছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here