দেশের সময়, গঙ্গাসাগরে ১ কোটি পুণ্যার্থীর ভিড়! অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভাঙল এবার। সোমবার এমনই দাবি করলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। রবিবার রাত ১২টা ১৩ মিনিট থেকে পুণ্যস্নানের সময় শুরু হয়। ঘড়ির কাঁটা ১২টা ১৩ ছুঁতেই কনকনে শীতের রাতে সাগরে নামেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। হাড়হিম করা ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই শাহিস্নানে সাগরে নামেন তাঁরা। আজ রাত ১২টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত পুণ্যযোগ থাকবে। এখনও কাতারে কাতারে মানুষ স্নান করছেন সাগরে। শুধু তাই নয়, এখনও বাবুঘাট থেকে প্রচুর পুণ্যার্থী সাগরমুখী।

গত শুক্রবার দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়িতে যখন ইডির তল্লাশি অভিযান চলছিল, তখন টিপ্পনি কেটে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘শীতের জামাকাপড় গুছিয়ে রাখুন। এই ঠাণ্ডায় জেলে থাকতে হবে’।

রাতে ইডি অফিসাররা বেরিয়ে যেতেই বহুতলের বারান্দা থেকে সুজিত হাত নেড়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “নিচে আসছি। কথা আছে।” সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দুকে ‘গাড়ল’ বলেছিলেন, সুজিত। এও বলেছিলেন, “হ্যাঁ শীতের জামাকাপড় গোছাচ্ছি। আমাকে গঙ্গাসাগরে যেতে হবে।”

সোমবার মকরসংক্রান্তির দিন দেখা গেল, কনকনে ঠাণ্ডা আর উত্তুরে হাওয়া উপেক্ষা করে সাগরে বুক জলে নেমে পড়লেন সুজিত। তার পর গুনে গুনে ডুব দিলেন।
ধর্মমতে মকরস্নানে ইহজীবনের সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। আবার পুরাণে বলা হয়েছে ভিন্ন কথা। পৌষ মাসের শেষ দিন সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়। সেই ব্রহ্মমুহুর্তে যমুনায় মকর স্নান করলে নাকি আয়ু বাড়ে। মা যশোদা সেই বিশ্বাস থেকে বালক কৃষ্ণকে নিয়ে যমুনায় সংক্রান্তির স্নান করতে গিয়েছিলেন।

সুজিত অবশ্য গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে। যাকে বলা যেতে পারে প্রশাসনিক নির্দেশ। তিনি দমকল মন্ত্রী। গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা ও নিরাপদে রাখার বড় দায়িত্ব থাকে দমকল মন্ত্রীর উপর থাকে।

আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সুজিত বসুকে আট নম্বর লটে রাখা হবে। আর বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস থাকবেন গঙ্গাসাগর মেলায়। কিন্তু প্রস্তুতি বৈঠকের দিন অরূপ মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, সুজিত বসুকেও গঙ্গাসাগরেই রাখা হোক। সেই সঙ্গে তথ্য ও সংস্ক়ৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন যেন মেলায় থাকেন। কারণ একা একা এত বড় মেলা সামলানো একটু চাপের হয়। মুখ্যমন্ত্রী অরূপের পরামর্শ মেনে সুজিতকেও সেখানে পাঠিয়ে দেন।  

এদিন মকর স্নানের সময় শুরু হয় সকাল ৭টা ৪৯ মিনিটে। শেষ হয় সন্ধে ৫টা ৪২ মিনিটে। সুজিত সাগর স্নান করে নেন বেলায় বেলায়। তখন রোদ ছিল। তবে তা ছাপিয়ে ঠাণ্ডা ছিল অধিকতর।

কাকদ্বীপের লট নম্বর আট ও কচুবেড়িয়াতে ভিড়ে ঠাসা পুণ্যার্থী। দিনভর চলে পুণ্যার্থীদের আসা-যাওয়া। এবার সাগরমেলায় ৬টি স্নানঘাটের বন্দোবস্ত হয়। তবু যেন কমই পড়ে গিয়েছে। উত্তুরে হাওয়া, চারদিক ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া, তবু পুণ্যের খোঁজে সাগরে ডুব দিয়ে চলেছেন পুণ্যার্থীরা।

সাগরস্নানের পর মেলার ২ নম্বর রাস্তা ধরে পিলপিল করে মানুষ চলেছেন কপিলমুনি মন্দিরে পুজো দিতে। রাত থেকে লম্বা লাইন। ভিড় সামাল দিতে ড্রপ গেট দিয়ে আটকে দেওয়া হয় পুণ্যার্থীদের। সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজ্যের মন্ত্রীরা। অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, স্নেহাশিষ চক্রবর্তী, পার্থ ভৌমিক, সুজিত বোস কে ছিলেন না। ছিলেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা ও সুন্দরবনের পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও নলাভাট। 

অরূপ বিশ্বাস বলেন, “এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক পুণ্যার্থী ই-স্নান ও ই-দর্শনের সুযোগ উপভোগ করেছেন। মেলাকে দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব রাখতে সমস্তরকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আজ গঙ্গাসাগর মেলা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বিকাল ৩টে পর্যন্ত যা রিপোর্ট পেয়েছি কাল সারারাত, আজ সারাদিন প্রায় ১ কোটি মানুষ এসেছেন। এটা আরও কয়েক লক্ষ বাড়বে বলেই আশা। এখনও লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে আছেন।”

ছবি তুলেছেন দেবাশিস রায় ৷

এদিন উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ৬৫ বছরের রামসেবককে মেলা থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও অবধি ৩ পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে বার্ধক্যজনিত কারণে। ২৩৬ জন পুণ্যার্থী অসুস্থ হয়ে সাগরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৪২ জনকে উন্নততর চিকিৎসা পরিষেবার জন্য কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এবারের মেলায় এখনও অবধি ৩৪১টি পকেটমারির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৩২২টি খোয়া যাওয়া জিনিস উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিভিন্ন অপরাধে ৭৫২ জনকে অপরাধমূলক কাজের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here