দেশের সময়: কড়কনাথ।কালো মুরগি। অনেকে কালীমাসি বলেন। বাজারে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এর মাংস। অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ুতে অনেকদিন ধরেই এই মুরগির চাষ হচ্ছে। এখন হামেশাই মিলছে বাংলাতেও।

বিশেষ প্রজাতির এই মুরগির একজোড়া ডিমের দাম ৫০ টাকা। কড়কনাথের পালক থেকে হাড়-মাংস সবই কালো। রক্ত লাল হলেও কালচে আভা রয়েছে। শুধু ডিম সাদা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুরগির শরীরেই রয়েছে রোগমুক্তির জাদু। কড়কনাথের মাংসে এমন কিছু উপাদান আছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। পুষ্টিবিদদের দাবি, কালো মুরগির গুণাগুন জানলে আজই ডায়েটে যোগ করবেন আপনিও!


ঠিক কী কী রয়েছে কড়কনাথ মুরগির মাংসে? পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুরগির মাংসে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ভালো পরিমাণে রয়েছে আয়রন। ফ্যাট রয়েছে ১.৯৪ শতাংশ। যা অন্য প্রজাতির মুরগির মাংসের তুলনায় কম। প্রোটিনের মাত্রাও ভালোই। ২৫ শতাংশের বেশি প্রোটিন পাওয়া যায় কালো মুরগির মাংসে। যেখানে অন্য মুরগির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ১৮-২০ শতাংশ। এছাড়া কোলেস্টেরলের মাত্রাও খুবই কম, ০.৭৩-১.০৫ শতাংশ। সাধারণ চিকেনে যেখানে অনেকটাই বেশি থাকে।

কড়কনাথ মুরগির মাংসে রয়েছে ১৮ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যার মধ্যে ৮টি মানবদেহের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কালো মুরগির মাংসে অন্তত ২৪ শতাংশ লিনোলেনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। অন্য চিকেনে এই মাত্রা কোনওমতেই ২১ শতাংশের বেশি নয়। মাইসোরের সেন্ট্রাল ফুড অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট গবেষণা চালিয়ে দেখেছে, হৃদরোগীদের জন্য এই মুরগির মাংস দারুণ উপকারি। এই মাংস খেলে হার্টে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। মধ্যপ্রদেশের প্রাণী বিজ্ঞানী ড. আর এস তোমর ভারতীয় ক্রিকেটারদের পেশীর জোর বাড়াতে ডায়েটে এই মুরগির মাংস রাখার কথা বলে সম্প্রতি ট্যুইট করেন।


কড়কনাথ মুরগির মাংস কালচে রঙের। রান্নার পরও হেরফের হয় না। ঘাস ও কপির পাতা খায় এই মুরগি। অ্যাজোলাও খেতে ভালোবাসে। মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীরা প্রথম এই মুরগির চাষ করেন। চীন ও ইন্দোনেশিয়াতেও কড়কনাথ মুরগির চাষ হয় বলে জানা গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে এই মুরগির কথা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন আধিকারিককরা। সব শুনে স্বাস্থ্য দপ্তরকে মুরগিটির গুণাগুন খতিয়ে দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কড়কনাথের মাংস খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্বাভাবিক থাকবে রক্তে শর্করার মাত্রা। বাত ও হার্টের রোগীদের জন্য এই মুরগির মাংস ভালো। ভোপাল ও ইন্দোরে সরকারি কাউন্টার থেকে কড়কনাথ মুরগির মাংস বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাতেও বিক্রি হচ্ছে কড়কনাথের প্যাকেটজাত মাংস। পশ্চিম মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া ও ধার জেলায় এই মুরগি বেশি দেখা যায়। আমাদের রাজ্যেও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কড়কনাথ মুরগির চাষ বাড়ছে।


পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের দাবি, কালো মুরগির মাংসে রয়েছে অনেক অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ভিটামিন। যা রক্তকোষ ও হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। দূর করে পালমোনারি সমস্যা। এই মুরগির ডিম মাথাব্যথা, প্রসবের পর সমস্যা, অ্যাজমা, নেফ্রাইটিস অসুখে কাজ দেয়। মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য এর মাংস ভালো। বয়স্কদের জন্যও কালো মুরগির মাংস বিশেষ উপকারি। যথেষ্টই পুষ্টিকর। কড়কনাথ মুরগির মাংসে রয়েছে ভিটামিন বি ১, বি ২, বি ৬, বি ১২, সি, ই, নিয়াসিন, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, নিকোটিনিক অ্যাসিড। রোগ প্রতিরোধে এই মুরগির মাংসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কড়কনাথ মুরগির প্রজননে উৎসাহ দিতে মধ্যপ্রদেশে ইনসেনটিভ চালু করা হয়েছে সরকারি তরফে।


কড়কনাথ মুরগির গুণাগুন দেখে অনেকেই একে ন্যাচারাল মিরাকল বলে থাকেন। যা প্রকৃতির নিজস্ব ল্যাবেই তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ এই মুরগিকে ক্যাপটেন ব্ল্যাক, কেউবা ব্ল্যাক ডায়মন্ড নামেও ডাকেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, কালো মুরগির মাংস খেলে মহিলাদের শারীরিক নানা সমস্যা দূর হয়। এই মাংস যক্ষা প্রতিরোধ করে। কিডনির প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়। উচ্চমাত্রায় লিনোলেনিক অ্যাসিড এবং খুব কম কোলেস্টেরল থাকায় স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। ওজন কমাতে সাহায্য করে কড়কনাথের মাংস। সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

পুষ্টিবিদদের বক্তব্য, যেভাবে ব্রয়লার মুরগিকে খাইয়ে এবং হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে বড় করা হয়, তা ঠিক নয়। এতে ৪০-৪৫ দিনেই একটি ব্রয়লার মুরগির ২-২.৫ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে যায়। দেখা গিয়েছে, দেড় মাস পর যদি ব্রয়লার মুরগিকে খাওয়ার জন্য মেরে ফেলা না হয়, তা হলে স্থূলতার কারণে কিছুদিন পর এমনিতেই মারা যায় মুরগিটি। শরীরের ওজন এতটাই বেশি হয়ে যায় যে, পায়ের উপর সে দেহের ভার রাখতে পারে না। ফলে মুরগিটি বারবার বসে পড়ে। এদিক থেকে কালীমাসি বা কড়কনাথ স্বাস্থ্যবান, সুঠাম।

১২০-১৩০ দিনে একটি কড়কনাথের দেড় কেজির মতো ওজন হয়। এই মুরগি ১২ বছর পর্যন্ত বাঁচে। কিন্তু ওজন ২ কেজির বেশি হয় না। ব্রয়লার মুরগি যেখানে বছরে ৩২০-৩৩০টি ডিম দেয়, সেখানে কড়কনাথ বছরে ১২০-১৩০টি ডিম দিয়ে থাকে। প্রাণীবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কড়কনাথ মুরগির মাংসে ভিটামিন, মিনারেল, ওমেগা নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর মাত্রায় থাকে। যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

যাঁরা স্বাস্থ্য সচেতন, তাঁদের জন্যও কড়কনাথের মাংস বিশেষ উপকারি। কারণ, এই মাংসে ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম। এছাড়া ওমেগা নাইন গোত্রের মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকার জন্য দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের পথ্য হিসেবে কড়কনাথ মুরগির মাংস ও ডিম উপকারি হতে পারে। দেশি মুরগির মতোই এদের পালন করতে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here