ধেয়ে আসছে (Cyclone Jawad) জাওয়াদ সাইক্লোন, ভাসবে রাজ্য! জেনে নিন কবে কবে ঝড়বৃষ্টি

দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মেলানো যেন ক্রমেই দুষ্কর হয়ে উঠছে। প্রতি বছর একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে এমনিতেই জেরবার সকলে। তার উপর এবছরের পুজোও ভেসে গেছে বর্ষায়। শেষমেশ এসেছে শীত, তবে শীতেও নাকি ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়! আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে শঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে বাঙালির হৃদয়ে।
আবহবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে। জাওয়াদ ঘূর্ণিঝড় হয়ে খুব তাড়াতাড়িই আছড়ে পড়বে রাজ্যে। এর ফলে বাংলায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। শনিবার থেকেই কলকাতা-সহ উপকূল ও সংলগ্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে অতিভারী বৃষ্টির সর্তকতা জারি।

জাওয়াদ নাম দিয়েছে সৌদি আরব। এই ঘূর্ণিঝড়ের নামের অর্থ উদার বা মহান:

দক্ষিণ থাইল্যান্ডের এই ঘূর্ণাবর্ত ইতিমধ্য়েই বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর পরে এটি দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব-মধ্য বঙ্গপোসাগরে শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপ রূপে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এর পরে সেটি ক্রমশ দক্ষিণ-পূর্ব পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এ অবস্থান করবে। এই অবস্থা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে শুক্রবারই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এই গভীর নিম্নচাপ। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পরে তার অভিমুখ হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে। শনিবার সকালে এটি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ অথবা উড়িষ্যা উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।

এর প্রভাবে বাংলার উপকূলে সমুদ্র উত্তাল হবে। শনিবার সকালে সমুদ্র উপকূলে বাতাসের গতিবেগ ৬৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার হতে পারে। শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা সমুদ্রে রয়েছেন তাঁদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় বৃষ্টি এবং উপকূল ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা। শনি ও রবিবার ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে কাটবে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের।

ঝড়ঘূর্নিঝড় জাওয়াদ (Jawad) নিয়ে দিল্লিতে গুরুত্বপূ্র্ণ বৈঠক করল কেন্দ্রীয় সংকট মোকাবিলা কমিটি (The National Crisis Management Committee (NCMC)। বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসনের তরফে এই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবার নেতৃত্বে এই দিন বৈঠক হয়।

এই কমিটির অলোচনায় কেন্দ্রীয় মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল জানান, একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরের উপরে। ৩ ডিসেম্বর এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আকার নেবে। সেটি অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অতিক্রম করবে ৪ ডিসেম্বর, সেই সময় এটির হাওয়ার গতি থাকবে, ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। পাশাপাশি বিপুল বৃষ্টি ও সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে এই প্রাকৃতির দুর্যোগ দেখা দেবে। ঘূর্ণিঝড় মূলত প্রভাব ফেলবে শ্রীকাকুলাম, বিশাখাপত্তনম ও বিজয়নগরমে। এ ছাড়া এর প্রভাব পড়বে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হতে পারে এই দুর্যোগের প্রভাবে।

এই কমিটির বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মুখ্যসচিব ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। সেখানে তাঁরা ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি আটকাতে কী ব্যবস্থা প্রশাসনিক স্তরে নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। যে রাজ্যগুলিতে ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে আপাতত ৩২টি দল পাঠিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এ ছাড়া প্রয়োজনে আরও অতিরিক্ত দল পাঠাতে হতে পারে বলে খবর। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে নৌবাহিনীকেও।

আলোচনায় ক্যাবিনেট সচিবের পক্ষ থেকে ক্ষয় ক্ষতি এড়াতে যথেষ্ট ব্য়বস্থা  নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। যে অঞ্চলে এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেই অঞ্চলে যাতে যতটা সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি হয় ও প্রাণহানী এড়ানো যায়, তার ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্য গতিপথের এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে মানুষদের। পাশাপাশি, মৎস্যজীবীরা যাতে এই সময়ে কোনও মতেই সমুদ্রে না যান, সে বিষয়েও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে।

কেমন থাকবে আবহাওয়া দেখুনএক নজরে:


শুক্রবার: আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে, মেঘলা আকাশ। উপকূলের দুই জেলা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ও কিছুটা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা।
শনিবার: বৃষ্টি বাড়বে, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। সঙ্গে ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং ঝাড়গ্রামে। সঙ্গে থাকবে ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হওয়া।


রবিবার: বৃষ্টির ব্যাপকতা আরো বাড়বে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, ঝাড়গ্রাম এবং হাওড়াতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সর্তকতা। ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান এবং উত্তরবঙ্গের মালদা জেলাতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। এই জেলাগুলিতেও ৩০-৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট থাকবে।

শুক্রবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন কলকাতাতেও। মেঘলা আকাশ, সঙ্গে হালকা পূবালী বাতাস বইতে থাকবে। বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা। শনিবার বৃষ্টি হবে কলকাতায়। দু-এক পশলা হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া।
রবিবার বৃষ্টি ও ঝড় বাড়বে কলকাতায়। ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সর্তকতা রয়েছে শহরে। হালকা বৃষ্টি চলবে সোমবারও। কলকাতায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঝড়বৃষ্টির জেরে ধীরে ধীরে বাড়বে তাপমাত্রা। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক, ২৯.৩ ডিগ্রি। বাতাসে জলীয়বাষ্পের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৯৩ শতাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here