দেশের সময়, বনগাঁ: চন্দন মণ্ডলকে জেলের মধ্যে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলতে পারে এই তৃণমূল সরকার। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই-এর হাতে চন্দন গ্রেফতার হওয়ার পর এমনটাই বললেন বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার।

শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার সুটিয়ায় বিজেপির একটি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক বলেন, চাকরি দুর্নীতির একটি গোড়া আমাদের মহাকুমায় আছে। তাঁর নাম চন্দন মণ্ডল। আজ তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে, চার দিনের হেফাজতে নিয়েছে। আগামিদিনে রাঘববোয়ালদের নাম সামনে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে চন্দনকে মেরে ফেলা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তৃণমূলকে আক্রমণ করে বিধায়ক বলেন, আমরা বাংলার সরকারকে বিশ্বাস করি না। এরা ছলনাময়ী। এরা জেলেও কিছু করতে পারে। সিবিআই-এর হেফাজতেও এরা লোক ঢোকাতে পারে। আসল চোর সামনে আনার জন্য এদের সুরক্ষা দেওয়ার দরকার আছে।

তদন্তকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চন্দন মণ্ডলকে সামলে রাখবেন। তাঁকে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলতে পারে এই তৃণমূল সরকার। কারণ তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে হবে। তাঁর দাবি, চন্দনকে জেরা করলে যদি অন্য কোনও নেতার নাম সামনে এসে যায়, সে কারণেই মেরে ফেলা হতে পারে চন্দনকে।

বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বিজেপি বিধায়কের মন্তব্য সম্পর্কে বলেন, ‘ইডি সিবিআই তাহলে কী করতে আছে? স্বপন মজুমদারের কোনও কাজ নেই। জনসংযোগ নেই। কুৎসিত, কুরুচিকর কথা বলে কীভাবে প্রচারে থাকা যায়, শুধুই সেই চেষ্টা। আইনের ওপরও কোনও ভরসা নেই।’

শুক্রবারই নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় চন্দন মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে নিজাম প্যালেস থেকেই গ্রেফতার করা হয় এদিন। বাগদার বাসিন্দা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চন্দনকে চারদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।

প্রসঙ্গত, এদিকে টাকা দিলেই চাকরি! চন্দন মণ্ডলের বাড়ির সামনে নাকি একসময় লাইন পড়ে যেত। চাকরি চাওয়ার লাইন। অন্তত তেমনটাই বলছেন বাগদার বাসিন্দারা। কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমে শুনেছেন সিবিআই-এর হাতে চন্দনের গ্রেফতার হওয়ার খবর। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, চন্দন যা করেছেন, তাতে গ্রেফতার হওয়াই উচিত। তবে, চন্দনের কাছ থেকে যাঁরা টাকা নিতেন, তাঁরা কবে ধরা পড়বে? সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। ঠিক কতজন চাকরি পেয়েছিলেন চন্দনকে টাকা দিয়ে? এলাকার বাসিন্দারা সঠিক সংখ্যা বলতে পারছেন না ঠিকই। তবে তাঁদের কথায়, চাকরি হয়েছে অনেকের। এখন যদি সে সব চাকরি যায়, তাহলে নাকি গ্রামে হাহাকার পড়ে যাবে।

এক বাসিন্দাকে প্রশ্ন করে জানা গেল, ‘আগে ৫ লক্ষ দিতে হত চাকরির জন্য, পরে ১২ লক্ষ টাকা দিতে হত।’ তাঁর কথায়, চাকরি চলে গেলে হাহাকার পড়ে যাবে, গ্রামে আলোড়ন পড়ে যাবে। ইতিমধ্যেই গ্রুপ ডি মামলায় গ্রামের ৭-৮ জনের চাকরি গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
চন্দন একা নন, তাঁর অনেক লোকজনও ছিলেন। সেই সব এজেন্টদের বাড়িঘরও ভাল বলে জানিয়েছেন তিনি। চাকরি চাইতে নাকি লোক আসত নদিয়া, ২৪ পরগনা থেকেও।

রমেশ চন্দ্র মণ্ডল নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘শুধু বাগদা নয়, নদিয়া, দিনাজপুর, গোটা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে চন্দনের কারবার চলত।’ চাকরি চাওয়া শুধু নয়, কাউকে বদলি করাতেও ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নিতেন চন্দন, এমনটাই অভিযোগ তাঁর।

বাগদা পঞ্চায়েতের উপ প্রধান গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভিন্ন কথা শোনা যায়, তবে আমার ঠিক জানা নেই। আমি কখনও দেখিনি।’

শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল চন্দন মণ্ডলকে। জিজ্ঞাসাবাদের পরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে এদিন। তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি বিক্রির অভিযোগ সামনে এসেছে আগেই। এবার তাঁকে জেরা করে আরও তথ্য বের করে আনতে চায় কেন্দ্রীয় সংস্থা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here