নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) চালু হয়ে গেল ভারতে।  সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভা নির্বাচনের আগেই সিএএ কার্যকরের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেন। আইন পাস হয়েছিল আগেই। চারবছর পর দেশজুড়ে কার্যকর হল সিএএ বা  নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।

সিএএ কী  জানুন এক নজরে।

সিএএ আসলে কী
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৭ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত যাঁদের জন্ম হয়েছে, তাঁরা জন্মসূত্রেই ভারতীয় নাগরিক। এ ক্ষেত্রে তাঁদের বাবা-মায়ের নাগরিকত্ব কী, তা দেখা হবে না। আবার ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের জন্মের সময় বাবা-মায়ের নাগরিকত্ব ভারতীয় হলে তবেই তাঁরা ভারতীয় হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে বা নিপীড়নের জন্য এ দেশে আসা শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই দেশগুলি থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সিএএ-তে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও আইনে অ-মুসলিমদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ ওই ছয় সম্প্রদায় ছাড়া পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান বা অন্য কোনও দেশ থেকে আসা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের শরণার্থীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।

১৯৫৫ সালের আইনের সঙ্গে তফাৎটা কোথায়


১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে কোনও ধর্মের উল্লেখ ছিল না। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করিয়েছে তাতে স্পষ্টত ধর্মের উল্লেখ আছে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে স্পষ্ট বলা ছিল, কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত বা ভারতীয় উপমহাদেশে জন্মানো নাগরিক নির্দিষ্ট মেয়াদের বেশি সময় এদেশে থাকলেই তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

এক্ষেত্রে মুসলিম বা অ-মুসলিম বলে আলাদা করে কিছু উল্লেখ করা ছিল না। একই সঙ্গে বলা হয়েছিল নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর ভারতে থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। নতুন আইনে সেই ১১ বছরের সময়কাল কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।

কাদের জন্য নাগরিকত্ব
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ,জৈন,শিখ, পার্সি, খ্রিস্টানরা যদি ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় নিতে চান, সে ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত। ভিসা বা পাসপোর্টের মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করা যাবে।

কারা আবেদন করবেন
২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আশ্রয় চেয়েছিলেন এবং ভারতে ৫ বছর বাস করলেই তাঁরা এ দেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের যোগ্য হবেন। 
যাঁরা ইতিমধ্যেই ভারতীয় নাগরিক, তাঁরা কী করবেন
বৈধভাবে যাঁরা ভারতীয় নাগরিক তাঁদের জন্য সিএএ নয়। উল্লিখিত প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা নাগরিকদের নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই আইন। কোনও ব্যক্তি হিন্দু হোক বা মুসলিম বা অন্য কোনও ধর্মের, তিনি যদি আগে থেকেই ভারতীয় নাগরিক হন, তাহলে সিএএ-র কোনও প্রভাব তাঁর উপর পড়বে না।


ভারতের নাগরিকত্ব পেতে কীভাবে আবেদন করতে হবে ?

আবেদনকারীদের একটি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। কবে তিনি ভারতে প্রবেশ করেছেন, সে কথাও উল্লেখ করতে হবে সেখানে।


অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়া জেনে নিন ধাপে-ধাপে—
-তে যেতে হবে।
১) ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য সরকার যে ওয়েবসাইট তৈরি করেছে, সেই indiancitizenshiponline.nic.in
২) হোমপেজেই ‘INDIAN CITIZENSHIP ONLINE FORMS’-র নীচে একাধিক অপশন আছে। আপনি যে ক্যাটেগরিতে আবেদন করতে চাইছেন, তাতে ক্লিক করতে হবে।

৩) নতুন একটি পেজ খুলে যাবে। কারা আবেদন করতে পারবেন, কী কী নথি লাগবে, পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য খুঁটিয়ে পড়ে নিতে হবে। তারপর ‘Apply Online’-এ ক্লিক করতে হবে আবেদনকারীদের।

৪) আবারও একটি নতুন পেজ খুলে যাবে। সেই পেজের শুরুতেই থাকবে ‘Temporary Application Id’ , সেটা লিখতে হবে। তারপর যাবতীয় তথ্য পূরণ করতে হবে আবেদনকারীদের। সব তথ্য নির্ভুলভাবে দিয়ে ক্লিক করতে হবে ‘Save and Next’ বাটনে। এভাবেই একে-একে ঠিকানা, পরিবার, অপরাধ সংক্রান্ত ইতিহাস আছে কিনা সেসব তথ্য সবিস্তারে দিতে হবে।

৫) তারপর আসবে ‘Photo/Documents’-র জায়গা। সেখানে নিজের ছবি আপলোড করতে হবে এবং যা যা নথি জমা করতে হবে সেগুলোর সফট কপি আপলোড করতে হবে। ‘আপলোড ফোটো’ অপশনে গিয়ে আবেদনকারীর ছবি আপলোড করতে হবে। আপনি যে যে তথ্য দিয়েছেন, তা সঠিক হয়েছে কিনা, সেটা দেখার জন্য ‘View Application’-তে ক্লিক করতে হবে আবেদনকারীদের। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে ‘FINAL SUBMIT TO THE MINISTRY’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। 

৬) একটি ‘MHA File Number’ (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ফাইল নম্বর) জেনারেট হবে। সেই নম্বর রেখে দিতে হবে আবেদনকারীদের। যে ‘ডায়লগ বক্সে’ ওই নম্বর দেখাবে, তা ‘Close’ করে নথি আপলোড করতে হবে। স্ক্যান করা পিডিএফ নথি লাগবে।

৭) এরপর ‘Online Payment’-র ট্যাবে যেতে হবে। সেখানে আবেদনকারীর নাম, ফর্ম, টাকা, MHA ফাইল নম্বর দেওয়ার অপশন থাকবে। নীচেই থাকবে ‘Payment Gateway’। তাতে ক্লিক করতে হবে। অনলাইনে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা দেওয়া যাবে।

৮) অনলাইনে যে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন এবং সেটার স্বপক্ষে বিভিন্ন নথি জমা দিতে হবে জেলাশাসক বা ডেপুটি কমিশনারের অফিসে।


৯) নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণ করা হলে আবেদনপত্রে দেওয়া ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠানো হবে। সেইসঙ্গে রেজিস্টার্ড ইমেল আইডি ও মোবাইল নম্বরেও সরকারের তরফে মেসেজ পাঠানো হবে।

১০) সেই চিঠি বা ইমেল পাওয়ার পরে indiancitizenshiponline.nic.in-সাইটে গিয়ে নিজের ক্যাটেগরি অনুযায়ী ‘Form X’ বা ‘Form XI’ বা ‘Form XII’ পূরণ করতে হবে এবং জেলাশাসকের অফিসে সমস্ত কপি জমা দিতে হবে।

 যদি নাগরিকত্বের আবেদন গৃহীত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার বা জেলাশাসকের কাছে তাঁর নাগরিকত্বের শংসাপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here