হীয়া রায় ,হাবড়া:

বর্তমানে জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাবড়ায় এসে ফের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিজেপিকে তুলোধনা করলেন মমতা।

প্রত্যাশামতোই হাবড়ায় এসে সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে সরাসরি বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মমতা বলেন, বিজেপি দেশজুড়ে অশান্তির খেলা শুরু করেছে।

নাগরিকত্ব আইন আসলে বিজেপির একটি ‘জুমলা’ বলে ব্যাখ্যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও বেশ কিছু নথি চাওয়া হবে, এই অধিকার প্রদানে। সেই নথি কি সব মানুষ খুঁজে পাবেন? প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার দেশজুড়ে কার্যকর হয়েছে সিএএ। ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ভাঁওতা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হাবড়ার সভা থেকে তাঁর দাবি, ভোটের আগে প্রতারণা, ছলনা, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। সিএএ আদৌ বৈধ কিনা, সন্দেহ রয়েছে তাঁর।

মমতা বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা পুরোটাই ভাঁওতা।’সিএএ আইনটি এনআরসির সঙ্গে যুক্ত বলেও স্পষ্ট বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি জানান, কিছুদিন পরেই সিএএর সঙ্গে যুক্ত করে দেবে। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে উদ্দেশ্য করে মমতার বার্তা, আপনারা কি আদৌ বিশ্বাস করেন আইনটাকে? যদি, তাই হয় তাহলে এতদিন বাদে আইনটিকে কেন চালু করা হল? নির্বাচনের দুদিন আগেই কোনও আইন করলেন, সেটি আদৌ আইনে পরিণত হয়। তাঁর কথায়, ‘বিজেপি অনেক রকম কথা বলবে, ওগুলো সব মিথ্যা।’

মমতা হাবড়ার সভা থেকে দাবি করেন, ”বিজেপির নেতারা বলছেন সিএএ করে দিলাম। যাঁদের দরখাস্ত করতে বলা হচ্ছে তারা একবার দরখাস্ত করলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা নাগরিক থাকা সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন।” এই প্রসঙ্গেই মমতার প্রশ্ন, এইসব মানুষের সম্পত্তির কী হবে? চাকরির কী হবে? তাঁর দাবি, সবকিছুই বেআইনি ঘোষণা করে দেবে কেন্দ্রের সরকার। এটা অধিকার কাড়ার খেলা।  

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, সিএএ-র সঙ্গে এনআরসির কোনও যোগসূত্র নেই। কিন্তু হাবড়ার সভা থেকে মমতার বিস্ফোরক অভিযোগ, এই দুইয়ের যোগসূত্র আছে। মমতা বলেন, ”দরখাস্ত করলেই ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে চলে যাওয়া হবে। তাই দরখাস্তের আগে ১০ বার ভাবতে হবে।” বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে তাঁর বক্তব্য, একজন মানুষ অধিকার পেলে তিনি খুশি হবেন, কিন্তু কারও অধিকার কাড়া হলে তিনি মানবেন না। বাংলা থেকে তিনি কাউকে বিতাড়িত হতে দেবেন না বলেও অবগত করেছেন মমতা।

মমতার স্পষ্ট কথা, সিএএ একটা ভাঁওতা। কোনও স্পষ্টতা নেই। তাই তিনি আমজনতাকে উদ্দেশ্য করে বার্তা দিলেন, শুধু ভোটের জন্য ভাববেন না। নাহলে কিন্তু সব হারাতে হবে। 

সোমবারের সিএএ নিয়ে ঘোষণার আগেই অবশ্য নবান্ন থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ২০২০ সালে আইনটা পাশ হয়েছিল। তারপর চার বছর কেটে গেছে। নির্বাচন ঘোষণার আর ২-৩ দিন বাকি আছে। তার আগে এটা করা মানে একটা রাজনৈতিক পদক্ষেপ। মমতা বলেন, ”যদি ক্যা দেখিয়ে এনআরসি নিয়ে এসে কারও নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় তাহলে আমরা কঠোর প্রতিবাদ করব। কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে, এই চালাকি আমরা মানব না।” 

বিজেপি শিখ দেখলে বলে খলিস্তানি, মুসলিম দেখলে বলে পাকিস্তানি আর বাঙালি দেখলে বলে বাংলাদেশি! হাবড়ার সভা থেকে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি বাঙালিদের সহ্য করতে পারে না।’’

এনআরসি প্রসঙ্গ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আসামে যখন এনআরসি হয়েছিল, তখন ১৯ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়েছিল, তার মধ্যে বাঙালি হিন্দুরাও ছিল। সেখানে ডিটেনশন ক্যাম্প করে তাঁদের রাখা হয়েছিল। এই রাজ্যে কোনওভাবেই ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ গোটা দেশ জুড়ে সিএএ কার্যকর করল কেন্দ্রীয় সরকার। এই আইন নিয়ে আজকে হাবড়ার সভা থেকেও বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। পুরো আইনের বিজ্ঞপ্তি পড়ে তারপর এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত মতামত দেওয়ার ব্যাপারে মতামত দিয়েছিলেন তিনি। সেইমতো, এদিনের সভা থেকে এই আইনের চরম বিরোধিতা করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here