অর্পিতা বনিক ,দেশের সময়:

বনগাঁ – শিয়ালদা লোকাল ট্রেনে হকারির ফাঁকে একটু সময় পেলেই খাতা পেন নিয়ে ছন্দ মিলিয়ে লিখতে বসে পড়েন শ্যামল । শ্যামল বাবুর এই বিশেষ প্রতিভা চোখে পড়ে যায় ট্রেনের যাত্রী স্কুলের দিদিমণিদের। তাঁরাই শ্যামলবাবুকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগান। এই বছর বইমেলায় তাঁর কবিতার বই ভালোই সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আগামী বছর আরও বেশি কবিতা নয়ে বই প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন শ্যামল বাবু ।

বনগাঁ – শিয়ালদহ শাখার লোকাল ট্রেন যাত্রীরা অনেকেরই পরিচিত মুখ এই ব্যক্তি। কখনও ঝুড়ি ভর্তি লেবু বা কখনও আপেল, আবার কখনও বা মহিলা মেয়েদের শাড়ি, চুড়িদার কিংবা অন্য কোনও পোশাক বিক্রি করেই চলে তাঁর সংসার।

উত্তর ২৪পরগনার দেগঙ্গার আমুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা শ্যামল দাঁ হকারির পাশাপাশি এবার নজর কেড়েছেন তাঁর অনবদ্য প্রতিভায়। পেশায় একজন হকার হলেও, তাঁর আসল নেশা কবিতা লেখা। ইতিমধ্যেই তার লেখা ২৪টি কবিতার একটি সংকলন ‘খালের খেয়া’ এবারের কলকাতা বইমেলায় ভালো সারা ফেলে বলে জানা গেছে। আগামী বছর ১০০ টি কবিতা নিয়ে বই প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে শ্যামল দাঁ-র।

শ্যামলের কথায় , অষ্টম শ্রেণিতে শুরু কবিতা লেখা
ট্রেনে হকারির ফাঁকে অবসর সময় পেলেই খাতা পেন নিয়ে ছন্দ মিলিয়ে লিখে ফেলেন কবিতা। আর তার এই বিশেষ গুন চোখে পড়ে নিত্যদিন ট্রেনে যাতায়াত করা স্কুলের দিদিমণিদের। আর সেখান থেকেই শ্যামলকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগান তাঁরা। শ্যামল বাবু ছোটবেলা থেকেই চরম অভাবের সংসারে বড় হয়ে উঠেছেন। কথা বলে জানা যায়, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়, অভাবের সংসারে জোটেনি পুজোর জামা কাপড়ও। নিজের কষ্টকে চেপে রেখেই সেই প্রথম কবিতা লেখেন, যার নাম ‘দুখির পুজো’। মাধ্যমিক পাশ করার পর অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় শ্যামলের। সংসারের হাল ধরতে দোকানে কাজ করা থেকে হকারি, এভাবেই পাল্টে যায় জীবন।

এবারের বইমেলায় ভালোই বিকিয়েছে বই
তবে কবিতা লেখার নেশা ছাড়তে পারেননি তিনি। চলার পথে এসেছে বহু বাধা, প্রতিকূলতা। কিন্তু তারপরেও ট্রেনে হকারির মাঝেই ছন্দ মিলিয়ে লেখা কবিতার বুলি আওড়ে নিত্যযাত্রী স্কুলের দিদিমণিদের কাছে স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছেন শ্যামল। রাখি পূর্ণিমায় দিদিমণিরা শ্যামলকে পরিয়েছিলেন রাখি। বিনিময়ে উপহারে হিসেবে শ্যামল তাঁদের তুলে দেন ‘আনন্দ অশ্রু’ কবিতা।

এখানেই শেষ নয়, ঠাকুরনগর দত্তপুকুর, গুমা সহ বিভিন্ন স্টেশনের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়েও কবিতা লেখেন এই হকার কবি। তাঁর এই সৃষ্টির কবিতার সংকলন নিয়েই ‘খালের খেয়া’ নামে একটি বই এবারের কলকাতা বইমেলায় বেশ ভালই বিক্রি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এখন বনগাঁ – শিয়ালদা শাখার অনেকেই তাকে ‘হকার কবি’ বলেই ডাকেন। আর তাতে রীতিমতো খুশি অভাবী কবি শ্যামল দাঁ। আর তাঁর কবিতা ছন্দে সফরটাও বেশ ভালোই কাটে নিত্যযাত্রীদেরও।

এক নিত্যযাত্রী স্কুল শিক্ষিকা তনুশ্রী চক্রবর্তী বলেন শ্যামলে কবিতার লাইনগুলোতে চোখ রাখতেই এক নিমেষেই পেরিয়ে যায় বনগাঁ – শিয়ালদহের তিন ঘন্টার যাত্রাপথ । সময়টা ভাল কাটে সঙ্গে মনটাও ভাল হয়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here