দেশের সময় , কলকাতা : সময় যত গড়াচ্ছে ততই রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে ইডির হাতে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্রমশ বাড়ছে দুর্নীতির টাকার অঙ্কের হিসাব। কিন্তু তদন্তে নেমে এখনও শাহজাহানের নাগাল পাননি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। দ্বিতীয়বার নোটিস দিয়ে তলব করলেও এখনও সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার খোঁজ পেলেনি। তাই শেখ শাহজাহানের বিষয়ে আরও তথ্য জোগাড় করতে চাইছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বুধবার তাঁকে ফের এক প্রস্ত জেরা করতে প্রেসিডেন্সি জেলে পৌঁছে যান তদন্তকারী অফিসাররা।

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রাক্তন মন্ত্রীকে জেরা করেছেন ইডির অফিসাররা। বিশেষ করে এই দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত অপর তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্যকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এদিন বালুকে জেরা করা হয়েছে। যার মধ্যে শাহজাহান প্রসঙ্গও ছিল বলে সূত্রের খবর।

 সূত্র মারফত এও জানা গিয়েছে, এদিন রেশন দুর্নীতিতে শেখ শাহজাহানের ভূমিকা কী ছিল, সন্দেশখালির ওই তৃণমূল নেতা রেশন দুর্নীতির সঙ্গে ঠিক কীভাবে যুক্ত ছিলেন, সেই সব বিষয়েই এদিন বালুকে ইডির অফিসারদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।

শঙ্কর ছাড়া আরও কারোর মাধ্যমে রেশন দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কিনা, সেই বিষয়েই উত্তর খুঁজছে ইডি। ইতিমধ্যে এই নিয়ে কিছু তথ্য মিলেছে বলে ইডি সূত্রের খবর। যার রেশ ধরেই এদিন জেলে গিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডির অফিসাররা জেরা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

আগামী ১২ তারিখ শাহজাহানের আগাম জামিনের মামলার শুনানি রয়েছে। সূত্রের খবর, তার আগে শেখ শাহাজাহানের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাড় করতে চাইছে ইডি। এদিকে বুধবার দ্বিতীয়বারের জন্য ইডির হাজিরা এড়িয়েছেন সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। আইনজীবী মারফত ইডির অফিসে চিঠি পাঠালেও তা ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত গত ৫ জানুয়ারি গভীর রাতে বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান শংকর আঢ্যকে গ্রেফতার করেছে ইডি। এরপর শংকর ও তাঁর পরিজনদের নামে ১৯টি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় সংস্থার সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যার মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। 

এদিকে রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত শঙ্কর আঢ্য অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে! আদালতে দেওয়া একটি চিঠিতে তৃণমূল নেতার অভিযোগ, হেফাজতে তাঁকে হেনস্থা করেছে ইডি। জেরার সময় জোরজবরদস্তি কথা বলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন শঙ্কর।

জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেল সুপার মারফত কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিচারকের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন শঙ্কর। গত শুক্রবার সেই চিঠি আদালতে জমা পড়েছে।

তার পিটিশন নম্বর হল ১৩৪৩/ডব্লউও। চিঠিতে শঙ্কর দাবি করেছেন, ইডি হেফাজতে তাঁকে ভয় দেখানো হয়েছে। জোর করে কিছু কাগজে সই করানো হয়েছে তাঁকে দিয়ে। এর জেরে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে প়়ড়েছেন। এর প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ, চিঠিটি ইডিকেও দিতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে পরবর্তী শুনানিতে।

এ বিষয়ে শঙ্করের আইনজীবী জাকিন হোসেন – এর কথায়, ‘তার মক্কেল চিঠিটা নিজের হাতে লিখে সত্যি ঘটনা বলেছেন। জেলের নিয়ম মেনে সেই কাজ করেছেন উনি। চিঠিতে উনি লিখেছেন, তাঁকে জোর করে বেশ কয়েক জনের নাম বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর জেরার সময় ইডির বিরুদ্ধে হেনস্থা, ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলেছিলেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে চমকানো-ধমকানো, শারীরিক ভাবে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন। তা নিয়ে বিস্তর শোরগোল হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতিতে। কুন্তল চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘‘২১ বছর জেল খাটানোর কথা বলা হচ্ছে। আমার স্ত্রীকে গ্রেফতার করবে বলছে। কিন্তু হাজার অত্যাচারের পরেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কোনও মিথ্যা স্টেটমেন্ট বয়ান নিতে পারেনি।’’ কুন্তলের অভিযোগ, অভিষেকের নাম বলাতে না পেরে তাঁর উপর শারীরিক অত্যাচার করেছেন তদন্তকারীরা। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘এত চেষ্টা করেও যখন আমার কাছ থেকে মিথ্যা কথা বার করতে পারল না, তখন শুরু হল শারীরিক অত্যাচার। আমার পেটের চামড়া বার বার টেনে ধরা হত। রোজ আমার পেটে যন্ত্রণা হয়। সেটা এসএমও জানেন।’’ কুন্তলের চিঠিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের নাম উঠে আসায় তা নিয়ে বিতর্কও হয়। গোটা বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্তও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here