পার্থসারথি সেনগুপ্ত, কলকাতা :সোমবার অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে কেন্দ্র ও বেশ কিছু রাজ্যে সরকারি কর্মী দের অর্ধ দিবস ছুটি ঘোষণায় রাজনীতির কোনো ছোঁয়াচ খুঁজে পাচ্ছেন না হাওড়ার বাসিন্দা রাজ মহম্মদ। পেশায় তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মী। তার মতে, ‘ ভারতীয় হিসাবে আমি মনে করি বাইশ তারিখ যে পার্বণ আসছে, তাতে গোটা দেশের আবেগ জড়িয়ে আছে। এটা ধর্মের বা রাজনীতির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না।’ তার সংযোজন, ‘ ছোট বেলায় স্কুলে মাস্টারমশাইরা রামের গল্প বলতেন। শুনে খুব ভালো লাগত। পরে রামায়ন পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের রাজ্যে তো সরকার কত পালা পার্বণে কত ছুটি দেয়। মানুষের কথা ভেবে সোমবার যদি আধবেলা ছুটি দিতে অসুবিধা কোথায়!” সোমবার অযোধ্যায় রামলালার প্রান প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে কেন্দ্র ও বেশ কিছু রাজ্যে সরকারি কর্মী দের অর্ধ দিবস ছুটি ঘোষণায় রাজনীতির কোনো ছোঁয়াচ খুঁজে পাচ্ছেন না হাওড়ার বাসিন্দা রাজ মহম্মদ। পেশায় তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মী। তার মতে, ‘ ভারতীয় হিসাবে আমি মনে করি বাইশ তারিখ যে পার্বণ আসছে, তাতে গোটা দেশের আবেগ জড়িয়ে আছে। এটা ধর্মের বা রাজনীতির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না।’ তার সংযোজন, ‘ ছোট বেলায় স্কুলে মাস্টারমশাইরা রামের গল্প বলতেন। শুনে খুব ভালো লাগত। পরে রামায়ন পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের রাজ্যে তো সরকার কত পালা পার্বণে কত ছুটি দেয়। মানুষের কথা ভেবে সোমবার যদি আধবেলা ছুটি দিতে অসুবিধা কোথায়!” 

ছাপোষা প্রবীণ মানুষ রাজ মহম্মদ খুব একটা তত্ত্ব কথা বা রাজনীতির প্যাচ্ পয়জারে থাকেন না। তিনি, এক কথায়, মানুষের ভাবাবেগ বা সেনটিমেন্ট কে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু কোনো কোনো মহলে অবশ্য এই ছুটি ঘিরে রাজনীতির দিগ বলয়ে অশনি সংকেতের আভাস পাচ্ছেন কেউ কেউ। উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রের মিনিস্ট্রি অফ পার্সোনেল, পাবলিক গ্রিভেন্সস অ্যান্ড পেনসনস এর তরফে সোমবার দেশ জুড়ে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে উদযাপনের বাতা বরনে কেন্দ্রীয় সমস্ত অফিসে সরকারি ভাবে আধ বেলা অর্থাৎ দুপুর আড়াটা পর্যন্ত ছুটি ঘোষনা করেছে। আর বি আইয়ের নির্দেশে ছুটি মিলছে উত্তর প্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন ব্যাংকেও। 

পশ্চিম বঙ্গে বিজেপি সমর্থিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য সভাপতি দেবাশীষ সিল মুখ্য সচিব বি পি গোপালিকাকে একটি চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছেন, যে পশ্চিম বঙ্গেও যেন কাল রাজ্য সরকারি অফিসগুলিতে প্রথমার্ধে ছুটি ঘোষণা করা হয়। তিনি সেই চিঠিতে লিখেছেন, ” অযোধ্যায় সোমবার রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা ঘিরে সারা দেশের মানুষের মধ্যে প্রবল উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে। রাজ্য সরকারও সেই আবেগকে সম্মান জানাক।” তৃণমূল সমর্থিত রাজ্য সরকারি পরিষদের বরিষ্ট নেতা মনোজ চক্রবর্তীর মতে, ‘ ছুটি হবে কি হবে না, তা সম্পূর্ণ ভাবেই সরকারের সিদ্ধান্ত। তবে এখন তো দুর্গা পূজা, কালি পূজা, ঈদ, বড় দিন, খৃষ্ট মাস , বুধ্য পূর্ণিমার মত পুরনো ছুটির তালিকায় করম পূজো ছটের ছুটিও সংযোজিত হয়েছে। ফলে সোমবার রাজ্য সরকারি অফিসগুলিতে আধ বেলা ছুটির মত ছাড়টা দেওয়াই যেতে পারে।’ এই প্রসঙ্গে তিনি একটি মোক্ষম উদাহরণও দিয়েছেন। খানিক হালকা সুরেই তিনি বললেন, ” ব্রিটিশ আমলে খোদ সাহেবি কোম্পানিগুলিতে আম বারুণী উপলক্ষে বাবু মানে কেরানি কুলের আধ বেলা ছুটি মিলত। যাতে তারা সেই পূণ্য দিনে গঙ্গা স্নান করে দুপুর দুপুর অফিস যেতে পারেন। ‘

সাহিত্যিক আবুল বাশার মনে করেন, হিন্দু ধর্মের মূল তত্ব হল সদাচার। রামকে ঘিরে যদি সদাচারের বাতাবরণ তৈরি হয়, দেশের সব মানুষের সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় ও আত্মিক যোগ সূত্র স্থাপিত হয়, যদি এই ছুটি দিতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। তার কথায়, ” এটা আলাদা করে কোনো ধর্মের বিষয় নয়। রাম তো এই দেশের মানুষের হৃদয় জুড়ে আছেন। রামকে নিয়ে আবেগ এক অর্থে ট্র্যাডিশন বা ধারাবাহিকতার অঙ্গ।” তবে রামকে সামনে রেখে প্রতিবেশীর সাথে বিভেদের বিষ বৃক্ষ বপন বা হিংসার বাতাবরণ তৈরি করা ন্যায় সম্মত নয়। ‘ ফুল বউ এর মত ধ্রুপদী উপন্যাসের লেখকের সাফ কথা, ” রামকে সদচারের প্রতীক হিসাবে মেনে নিয়ে সোমবার সরকার যদি আধবেল ছুটি দেয়, তবে আমি আপত্তির কিছু দেখি না। নামাজের শব্দে সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর আমি দিনের প্রথম যে কাজটি করি, তা হল ছাদে গিয়ে সূর্যকে প্রণাম করা। সূর্যের মত যা আমাদের বাঁচার শক্তি দেয়, তা সকলি আমাদের কাছে প্রণম্য।” 

সিপিএম সমর্থিত কর্মচারী সংঘটন রাজ্য কো অর্দিনেশন কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিত গুপ্ত চৌধুরী অবশ্য এই ধরনের ছুটির চরম বিরোধী। তিনি বলেন, ” আমাদের সংবিধানে ধর্মকে রাষ্ট্র তন্ত্রের সঙ্গে মেলানোর কথা কখনই বলা হয় না। ফলে কোনো রাজ্যে মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য ছুটি সংবিধান বিরোধী।” শাস্ত্রবিদ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুরির কটাক্ষ, ” আসলে ছুটি দেওয়া বা না দেওয়া, সব কিছুই কিন্ত ভোটের দিকে নজর রেখেই। শাসন তন্ত্র সব সময়ই লোকাল সেন্টিমেন্টকে মাথায় রেখে চলে। যেমন, উপনৈবেশীক আমলে সেই সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিয়েই সাহেবরা তাদের শাসন যন্ত্রের স্বার্থে আম বারুণী তে আধ বেলা ছুটি দিত। শাসন তন্ত্রের স্বার্থেই। ” 

এই ব্যাপারে প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তারা কি ভাবছেন? মন্ত্রী মানস ভূইয়ার এক কথা, ” এটা সামগ্রিক ভাবে সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।” গোপালীকার মতে, ” কোনো কিছু সিধান্ত হয় নি। হলে জানতে পারবেন ।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here