সৃজিতা শীল , কলকাতা :

বাঙালির সুপ্রাচীন ইতিহাস, পুজোর নেশা, আর ঐতিহ্যের প্রতি টান বারে বারেই সকলকেই টেনে নিয়ে যায়, কলকাতার এক এক বনেদি বাড়িতে।

১৬৬ বছর ধরে রীতি মেনে পুজো করে আসছে বদনচন্দ্র রায়ের বাড়ি । দেখুন ভিডিও

পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যময় বেশ কিছু পুরনো দুর্গা পুজোর মধ্যে বদনচন্দ্র রায়ের পুজো অন্যতম।

এই পুজোর এ বার ১৬৬ বছর। বদনচন্দ্র রায়ের বাবা মদনমোহন রায় প্রায় ২৫ বছর এই পুজো করেছেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ে কিছু সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বেশ কয়েক বছর এই পুজো স্থানান্তরিত হয়েছিল জোঁড়াসাকোর অনন্ত রায়ের বাড়িতে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এই পুজো আবার কলেজ স্ট্রিটের রায় বাড়িতেই ফিরে যায়।

সেই থেকে এখনও পশুপতি রায় এবং দিলীপ কুমার রায়ের উদ্যোগে এবং পরিবারের অন্য সকলের সহযোগিতায় এই ধারা বজায় রয়েছে। এ বছর পুজোর মাধ্যমে স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করতে চলেছে রায় পরিবার।

পুজোর প্রধান আকর্ষণ প্রতিমা। উচ্চতায় প্রায় ১০ ফুট। প্রতিমার সমস্ত গয়না সোনার এবং অস্ত্র রুপো দিয়ে তৈরি।

বদনচন্দ্র রায় ঠিক যেমন বাঙালি ছাঁচে দেবী প্রতিমা তৈরি করিয়েছিলেন, আজও তার অন্যথা হয় না। রায় পরিবারের ঠাকুরদালানেই এই প্রতিমা নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হয়।


উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে রায় পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের আগমনে এই পুজো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। পরিবারের জ্ঞাতির মধ্যে অন্যতম বেহালা নিবাসী সঞ্জীব রায়, যিনি সম্পর্কে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্বশুরমশাই।

এই পুজোর আরও একটি বিশেষ আকর্ষণ বিসর্জন পর্ব। অতীত রীতি অনুযায়ী এ বাড়িতে প্রতিমাকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে।


ইদানিং কুলিদের আধিক্য এবং কলকাতা শহর জুড়ে বৈদ্যুতিক তার ঝুলে থাকার কারণে প্রথার পরিবর্তন ঘটেছে।

এ বাড়িতে পুজো উপলক্ষে আগে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, পঙ্কজ মল্লিক-সহ বহু বিশিষ্ট শিল্পীর গানে মুখরিত হয়ে উঠত পুজো প্রাঙ্গণ।

১৯৩৮ সালের এক নথি থেকে জানা যায় সেই সময়ে দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন ধরে সকাল-বিকেল দু’বেলা এই বাড়িতে ৫০০ থেকে ১০০০ জনের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন থাকত। সেই প্রথা মেনে আজও রায় পরিবার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে বহু সাধারণ মানুষের জন্য ভোগের আয়োজন করে থাকেন।

এ বাড়িতে প্রতিদিনই ঠাকুরের ভোগ হিসেবে খাস্তা কচুরি, মিষ্টি, ফল ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় রায় পরিবারে চার মণ চাল, এক মণ চিনি, ১০৮টি ডাব এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক দেওয়া হয়। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের পরে বাড়ির সকল জ্ঞাতি এবং আত্মীয়-স্বজনেরা একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেন।
এবছরে UNESCO থেকে দুটি বনেদি বাড়িকে নির্বাচন করা হয়েছে , ১. দাঁ বাড়ি ২. কলুটোলা রায় বাড়ি।
এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য।

সেই শুরুর দিন থেকেই একই রীতি মেনে চলছে এই পুজো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here