দেশের সময় ওয়েবডেস্ক:  গত ৫২ দিন ধরে নিখোঁজ শেখ শাহজাহান। হন্যে হয়ে খুঁজেও সন্দেশখালির দাপুটে নেতার খোঁজ মিলছে না। শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক সন্দেশখালিতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে বলেছিলেন, শাহজাহানকে ধরার দায়িত্ব ইডির। আদালত নির্দেশ দিলে ১০ দিনে পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করবে। এবার সরাসরি শাহজাহানের গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে আদালতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শাহজাহানকে কেউ যদি গার্ড করে থাকে তাহলে তা আদালত। হাইকোর্ট হাত-পা বেঁধে দিলে পুলিশ কী করবে?”

সন্দেশখালি কাণ্ডে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। গ্রামবাসীরা গত কয়েকদিনে লাগাতার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই শাহজাহান এখনও অধরা। বিরোধীরা সুর চড়াচ্ছে, কেউ কেউ বলছেন রাজ্যের শাসক দল আড়াল করছে শাহজাহানকে। বুধবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, পার্থ চ্যাটার্জি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকে রেয়াত করেনি তৃণমূল, শেখ শাহজাহান কে? উল্টে অভিষেক বললেন এবং বোঝালেন কোন উপায়ে শাহজাহান ইস্যুতে আদালত হাত বেঁধে রেখেছে রাজ্য পুলিশের, প্রশাসনের। বললেন যদি এই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই হয়, তাহলে করা হোক আদালতের কাছে। 

তৃণমূল সাংসদ বলেন, “হাইকোর্ট যদি রাজ্য প্রশাসনের হাত বেঁধে দেয়, তাহলে গ্রেপ্তার করবেন কীভাবে?” গত কয়েকদিনে সন্দেশখালি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একের পর এক। এদিন অভিষেক ৫জানুয়ারির ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ৫ জানুয়ারি যে ঘটনা ঘটে, ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলা চালানো হয় বলে যে অভিযোগ হয়েছিল এবং তাঁরাই এফআইআর করেছিলেন, তাতে কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর বেঞ্চ অর্ডার দিয়েছিল, এসআইটি তৈরি হবে। তাতে থাকবেন রাজ্য পুলিশের কর্তা এবং এক সিবিআই

প্রতিনিধি, এসআইটি তদন্ত করবে সবদেশখালির ঘটনা। ১০-১২ দিন পর ইডি আবেদন করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে অ্যাপিল করে স্টে চায়। তা মঞ্জুর হয়। অভিষেক বলেন, “স্টে অর্থাৎ তদন্ত হবে না, কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, কাউকে নোটিশ পাঠিয়ে ডাকা যাবে না।” বলেন, এটা হাইকোর্টের বিচারপতি করেছেন এটি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়। এর শুনানি রয়েছে আগামী ৬ মার্চ। অভিষেক এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “বিচারব্যবস্থা রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের হাত পা বেঁধে দিল পুলিশ গ্রেপ্তার করবে কীভাবে?” রাজ্য পুলিশ এবং ইডি দুপক্ষের এফআইআর স্টে হয়েছে বলে জানান অভিষেক।

গত কয়কেদিনে বিরোধীরা শাহজাহান ইস্যুতে একাধিকবার সুর চড়িয়েছে, অভিযোগ উঠেছে শাসক দল আড়াল করছে তাকে। এদিন অভিষেক বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস এমন একটা দল, যে পার্থ চ্যাটার্জি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে রেয়াত করে নি, শেখ শাহজাহান কে?” বলেন, যত বড় নেতাই হোক না কেন, মানুষের সঙ্গে অন্যায় হলে, রেয়াত নয় কাউকে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এবং রাজ্য পুলিশ প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। দিনের পর দিনের অন্যায়ের পরও, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা কেন মুখ খোলেননি, সেই প্রশ্নও করেন অভিষেক।

অন্য রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গও তুলে আনেন অভিষেক। অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তম সর্দার, শিবু হাজরার গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তুলে আনেন সুদীপ্ত সেনের গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গ। সাফ জানান, শেখ শাহজাহানকে যদি কেউ আড়াল করে সেটা বিচারব্যবস্থা, তৃণমূল কংগ্রেস নয়।

দিল্লি থেকে বসে কয়েকজন বাংলায় অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অভিষেক। বলেন, কেউ বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে, বিভাজন তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠবে, মানুষ তার জবাব দেবে। পরিস্থিতি ঠিক হলে রাজ্যের শাসক দল সন্দেশখালিতে সভা করবে বলে জানান অভিষেক।

সন্দেশখালি ‘ত্রয়ী’র দুই অভিযুক্ত ধরা পড়ে গেলেও এখনও অধরা শাহজাহান। দীর্ঘদিন ধরে হয়ে চলা অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্দেশখালির বেশ কয়েকটি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সেই যুক্তি দেখিয়ে বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীদের সন্দেশখালিতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। রোজই পুলিশের সঙ্গে কোনও না কোনও পক্ষের বচসার ছবি উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু যত বিক্ষোভই হোক, গ্রেফতার হচ্ছে না শেখ শাহজাহান। যার কারণ হিসাবে বিচার ব্যববস্থাকে দায়ী করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যেপাধ্যায়। 

রবিবার মহেশতলায় একটি অনুষ্ঠান থেকে শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি না হওয়া নিয়ে অভিষেক ব্যাখ্যা দেন, ৫ জানুয়ারি শেখ শাহজাহানের বাড়িতে যে হামলার অভিযোগ করেছিল ইডি আধিকারিকরা, সেখানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটই এফআইআর দায়ের করে। ঘটনাটিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর বেঞ্চ সিট গঠনের নির্দেশ দেন। বলা হয়, স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমে থাকবে রাজ্য প্রশাসন, পুলিশ এবং সিবিআই-এর প্রতিনিধি। সকলের তত্ত্বাবধানেই সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে তদন্ত হবে।

সংশ্লিষ্ট রায়ের ১০-১২ দিন পরে ইডি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশের আবেদন করে। সেই আবেদন মঞ্জুর হয়। আর তার জন্যই ঘটনাটির তদন্ত বন্ধ হয়ে যায় বলে দাবি করেন অভিষেক। তাই “হাইকোর্ট পুলিশের হাত পা বেঁধে দিলে পুলিশ কী করবে? গ্রেফতারির জন্য সময় তো দিতে হবে, ইডিকে তো অনেক সময় দেন। এই বৈষম্য কেন?”, প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। 

একইসঙ্গে অভিষেকের মতে, ইতিমধ্যে পুলিশ সন্দেশখালিকাণ্ডে পদক্ষেপ করেছে। এক মহিলার বসিরহাট মহকুমা আদালতে গোপন জবানবন্দির পরই পুলিশ উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরাকে গ্রেফতার করেছে। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে দল ব্যবস্থা নিয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আবার জ্যোতিপ্রিয়কে মন্ত্রীসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীর থেকে সুদীপ্ত সেনকে ধরা হয়েছিল”।

তৃণমূল কংগ্রেস শেখ শাহজাহানকে আড়াল করছে বলে লাগাতার অভিযোগ করে চলেছে বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধীরা। এদিন সেই প্রসঙ্গেই মুখ খোলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানিয়েছে তিনি, অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহিলাদের নির্যাতনের ‘বিচার’ হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here