দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পঞ্চায়েত ভোটের আগে মাটি শক্তি করতে ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল।

আজ রবিবার মালবাজারে চা শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সমাবেশে যোগ দিয়েছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধরণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ।

এদিন চা শ্রমিকদের জন্য একাধিক ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি দলের রাজ্য থেকে বুথ নেতাদের একাধিক বার্তাও দিয়েছেন। তিনি বলেন., “রাজ্য নেতা থেকে বুথ নেতারা কেউ যদি ব্যক্তিস্বার্থে দলকে ব্যবহারকে করে তাহলে তার পাশে দল থাকবে না। তবে যারা ইডি সিবিআইযয়ের ভয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।”

রবিবার চা শ্রমিকদের সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক আসার আগে মাদলের তালে কোমর দোলান মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক, বিধায়ক খগেশ্বর রায় ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ, আদিবাসী মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক, শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক সহ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, উত্তরদিনাজপুর জেলার তৃণমূল নেতারা। মালবাজার কলোনির মাঠে সভায় উত্তরের চা বলয়ের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে চলছে এই সমাবেশ।

আর সেখানেই ফের একবার তাঁর মুখে শোনা গেল অখণ্ড বাংলার কথা। আগের মতোই আজও সাফ জানিয়ে দিলেন, উত্তরবঙ্গ কথাটিতে প্রবল আপত্তি রয়েছে তাঁর। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও বলেছিলেন উত্তরবঙ্গ আলাদা নয়, উত্তর-দক্ষিণ সব মিলিয়েই বাংলা।

আজকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফের একই বার্তা দিলেন। মালবাজারের সভা থেকে অভিষেক বলেন,  “উত্তরবঙ্গ কথাটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কোনও উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ নয়, কোচবিহার থেকে দেগঙ্গা-কাকদ্বীপ একটাই বঙ্গ, তার নাম পশ্চিমবঙ্গ। আর কোনও বঙ্গ নয়।” 

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে, গেরুয়া শিবিরের বেশ কিছু নেতারা বারেবারেই পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি তুলেছেন। যেখানে বিজেপি নেতারা বাংলা ভাগ করে পৃথক উত্তরবঙ্গের কথা বলছেন, সেখানে অভিষেক উত্তরে দাঁড়িয়েই বারবার অখন্ড বাংলার পক্ষে সুর চড়িয়েছেন।

রাজনৈতিক মহলের মতে, যেখানে একপক্ষ অভিযোগ তুলছে উত্তরবঙ্গ অবহেলিত বলে, সেখানে অভিষেকের অখণ্ড বাংলার পক্ষে সুর চড়ানো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

জলপাইগুড়ির সভা থেকে চা শ্রমিকদের বার্তা দেন একগুচ্ছ। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারোণ সম্পাদক জানান, “চা শ্রমিকদের পাশে আছে তৃণমূল। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত চা-শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা সোচ্চার হব। শ্রমিকদের স্বার্থে যতদূর যেতে হয় যাব।” একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আজকের এই সভায় তাঁর উপস্থিতি রাজনৈতিক কারণে নয়।

শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ঘোষণা মহিলা চা শ্রমিকরা বাচ্চাদের রেখে কাজে আসতে পারেন না। বাধ্য হয়ে তাদের কোলে–কাঁখে করেই বাগানে আসতে হয়। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৬ মাসের মধ্যে চা শ্রমিকদের শিশুদের জন্য প্রথমে ৫০টি ক্রেশ তৈরি হবে। সেখানে বাচ্চাকে নিরাপদে রেখে কাজে আসতে পারবেন তাঁরা। পরে ক্রেশের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

অভিষেক বলেন, ‘‌দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজে চা ওয়ালা বলে সরকার তৈরি করে ফেলল। কিন্তু চা যারা তৈরি করে তাঁদের কোনও উন্নতি হল না। তাঁদের দিকে কোনও নজর নেই। বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করতে সমস্যা হয়। এর সমাধান হওয়া উচিত। ছ মাসের মধ্যে ৫০ বাচ্চার ক্রেশ তৈরি হবে। কোনও মাকে আর বাচ্চাকে কাঁধে নিয়ে চা তুলতে যেতে হবে না। পরে আরও বাড়ানো হবে। ৩১ মার্চের মধ্যে ৫০টি ক্রেশ তৈরি হবে।’‌


শুধু তাই নয়, অভিষেক আরও জানান, ২০টি প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারও তৈরি হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিষয়টিতে কথা হয়েছে। যেখানে অ্যাম্বুলেন্সও থাকবে। অভিষেকের কথায়, ‘‌দিদি কলকাতায় থাকলেও আপনাদের খবর রাখছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আইডি কার্ড মিলবে।’‌

অভিষেকের মতে, এই মুহূর্তে বিধানসভা, লোকসভা ভোট নেই, দেরি আছে পঞ্চায়েত ভোটেও। আজকের সভায় তিনি গিয়েছেন শুধুমাত্র মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য, তাঁদের কথা জানার জন্য। সময়ের হিসেব দিয়ে বলেন,  আমি ‘বলেছিলাম প্রতি ২ মাসে আসব। শেষ ১২ জুলাই এসেছিলাম। এবার ২ মাস শেষ হওয়ার আগেই এসেছি।’

এদিন একাধিক প্রসঙ্গে গেরুয়া শিবির এবং বামেদের কটাক্ষ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে স্পষ্ট করেছেন বহু চর্চিত তাঁর “নতুন তৃণমূল’ ভাবনার কথা। তিনি জানিয়েছেন নতুন তৃণমূল মানে পুরনো ব্রাত্য এরকমটা নয় একেবারেই। বরং নতুনের সঙ্গে পুরনো মিলে মানুষের জন্য কাজ করবে। 

শুধু তাই নয়, অভিষেক আরও জানান, ২০টি প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারও তৈরি হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিষয়টিতে কথা হয়েছে। যেখানে অ্যাম্বুলেন্সও থাকবে। অভিষেকের কথায়, ‘‌দিদি কলকাতায় থাকলেও আপনাদের খবর রাখছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আইডি কার্ড মিলবে।’‌


সভায় অভিষের আরও বলেন, ‘‌এটা রাজনৈতিক কোন সভা নয়। আজকের সমাবেশ আপনাদের সমস্যার সমাধান করার সমাবেশ। তীর্থের কাকের মত চেয়েছিলেন কেন্দ্র সরকার কি করবে এই আশায় ৷ কিন্তু কিছু হয়নি। ডুয়ার্সের ৭ টি চা বাগান বিজেপির অধিগ্রহণের কথা ছিল কেন্দ্রের। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আপনারা ভোট দিয়েছিলেন। অসম ও পশ্চিমবঙ্গের চা শ্রমিকদের জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এক পয়সাও এখানে আসেনি।’‌

অভিষেক চা শ্রমিকদের বাসস্থানের সমস্যা মেটানোর বিষয়েও বলেন এদিন। তাঁর বক্তব্য, ‘‌৩ লক্ষ ৮২ হাজার চা শ্রমিক যারা বংশানুক্রমিকভাবে বাগানে রয়েছে তাদের যদি পাট্টা দেওয়া যায় সে বিষয়ে আমি সরকারের সঙ্গে কথা বলব। সে বিষয়ে লিজের কি ব্যবস্থা রয়েছে, তা নিয়ে বাগান মালিক ও সরকারের সাথে কথা বলব। পি এইচ ই র পানীয় হল যাতে সঠিকভাবে পৌঁছতে পারে তা নিয়ে প্রয়োজনে সার্ভে করা হবে। পিএফ ,গ্যাচুইটি নিয়ে সব বাগানে আন্দোলন হবে। পি এফ গ্রাচুইটি না দিলে লোকাল থানায় গিয়ে এফআইআর করুন।’‌

রবিরার মালবাজারে চা শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সমাবেশে নতুন তৃণমূল নিয়ে অভিষেকের ব্যাখ্যা নতুন তৃণমূল হবে সেই ফুটবলারদের মতো, যারা বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলবে, কিন্তু ঠাণ্ডা লাগবে না। তাঁর কথায়, ‘‌বৃষ্টিতে ভিজে ১০টা ছেলে ফুটবল খেললে দেখবেন, তিনজনের ঠাণ্ডা লাগে, জ্বর আসে। আবার তিনজনের মাথা ব্যাথা করে। কিন্তু এরকম তিনজনও থাকে সেই দলে, যাদের কিছুই হয়না। আমাদের সবাইকে ওই তিনজনের মতো হতে হবে।’‌

অর্থাৎ অভিষেক বলতে চেয়েছেন, নতুন তৃণমূল সবরকম কলঙ্কমুক্ত থাকবে। কোনও নেতার বিরুদ্ধে যেন অভিযোগ না থাকে। উল্লেখ্য তিনি আগেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা নয়। ঠিকাদারি আর তৃণমূল একসঙ্গে করা যাবে না। এদিন তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, ‘‌মঞ্চে মলয় ঘটক আছেন। ওনার বাড়িতে রেইড হয়েছিল। কী পেয়েছে, ১৪ হাজার টাকা। যাতায়াতের খরচও ওঠেনি।’‌

বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের পার্থক্য বোঝাতে তিনি তৃণমূলকে ডিভিডি বলেন এদিন। তাঁর কথায়, ‘‌তৃণমূল হল হাই–কোয়ালিটির ডিভিডি। যা শোনায়, তাই দেখায়। আর বিজেপি হল ভাঙা অডিও ক্যাসেট। শুধু শোনায়, দেখায় না।’‌

তবে নতুন তৃণমূলের বিষয়ে বলার পাশাপাশি অভিষেকের বক্তব্যে উঠে আসে দলের ওপর ওঠা দুর্নীতির বিষয়ও। বলেন, ‘‌কিছু ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু ভুলের সংশোধন দল করছে কী না। যদি কেউ ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করে, দল তার পাশে দাঁড়াবে না।’‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here