দেশের সময় , কলকাতা: গত কয়েক দিন ধরেই তৃণমূলের তরফে বাংলার মানুষের আধার নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পিছনে বিজেপির চক্রান্তের কথা বলা হয়েছে। সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। জানিয়েছিলেন সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ করবে নবান্ন। যাদের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়েছে তাদের রাজ্য বিকল্প কার্ড দেবে। এই কার্ড দিয়েই সবরকম সুযোগ সুবিধা পাবেন তাঁরা। জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত কয়েকদিনে রাজ্যের নানা প্রান্তে বেশ কিছু মানুষের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ডাকযোগে ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (ইউআইডিএআই) রাঁচির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে চিঠি পেয়েছেন তাঁরা। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের জৌগ্রাম, আবুজহাটি এলাকায় প্রায় ৬০ জনের কাছে চিঠি আসার পরেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। হুগলির কোদালিয়া ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের রবীন্দ্রনগর সুকান্তনগর কৃষ্ণপুর এলাকাতেও অনেকের কাছেই আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়েছে বলে চিঠি এসেছে।

মোগরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকান্ত পল্লী, মাঠপাড়া, ভেরিকুটি, নতুন গ্রাম, জয়পুর, পাম্প কলোনি এলাকার প্রায় সত্তর জনের কাছে চিঠি এসেছে। এই খবর জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে যায় হুগলিতেও। আধার বাতিল হলে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। গ্যাসের সংযোগ, ব্যাঙ্কের লেনদেন, সমস্যা হবে সবেতেই। এ সব ভেবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা।

এই পরিস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করলেন রাজ্যের মানুষকে। তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্র করে রাজ্যের মানুষকে বিপদে ফেলছে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু বাংলার মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতা কারও নেই।

মমতার কথায়, “লোকসভার আগে এমন কী হল যে আধার কার্ড বাতিল করতে হল? ইচ্ছেমতো আধার কার্ড বাতিল করা হচ্ছে। কী পরিকল্পনা কেন্দ্রের?”  তাঁর দাবি, “এখানে ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেব না। রক্ত দেব, তবু এনআরসি করতে দেব না।” 

লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। মমতার কথায়, “এভাবে জোর করে গুন্ডামি করে ভোটে জেতা যায় না।” আধার বাতিলের পেছনে যে দিল্লির হাত রয়েছে সেকথা বোঝাতে গিয়ে এদিন মমতা বলেন, “এখানে আধারের যিনি দায়িত্বে আছেন তাঁকে আমরা ডেকেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, এটা দিল্লি থেকে করা হচ্ছে।” বিষয়টি নিয়ে যে তাঁর সরকার আইনি পথে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেকথা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, “একদিকে যেমন নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে, তেমনি প্রয়োজনে আইনের আশ্রয়ও নেওয়া হবে।” যদিও আধার বাতিল নিয়ে এদিন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, কোনও আধার কার্ড বাতিল করা হয়নি।

সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  ঘোষণা করেন, মঙ্গলবার থেকেই রাজ্য একটি পোর্টাল চালু করছে। যাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে এই পোর্টালে গিয়ে  তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁদের আধার বাতিল হয়েছে তাঁদের আলাদা কার্ড দেবে রাজ্য। ব্যাঙ্ক বা অন্য কাজে কারও কোনও সমস্যা হবে না। মিলবে সরকারি পরিষেবাও।’’

আধার সমস্যা নিয়ে প্রথম থেকেই অস্বস্তিতে ছিল বিজেপি। সোমবার সকালেই দিল্লিতে এ নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে ছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো। বাংলার সংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ছাড়াও ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

সেই বৈঠকের পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে শান্তনু এই সমস্যার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই সবটা হয়েছে।’’ একই সঙ্গে সমাধানের পথও বলে দেন তিনি। তবে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি পরিকল্পনা করেই আধার নিষ্ক্রিয় করেছে। গরিব মতুয়াদের ক্ষেত্রে বেশি হয়েছে। আসলে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের লক্ষ্যেই এ সব করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যে কোনও ভাবেই তা হতে দেব না।’’

রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার অভিযোগ মিলতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবারই সিউড়ির জনসভায় উপস্থিত মুখ্যসচিব বিপি গোপালিককে আধার নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ জানানোর মঞ্চ হিসেবে একটি পোর্টাল তৈরির নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার থেকেই এই পোর্টাল কার্যকর হবে বলে জানালেন মমতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here