দেশের সময় , কলকাতা : একাধিক জনের আধার কার্ড বাতিল হচ্ছে! এই সংক্রান্ত মেসেজ, নোটিস ঘিরে এখন চরম আতঙ্ক-বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি দেখে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সোমবারই নবান্নের তরফে জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসা হচ্ছে এই নিয়ে আলোচনায়। এদিকে আধার-ইস্যুতে সক্রিয় বিজেপিও। নবান্নের তরফে বৈঠকে বসার আগেই বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব কথা বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সঙ্গে। জানিয়ে দিলেন, সমস্যার সমাধানের উপায়ও! বিজেপির রাজ্য সভাপতি আশ্বাস দিলেন, রাতেই মধ্যেই চালু হয়ে যাবে নিষ্ক্রিয় আধারকার্ডগুলো। চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে জানালেন সুকান্ত। পাশাপাশি এও বললেন, মুখ্যমন্ত্রীর পোর্টালে অভিযোগ জানানোর প্রয়োজন নেই। বিজেপি অফিসে অভিযোগ জানান।

আধার কার্ড নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবির পরেই ক্ষত মেরামতে আসরে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।

সোমবার এক এক্সবার্তায় শুভেন্দুর দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব তাঁকে কথা দিয়েছেন যে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষ্ক্রিয় করা সমস্ত আধার কার্ড সক্রিয় করে দেওয়া হবে। শুভেন্দুর আরও দাবি, আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে জানিয়েছেন। তিনি দুজনের সঙ্গেই কথা বলেছেন। অশ্বিনী বৈষ্ণবকে আলাদা করে চিঠিও লিখেছেন।তিনি আরও জানান,  রাঁচির আঞ্চলিক অফিস থেকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল আধার কার্ডগুলো। সেটি প্রযুক্তিগত কোনও সমস্যা হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তারা এবিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানান শুভেন্দু। তিনি জানান, যে কার্ডগুলো UIDAI-এর রাঁচি আঞ্চলিক অফিস থেকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল।


কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর কয়েকদিন আগে দাবি করেছিলেন, ভোটের আগেই চালু হবে সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। আর তা নিয়ে তৃণমূল শিবির এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বিজেপির মতলব নিয়ে সতর্ক করে দিতে থাকেন। কিন্তু, রবিবার সিউড়িতে গিয়ে এক সভায় মমতা মারাত্মক অভিযোগ তুলে বলেন, একাধিক জেলায় অনেকের আধার কার্ডের লিঙ্ক কেটে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষকে রাজ্য সরকারের সুবিধা-বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে। বর্ধমানের জামালপুর সহ বীরভূম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তরবঙ্গেও একাজ চলছে। 

মমতার এই দাবি বা অভিযোগ নিয়ে তুমুল জলঘোলা হতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য বিজেপি চরম অস্বস্তিতে পড়ে। আর তার পরেই এদিন সকালে মলম লাগাতে নেমে পড়েন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এক্সবার্তায় লেখেন, রাঁচির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে যে এরকমটা করা হয়েছে, তা উচ্চপর্যায়ের আধিকারিক এবং মন্ত্রকের কেউ জানতেন না। কাটা ঘায়ের উপর রাজনৈতিক প্রলেপ লাগাতে শুভেন্দু লিখেছেন, ভোটের আগে বিজেপিকে কালিমালিপ্ত করতে কোনও চক্রান্ত করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত হবে।

এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু জাহাজমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। কারণ, মমতার এই ঘোষণার পরেই মতুয়া সমাজের মধ্যে তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি তুলে না ধরলে আধার কার্ড ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে, তা যেন বিজেপির নেতারা জানতেনই না। ওঁরা তো মানতেই চাইছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই আজ শুভেন্দু ঘোষ এবং সুকান্ত মজুমদারের মতো বিজেপি নেতারা আধার নিষ্ক্রিয় করার সত্যতা আক্ষরিক অর্থে মেনে নিয়েছেন। ফলে সহজেই বোঝা যায়, বিজেপির প্রকৃত উদ্দেশ্য কী!

উল্লেখ্য , ধবেশ কিছু দিন ধর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসতে থাকে, আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়েছে। প্রথম বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে বর্ধমানে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয় প্রশাসনও। সিউড়ির সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “চিন্তিত হওয়ার কোনও বিষয় নেই। এরকম হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে।” ১ মার্চ থেকে একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের টাকা দেবে রাজ্য। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়বে। ব্যাঙ্কে লিঙ্ক থাকে আধার কার্ডে নম্বর। আধার কার্ড বাতিল হলে সমস্যা পড়বেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে সোমবার নবান্নের তরফেই মুখ্যসচিব জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here