দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমেরিকার লেগেছিল ২১ দিন। ভারতের মাত্র ১০ দিন। এক লাখের গণ্ডি থেকে ঝাঁপিয়ে করোনা সংক্রমণ ২ লাখের চৌকাঠে পৌঁছে গেল। সংক্রমণের হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকেও বেশি ভারতের। সংক্রমণের নিরিখে এতদিন আমেরিকার পরেই ছিল ব্রাজিল। তৃতীয়ে ভারত। এখন ব্রাজিলকেও ছাপিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে আমাদের দেশ। দৈনিক সংক্রমণ সীমা ছাড়িয়েছে, ভাইরাস সক্রিয় রোগীর সংখ্যা চমকে দেওয়ার মতো, তার ওপরেই বেড়ে চলেছে মৃত্যু। মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগড়, দিল্লিতে করোনায় মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে গেছে। গত বছরের থেকেও ভাইরাসের মহামারী এ বছর সাঙ্ঘাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশবাসীকে নাজেহাল করে দিচ্ছে।

এদিকে বাংলার পরিস্থিতিও দিনদিন শঙ্কা বাড়াচ্ছে। বুধবার নবান্ন জানায়, ওই দিন বাংলায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৪। মঙ্গলবার রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ হাজার ৮১৭ জন, মৃত্যু হয়েছিল ২০ জনের। মাত্র একদিনে সেই সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ হাজার। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্য়া ৩২ হাজার ৬২১ জন। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৩০ হাজার ১১৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৪৫৮ জনের। কমছে রাজ্যের সুস্থতার হারও। এই মুহূর্তে রাজ্যে সুস্থতার হার ৯৩.১৬ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ১ লাখ ৯৯ হাজার। ভাইরাস সংক্রমণে একদিনে মৃত্যু ১০৩৮ জনের। দৈনিক মৃত্যুর এই রেকর্ড ছিল গত বছর অক্টোবরে। তারপর থেকে মৃত্যুর সংখ্যা কমতে থাকে। সংক্রমণের হারও নেমে যায়। এ বছর মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ যেন বাঁধভাঙা বন্যার জলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। আরও আশঙ্কার কথা হল, ভাইরাস সক্রিয় রোগী এক লাফে ১৪ লাখে পৌঁছে গেছে। চলতি বছরের গোড়াতে ভাইরাস সক্রিয় রোগী ২ লাখে নেমে এসেছিল। সেখান থেকে ১৪ লাখের ধাক্কাটা এসেছে মাত্র দু’মাসে। উদ্বেগের কারণ হল, দৈনিক সংক্রমণ যেমন লাখ ছাড়িয়েছে, দৈনিক কোভিড অ্যাকটিভ কেসও লাখ ছাড়িয়েছে। অ্যাকটিভ কেসের হার ১০ শতাংশের বেশি, মাথায় হাত পড়ে গেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের।

দিল্লিতে আজ ১৭ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। হাসপাতাল-নার্সিংহোমে কোভিড বেড নেই। শ্মশানে, কবরস্থানে মৃতদেহ সৎকারের লম্বা লাইন। আক্রান্ত রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না কোথাও। একই দশা ছত্তীসগড় ও মহারাষ্ট্রেও। প্রায় সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা শয্যার অভাব দেখা দিয়েছে। ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সাপোর্ট নেই। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। মহারাষ্ট্রে এখন ১৫ দিনের কার্ফু চলছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপে সরাসরি না বললেও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এর পরেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সম্পূর্ণ লকডাউনের কথা ভাবা যেতে পারে।

দেশে এখন করোনার ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহারাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ সংক্রমণের কারণ এই নয়া স্ট্রেন। পর পর দুবার ভাইরাসের জিনের গঠন বদলে নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেন আরও বেশি ছোঁয়াচে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে। তাই দেশে সংক্রমণের হার এই গতিতে বেড়ে চলেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন তো রয়েছেই, মানুষজনও করোনা বিধি মানছে না। ভোটের প্রচার চলছে, ভিড়-জমায়েতে লাগাম টানা যাচ্ছে না, গণপরিবহনে একই রকম ভিড়। রাস্তাঘাটে মাস্ক পরছেন না অনেকেই, পারস্পরিক দূরত্ব মানার বালাই নেই।

বর্তমানে দেশি স্ট্রেন বা ডাবল মিউট্যান্ট চিকিৎসকদের মাথাব্যথার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেন এবং ব্রাজিল স্ট্রেনের হাইব্রিড। জানা গিয়েছে, ওই স্ট্রেন ১৫ রকম কায়দায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এদিকে সার্বিকভাবে প্রায় ৫ হাজার মিউটেশন ঘটিয়েছে করোনা। ফলত পরিস্থিতি যে ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে তা বলাই বাহুল্য।এমন চলতে থাকলে সেদিন আর দূরে নেই যেদিন বিশ্বের সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত দেশের শিরোপা ভারতের কপালেই উঠবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here