দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হুসেনের উপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা রিমোটের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন এসএসকেএম হাসপাতালে জাকিরকে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। তারপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে রিমোটে করে এই ব্লাস্টটা করানো হয়েছে। স্টেশনে যখন হাঁটছিল তখন এই ব্লাস্টটা করে দেওয়া হয়েছে।

একজন মন্ত্রীর উপর সন্ধে রাতে বোমাবাজি চলছে এই ঘটনায় গতকাল থেকে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি এক যোগে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রেল স্টেশনে ঘটনাটা ঘটেছে। রেল স্টেশনের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব রাজ্যের নয়। রাজ্য পুলিশকে ডাকলে তবে তারা এফআইআর করতে পারে।” সেইসঙ্গে রেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি না এত বড় ঘটনার পরে রেল কী করে এটাকে এত ক্যাজুয়ালি নিচ্ছে।”

এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন সব মিলিয়ে জখম হয়েছেন ২৬ জন। কয়েকজনের আঘাত অল্প। তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গুরুতর জখমদের মধ্যে আরও কয়েকজনকে মুর্শিদাবাদ থেকে আজ কলকাতায় আনা হচ্ছে। গুরুতর জখমদের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাঁদের আঘাত কম তাঁদের এক লক্ষ টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, “জাকির একজন শিল্পপতি। ওর বিড়ি কারখানা রয়েছে। অনেকে সেখানে কাজ করেন। বেশ কিছুদিন ধরে ওকে কেউ কেউ বলছিল এদিকে চলে এসো। কিন্তু ও কেন যাবে? ও একটা কমিটেড ছেলে। ওর লক্ষ লক্ষ সাপোর্টার রয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল কেবল একটি টুইট করেছেন দুঃখপ্রকাশ করে। মমতার কথায়, “এই ভয়াবহতা দেখে আমি শিউরে উঠছি। উনি টুইট করে ক্ষান্ত হয়ে গেলেন? উনি জানেন, মানুষের হাত-পা উড়ে গেছে? তিনটে সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো হচ্ছে বলে জানান মমতা। তাঁর কথায়, “আমরা একজনের উপর ছাড়িনি। সিআইডি, সিআইএফ, এসটিএফ সত্য অনুসন্ধান করছে। খুব তাড়াতাড়িই সবটা সামনে আসবে।”

গত কালের বিস্ফোরণে মন্ত্রী জাকিরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন মমতা। এদিন সকালে মন্ত্রীর রক্তচাপ অনেকটা নেমে গিয়েছিল। কয়েকজনের হত পা উড়ে গেছে। তাঁদের জন্য কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু করল সিআইডি। মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশন চত্বরে যেখানে মন্ত্রীর ওপরে বোমা ছোড়া হয়, সেখানে গিয়ে বিস্ফোরণস্থল খতিয়ে দেখছেন সিআইডির অফিসাররা। কলকাতা থেকে গেছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দলও। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন তাঁরা। এদিকে গতকাল রাতেই, বোমা হামলায় আহত মন্ত্রীকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁর হাতে ও পায়ে একাধিক ক্ষত রয়েছে। বাঁ পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত বোমার স্প্লিন্টার ঢুকে রয়েছে।

আরও ৪ জনকে আনা হয়েছে এসএসকেএম-এ। গোটা পরিস্থিতির তদারকি করছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দেখা করে গিয়েছেন ত্বহা সিদ্দিকীও। বুধবার রাতে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় আসছিলেন জাকির। নিমতিতা স্টেশন থেকে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ধরে কলকাতায় ফেরার কথা ছিল তাঁর। সেই সময় স্টেশন চত্বরে আচমকাই বিস্ফোরণ হয়। জানা গেছে, মন্ত্রীর ঠিক সামনেই বোমা ফাটে। জখম হন জাকির ও তাঁর কয়েকজন অনুগামী। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

আজ এসএসকেএম হাসপাতালে মন্ত্রীর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা আছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জাকিরের হাতে ও পায়ে বোমার আঘাতের ক্ষত রয়েছে। গোড়ালির হাড় ভেঙেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বোমার আঘাতে হাতের আঙুলেও মারাত্মক চোট রয়েছে। একটি আঙুলের প্রায় অর্ধেকটা উড়ে গেছে। পায়ে বোমার স্প্লিন্টারও বিঁধে রয়েছে। অস্ত্রোপচার করে সেগুলি বের করা হবে। অর্থোপেডিক সার্জন, কার্ডিওলজিস্ট, প্লাস্টিক সার্জনদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল টিম তৈরি হয়েছে।


ওদিকে, বিস্ফোরণস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। গতকাল রাতে কীভাবে স্টেশন চত্বরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলছেন অফিসাররা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জঙ্গিপুর পুলিশও। স্টেশনে বিস্ফোরক কোথা থেকে এল, ব্যাগে করে বোমা রাখা হয়েছিল কিনা তার পরীক্ষা করা হচ্ছে। কারণ সেদিন স্টেশনে মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা একজন স্থানীয় বাসিন্দা পুলিশকে বলেছেন, স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে একটি ব্যাগ রাখা ছিল। সেই ব্যাগ সরাতে গিয়েই নাকি বিস্ফোরণ হয়। সেই জায়গায় বিস্ফোরণের অসংখ্য চিহ্ন ছড়িয়ে আছে। সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন তদন্তকারীরা। বোমা রাখা ছিল নাকি বোমা ছোড়া হয়েছিল সেটাও জানার চেষ্টা করা হবে। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। কী ধরনের বোমা ছিল তা জানার চেষ্টা করা হবে।

পুলিশ সূত্রে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়, জাকিরের উপর হামলা হয়েছে। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের একটি অংশ ভিন্ন কথা বলছেন। যার জেরে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ফলে বিস্ফোরণ কাণ্ডে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ও তদন্তকারীদের কাছে গুরুত্ব পূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে।স্টেশনে ব্যাগের মধ্যে বোমা মজুত করে রাখা ছিল কিনা, সেই দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মে বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। বিষয়টি নিয়ে পৃথক ভাবে তদন্ত শুরু করেছে রেল-ও।

বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে রঘুনাথগঞ্জের ওমরপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন জাকির হোসেনের অনুগামীরা। ঘটনার জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here