দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দিল্লিতে লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রও সেই পথে হাঁটার কথা ভাবছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট জানালেন, লকডাউন এখন কোনও বিকল্প নয়। মানুষের জীবন ও জীবিকা দুটি বিষয়ের কথাই মাথায় রাখতে হবে। তাঁর কথায়, “লকডাউন থেকে দেশকে বাঁচাতেই হবে।

মঙ্গলবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিট নাগাদ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তুফানের মতো আছড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে।’’ এর পর মোদীর বার্তা, ‘‘দেশকে লকডাউন থেকে বাঁচাতে হবে। রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করব, তারা যেন করোনার বিরুদ্ধে শেষ অস্ত্র হিসাবে লকডাউনকে প্রয়োগ করে।’’ মোদীর আশা, ‘‘অনুশাসন এবং ধৈর্যের মাধ্যমেই আমরা করোনাকে হারাব।’’

রাজ্য সরকারগুলোকে বলব লকডাউনে তারা যেন শেষ তথা অন্তিম বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করেন। বরং অগ্রাধিকার দিতে হবে মাইক্রো কনটেইনমেন্ট জোন তৈরি করে কোভিড মোকাবিলার উপর।”

গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও লকডাউনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে মমতাও বলেছিলেন, “শুধু লকডাউন করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। মানুষের জীবিকার কথাও ভাবতে হবে”। অর্থাৎ লকডাউনের ব্যাপারে মোদী-মমতার ভাবনার ফারাক নেই।

প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “আমরা সকলে যদি কোভিড প্রটোকল মেনে চলি, সহিষ্ণুতা ও সংযম বজায় রাখি, বিনা কারণে বাড়ি থেকে না বেরোই তা লকডাউনের প্রশ্নই নেই। আমি আমার তরুণ বন্ধুদের বলব তাঁরা যেন এই ব্যাপারটা সামাজিক মিশনের মতো গ্রহণ করেন। পরিবারের সদস্যদের পরিজনদের তাঁরা যেন বোঝান যে বিনা কাজে, বিনা প্রয়োজনে কেউ যেন বাড়ির বাইরে না যায়।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যে একেবারে ঝড়ের মতো আছড়ে পড়েছে তা স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দেশের মানুষকে সাহস জুগিয়ে বলেছেন, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অযথা যাতে ভয়ের পরিবেশ তৈরি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তবে হ্যাঁ, মানুষকে আরও সতর্ক আরও সচেতন হতে হবে। রাম নবমী আসছে, রমজান মাস চলছে। রাম নবমীতে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি মেনে সংযম রাখতে হবে। রমজানও সহিষ্ণুতা ও সংযমের কথাই বলে।

প্রধানমন্ত্রীর এদিনের বক্তৃতার মোদ্দা বক্তব্য হল, কোভিড মোকাবিলা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। কেবল কেন্দ্রের সরকারেরও নয়। এখানে রাজ্য সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সমাজের প্রতিটি মানুষের অংশীদারিত্ব রয়েছে। প্রত্যেকে তার নিজের ভাগের কাজটুকু দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতে পারলে এই ঝড়ও কেটে যাবে।

কোভিডের কারণে ইতিমধ্যেই ঘরোয়া অর্থনীতির কঠিন অবস্থা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের বিশ্লেষণ অনুযায়ী অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের শীর্ষ নেতারা বুঝতে পারছেন, ফের লকডাউন করলে অর্থনীতির মাজা আরও ভেঙে যাবে। তাই যেন তেন প্রকারে লকডাউন আটকানোই লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা নেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। দেশের ওয়ার্কফোর্স তথা কর্ম-বাহিনীর কথা মাথায় রেখেই তা করা হয়েছে। যাতে কাজের ক্ষতি না হয়। মানুষের জীবন ও জীবিকা কোনওটাই বিপন্ন না হয়।

কোভিডের প্রথম ঝড়ের মতোই এবারও পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশের মধ্যে ফের ঘরে ফেরার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, যে যেই রাজ্যে রয়েছেন সেখানেই থাকুন। সেখানকার সরকারকে অনুরোধ করব এই শ্রমিকদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করতে। শ্রমিকদের টিকাকরণ করতে পারলে এই সমস্যারও সুষ্ঠু সমাধান করা যাবে।

এদিনের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সুর ছিল লকডাউনের তীব্র বিরোধিতা। কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে নরেন্দ্র মোদীর দাওয়াই, ‘সকলে করোনা বিধি মেনে চলুন। অকারণে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।’ অন্যদিকে, গত বছর লকডাউনের ধাক্কায় চরম দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের। সেই স্মৃতি যাতে না ফেরে তার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাজ্যগুলির কাছে অনুরোধ, আপনারা পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকুন। তাঁরা যেখানে রয়েছেন সেখানেই থাকতে পরামর্শ দিন। সেখানেই তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।’

এদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে মোদী আরও বলেন, ‘গতবার করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল ছিল। মনে করে দেখুন, গতবছর কী অবস্থা ছিল। এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। অনেক কম সময়ে আমরা এর মোকাবিলা করতে পেরেছি। অক্সিজেন সংকট মেটানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে, হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’ মোদীর দাবি, ‘বিশ্বের মধ্যে ভারতেই করোনা টিকা মেলে সবথেকে কম দামে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here