দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একুশের মহাযুদ্ধে এবার নন্দীগ্রামে হাইভোল্টেজ ম্যাচ হতে চলেছে। নন্দীগ্রাম থেকেই লড়তে চান তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী । নন্দীগ্রামে লড়াইয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন শুভেন্দু, এমনটাই দাবি করেছেন বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমজুড়ে প্রার্থী হতে চান বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন রাজীব। 

বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দু’দফার প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বৃহস্পতিবার দফায় দফায় বৈঠক চলেছে নয়াদিল্লিতে। সকালে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক শিবপ্রকাশের বাড়িতে বৈঠকে বসেন দলের রাজ্য নেতারা। তারপর দুপুরে বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার বাড়িতে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা চলে। সন্ধ্যায় ফের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক হবে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে দলের সদর দফতরে।
ওই বৈঠকের শেষে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, শুভেন্দু অধিকারী নিজেই নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছেন। দু’দফার বৈঠকেই সে কথা তিনি জানিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে মাত্র। সন্ধ্যায় পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ার ডোমজুড়ের বিধায়ক ছিলেন। তিনি এদিন জানান, আমিও ডোমজুড়েই প্রার্থী হতে আগ্রহী। তবে ডোমজুড়ে ভোট হবে চতুর্থ দফায়। আপাতত প্রথম দু’দফার ভোটে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তৃণমূলের অনেকে আন্দাজ করছিলেন, শুভেন্দু নন্দীগ্রামে এবং রাজীব ডোমজুড়ে প্রার্থী হতে চাইবেন না। কারণ, এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। তা ছাড়া নন্দীগ্রামে প্রার্থী হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ধারনা ভেঙে দিয়ে শুভেন্দু ও রাজীব নিজ নিজ বিধানসভা কেন্দ্রেই প্রার্থী হতে চাইছেন। বিজেপির ঘরোয়া আলোচনায় দু’জনেই দাবি করেছেন, নন্দীগ্রাম ও ডোমজুড়ে সংখ্যালঘুদেরও বড় অংশ তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন।

রাজ্য রাজনীতির এই দুই তরুণ নেতা তাঁদের নির্বাচন কেন্দ্র নিয়ে বরাবর যত্নশীল ছিলেন বলে সুবিদিত। উৎসবে পার্বণে ইদে মানুষের পাশে থাকা, দরিদ্রদের উপহার দেওয়া, বিপদে আপদে সাহায্য করা—সবই নিয়মিত ভাবে করেছেন তাঁরা। পর্যবেক্ষকদের মতে, হতে পারে এই দুই নেতাই আশা করছেন, এই ভোটে নন্দীগ্রাম ও ডোমজুড়ে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ হবে তাঁদের দিকে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটের একাংশও তাঁরা পাবেন। হয়তো সেই কারণেই তাঁরা আত্মবিশ্বাসী।

এদিকে, নন্দীগ্রামে এবার ভোটে দাঁড়াবেন বলে আগেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেক্ষেত্রে নন্দীগ্রামে এবার মমতা বনাম শুভেন্দু লড়াই হতে পারে। যা একুশের ভোটে বাংলায় অন্যতম বড় চমক বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ।

উল্লেখ্য, গতমাসে নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে কার্যত মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘নন্দীগ্রাম আমার সবথেকে লাকি জায়গা। নন্দীগ্রাম থেকে ২০২১-এ তৃণমূল জিতবে। নন্দীগ্রাম থেকেই শুরু হল তৃণমূলর জেতার পালা। কারও নাম এখনই বলছি না। পরে বলব। ভালো মানুষ দেব, যিনি সত্যিকারের আপনাদের পাশে থেকে কাজ করবেন। আমিই যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয়। ভাবছিলাম। কথার কথা। একটু বললাম। একটু ইচ্ছে হল। একটু আমার মনের জায়গায়। সুব্রত বক্সিকে আমার নাম মনে রাখতে বলব।’

এ প্রসঙ্গে মমতা আরও বলেছিলেন, ‘নন্দীগ্রামে তৃণমূলের নতুন জন্ম হল। বেশি সময় দিতে পারব না। কারণ, ২৯৪ আসনেই আমাকে লড়তে হবে। তবে কাজ করে দেব। ভবানীপুরকেও অবহেলা করব না। ওটাও আমার ভালবাসার জায়গা। ওখানেও ভালো প্রার্থী দেব। ভবানীপুর আমার বড় বোন, নন্দীগ্রাম আমার মেজ বোন। পারলে দুটি কেন্দ্র থেকেই দাঁড়াব। কারণ নন্দীগ্রামে থেকেই আন্দোলন করব। নন্দীগ্রামে আমি দাঁড়াবই। আমার বিবেক একথা বলল। পারলে দুটি কেন্দ্র থেকেই দাঁড়াব।’

মমতাকে পালটা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘নন্দীগ্রামে হাফ লাখের বেশি ভোটে মাননীয়াকে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ প্রাক্তন দলনেত্রীর বিরুদ্ধে শুভেন্দু আরও বলেছিলেন, ‘দিদিমণিকে নন্দীগ্রামেই দাঁড়াতে হবে। এক জায়গাতেই দাঁড়াতে হবে। কার ভরসায় আপনি নন্দীগ্রামে দাঁড়াবেন? ৬২ হাজারের ভরসায়? আর পদ্ম জিতবে ২ লাখ ১৩-র ভরসায়। আমরা লড়তে জানি, জিতবই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারবেন। এখন থেকে প্রাক্তন বিধায়ক, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লেটারহেড তৈরি করে রাখতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here