দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের কেউ আফগানিস্তানে আটকে পড়েছেন কিনা সে নিয়ে খোঁজখবর নিতে গতকালই সমস্ত জেলার জেলাশাসকদের খবর নিতে বলেছিল রাজ্য সরকার। জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের দুশোর বেশি বাসিন্দা আফগানিস্তানের নানা প্রদেশে আটকে পড়েছেন, দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। খুব তাড়াতাড়ি যাতে রাজ্যের বাসিন্দাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী বিদেশ সচিবকে চিঠি লিখেছেন, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, আফগান শরণার্থীদের এদেশে আশ্রয় দেওয়া সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

খবর মিলেছে, দার্জিলিং, তরাই ও ডুয়ার্সের ২০০ জনের বেশি বাসিন্দা এখনও আটকে রয়েছেন আফগানিস্তানে। চিন্তায় রয়েছে পরিবারগুলি। ভারতে নিজেদের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। রাজ্যের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনতে সরকার সবরকম পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আফগানিস্তানে কাজে গিয়ে সেখানে আটকে পরা উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা সুজয় দেবনাথের বাড়িতে ইতি মধ্যে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এক প্রতিনিধিদল। সঙ্গে পুলিশের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তাঁরা সুজয়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বিস্তারিত বিবরণ নেন। আরও কে বা কারা সেখানে আটকে রয়েছেন, সে ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি ক্যাটারিং সংস্থার হয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক হিসেবে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর আফগানিস্থানে যান অশোনগরের এ জি কলোনীর বাসিন্দা সুজয় দেবনাথ। সেখানে আমেরিকার ন্যাটো বাহিনীর জওয়ানদের জন্য খাবার সরবরাহ করার দায়িত্ব ছিল তাঁদের মতো একদল ভারতীয়ের। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাড়িতে ফিরতে আসা হয়ে ওঠে নি সুজয়ের। এবছরের জানুয়ারি মাসে বাড়ি আসার জন্য প্রস্তুতি নিলেও ফের লকডাউন জারি হওয়ায় ফের বাড়ি আসার সমযসূচি বদলে যায় ।

এরইমধ্যে আফগানিস্তানে শুরু হয়েছে তালিবানদের দৌরাত্ম। চারিদিকে এখন সেখানে আতঙ্কের পরিবেশ। এখন সেখানে প্রাণে বেঁচে থাকাটাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। টিভিতে, সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর জানতে পেরে আরও শিউরে উঠছেন সুজয়ের পরিবার। মোবাইলেও এখন কোন ভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনওরকমে মেসেজ আদানপ্রদান চলচ্ছে।

এভাবেই সুজয়ের বাড়ির লোকেরা জানতে পেরেছেন, এই মূহূর্তে সুজয়ের মতো উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আরও অন্তত ৮ জন যুবক, যারা তাঁর মতো ক্যাটারিংয়ের কাজ নিয়ে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে কাবুল বিমান বন্দরের বিশেষ ঘরে আটকে রয়েছেন। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত সেই বিমানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নি বলে জানিয়েছে সুজয়।

এদিকে, অশোকনগরের বাড়িতে আড়াই বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটছে সুজয়ের স্ত্রী সুস্মিতা মন্ডল দেবনাথের। ওই একই বাড়িতে রয়েছেন সুজয়ের বাবা, মা, বোন। তাঁরাও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের এখন একটাই প্রার্থনা, ভারত সরকার কিম্বা পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুজয়কে যেন সুস্থ শরীরে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করে। 

সুজয়ের বিষয়টি জানতে পেরে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের নির্দেশে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ৩ জনের এক প্রতিনিধি দল হাবড়া এবং অশোকনগরের পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সুজয়ের বাড়িতে হাজির হন। সেখানে সুজয়ের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এদিন। সেই সময় আফগানিস্তান থেকে ভিডিও কলে সুজয়ের সঙ্গে কোনওরকমে কথা বলার সুযোগ হয় প্রতিনিধি দলের।

সুজয়ের মাধ্যমে তখনই তাঁরা জানতে পারেন যে, সুজয়ের মতো গোপালনগর, গোবরডাঙা, অশোকনগর, বারাসত সহ এই জেলার আরও ৮ জন সেখানে আটকে পরেছে। তাঁদের বিস্তারিত তথ্য সুজয়কে পাঠাতে বলা হয়। প্রতিনিধি দলের সদস্য মনোজ রায় জানান, ‘সুজয় সহ বাকিদের তথ্য সংগ্রহ করে বনমন্ত্রীর মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে যাতে এই ব্যক্তিদের বাড়িতে ফেরানো সম্ভব হয়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’‌

আফগানিস্তানে কাজে গিয়ে আটকে পড়ল গোপালনগর থানার চার জন। উৎকণ্ঠায় পরিবার

আফগানিস্তানে বিভিন্ন কাজে গিয়ে আটকে পড়েছে বহু ভারতীয়। তারমধ্যে গোপালনগর থানার পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের চার জন রয়েছে।তাদের নাম জয়ন্ত বিশ্বাস, বিদ্যুৎ বিশ্বাস,  পলাশ সরকার ও প্রবীর সরকার।  বাড়ি রাম শংকরপুর। এবং প্রবীর সরকারের বাড়ি রঘুনাথপুর।পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, তারা হোটেলের কাজে আবগানস্থানের কাবুলে গিয়েছিল। দিন কয়েক আগে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবানরা । তারপর থেকেই উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে তাদের পরিবার৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদেরকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন । এই খবর পেয়ে এদিন সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তিদের বাড়িতে যান গোপালনগর থানার পুলিশ আধিকারিক চিন্তামণি নস্কর ও পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিশিত বালা।ভিডিও কলে নিশীত বালা বলেন” জয়ন্ত বিশ্বাসরা জানান কাবুলে ভারতীয় বিমান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তারা আটকে আছে । মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্য প্রশাসনের কাছে গ্রামের ছেলেদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দুর্বিষহ। রাস্তায় রাস্তায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরছে তালিবান বাহিনী। প্রাণভয়ে কাবুল বিমানবন্দরে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। বিমানে ঝুলে পালাবার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। ভিটেমাটি ছেড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়াদের পাহারায় রেখেছে তালিবান।
আফগান-সঙ্কটের এই ছবি ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। সে দেশে আটকে পড়ারা আদৌ দেশে ফিরতে পারবেন কিনা, সে নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় আত্মীয়-পরিজনেরা।

ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান থেকে বায়ুসেনার বিমানে দেশে ফিরেছেন ভারতের ১২০ জন আধিকারিক। জানা গিয়েছে, কর্মসূত্রে আফগানিস্তানে থাকতে পারেন আরও অনেকে। এই কথা ভেবে কেউ আটকে পড়েছেন কিনা, তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও।

যদি এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায় তাহলে তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। গতকালই তাই নবান্ন থেকে জেলাশাসকদের খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নবান্নের তরফে জানানো হয়েছিল, আফগানিস্তানে পশ্চিমবঙ্গের কোনও বাসিন্দা আটকে রয়েছেন কিনা তার খোঁজ পেলে জানাতে হবে। আফগানিস্তানের কোন প্রদেশে বা কোন শহরে তাঁরা আটকে পড়েছেন, দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন তার সমস্ত তথ্য জোগাড় করতে হবে। নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি যা তথ্য পাওয়া যাবে তার সবটাই জানাতে হবে নবান্নকে। সেই মতো উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here