দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কাবুলে আটকে পড়েছে ছেলে। আকুল কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা। অসহায় এ দৃশ্যের সাক্ষী অশোকনগর থানার এজি কলোনি। ওই এলাকার বাসিন্দা সুজয় দেবনাথ ২০১৮ সালে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন কাজের সূত্রে। কাবুলে চাকরি করতেন তিনি।দেখুন ভিডিও

সুজয়ের বিষয়টি জানতে পেরে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের নির্দেশে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ৩ জনের এক প্রতিনিধি দল হাবড়া এবং অশোকনগরের পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সুজয়ের বাড়িতে হাজির হন। সেখানে সুজয়ের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এদিন। সেই সময় আফগানিস্তান থেকে ভিডিও কলে সুজয়ের সঙ্গে কোনওরকমে কথা বলার সুযোগ হয় প্রতিনিধি দলের।

বর্তমানের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সুজয় আটকে রয়েছেন কাবুলে। ফিরতে পারেননি তিনি। সুজয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন পরিবারের সদস্যরা। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ মা, বাবা, সুজয়ের ছোট বোন, স্ত্রী এবং তাঁদের ছোট্ট মেয়ে। সুজয়ের বাড়িতে হাবরা ও অশোকনগর থানার পুলিশ পৌঁছেছে। প্রশাসনিক ভাবে কথা বলা হচ্ছে পরিবারের সঙ্গে। পাসপোর্ট নম্বর থেকে শুরু করে সমস্ত নথির ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে পুলিশের তরফে।

বুধবার বিকালে সুজয়ের বাড়িতে হাবরা ও অশোকনগর থানার পুলিশ পৌঁছেছে। প্রশাসনিক ভাবে কথা বলা হচ্ছে পরিবারের সঙ্গে। পাসপোর্ট নম্বর থেকে শুরু করে সমস্ত নথির ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে পুলিশের তরফে।

সুজয়ের মাধ্যমে তখনই তাঁরা জানতে পারেন যে, সুজয়ের মতো গোপালনগর, গোবরডাঙা, অশোকনগর, বারাসত সহ এই জেলার আরও ৮ জন সেখানে আটকে পরেছে। তাঁদের বিস্তারিত তথ্য সুজয়কে পাঠাতে বলা হয়। প্রতিনিধি দলের সদস্য মনোজ রায় জানান, ‘সুজয় সহ বাকিদের তথ্য সংগ্রহ করে বনমন্ত্রীর মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে যাতে এই ব্যক্তিদের বাড়িতে ফেরানো সম্ভব হয়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’‌

আফগানিস্তানে বিভিন্ন কাজে গিয়ে আটকে পড়েছে বহু ভারতীয়। তারমধ্যে গোপালনগর থানার পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের চার জন রয়েছে।তাদের নাম জয়ন্ত বিশ্বাস, বিদ্যুৎ বিশ্বাস,  পলাশ সরকার ও প্রবীর সরকার।  বাড়ি রাম শংকরপুর। এবং প্রবীর সরকারের বাড়ি রঘুনাথপুর।পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, তারা হোটেলের কাজে আবগানস্থানের কাবুলে গিয়েছিল। দিন কয়েক আগে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবানরা । তারপর থেকেই উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে তাদের পরিবার৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদেরকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন । এই খবর পেয়ে এদিন সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তিদের বাড়িতে যান গোপালনগর থানার পুলিশ আধিকারিক চিন্তামণি নস্কর ও পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিশিত বালা।ভিডিও কলে নিশীত বালা বলেন” জয়ন্ত বিশ্বাসরা জানান কাবুলে ভারতীয় বিমান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তারা আটকে আছে । মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্য প্রশাসনের কাছে গ্রামের ছেলেদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি

গতকালই কাবুলে বাংলার কেউ আটকে আছে কিনা সে ব্যাপারে প্রতিটি জেলার জেলাশাসককে খোঁজ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। তাদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য যেমন, নাম, ফোন নম্বর, কারেন্ট লোকেশন জানতে হবে জেলাশাসকদের। খবর পেলেই নবান্নকে সঙ্গে সঙ্গে তা জানাতে হবে। আফগানিস্তানের কোন প্রদেশে বা কোন শহরে তাঁরা আটকে পড়েছেন, দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন তার সমস্ত তথ্য জোগাড় করতে হবে। নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি যা তথ্য পাওয়া যাবে তার সবটাই জানাতে হবে নবান্নকে। সেই মতো উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। সুজয়ের ক্ষেত্রেও তেমনভাবেই এগোচ্ছে প্রশাসন।

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দুর্বিষহ। রাস্তায় রাস্তায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরছে তালিবান বাহিনী। প্রাণভয়ে কাবুল বিমানবন্দরে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। বিমানে ঝুলে পালাবার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। ভিটেমাটি ছেড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়াদের পাহারায় রেখেছে তালিবান।
আফগান-সঙ্কটের এই ছবি ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। সে দেশে আটকে পড়ারা আদৌ দেশে ফিরতে পারবেন কিনা, সে নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় আত্মীয়-পরিজনেরা।

ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান থেকে বায়ুসেনার বিমানে দেশে ফিরেছেন ভারতের ১২০ জন আধিকারিক। জানা গিয়েছে, কর্মসূত্রে আফগানিস্তানে থাকতে পারেন আরও অনেকে। এই কথা ভেবে কেউ আটকে পড়েছেন কিনা, তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও।

যদি এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায় তাহলে তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। গতকালই তাই নবান্ন থেকে জেলাশাসকদের খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নবান্নের তরফে জানানো হয়েছিল, আফগানিস্তানে পশ্চিমবঙ্গের কোনও বাসিন্দা আটকে রয়েছেন কিনা তার খোঁজ পেলে জানাতে হবে। আফগানিস্তানের কোন প্রদেশে বা কোন শহরে তাঁরা আটকে পড়েছেন, দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন তার সমস্ত তথ্য জোগাড় করতে হবে। নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি যা তথ্য পাওয়া যাবে তার সবটাই জানাতে হবে নবান্নকে। সেই মতো উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here