দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সদ্যই রাজভবন থেকে সাক্ষাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎ ঘিরে তৈরি হয়েছিল চরম রাজনৈতিক জল্পনা। সেই জল্পনা আরও বাড়ল। শনিবারই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে অমিত শাহের হাতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তুলে দেবেন ধনখড়। শুক্রবার রাতেই দিল্লি পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি।

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। গত বুধবার, তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার দিনও তিনি মমতাকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। ঠিক তার পরই মুখ্যমন্ত্রীর রাজভবন যাত্রা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছিল রাজনৈতিক মহল। প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে চলে ওই বৈঠক সম্পর্কে কেউই অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। নবান্ন সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ওই রাজভবন যাত্রাকে নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে দাবি করা হয়েছিল। ঠিক তার তিনদিনের মধ্যেই রাজ্যপালের দিল্লি যাত্রা নতুন জল্পনা তৈরি করছে।

ভোটের আগে এ সব ঘটনা প্রবাহ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা ও অন্দরের কথা জানার আগ্রহ এখন অপরিসীম। তৃণমূলের একাংশ যেমন মনে করছে, ভোটের আগে মন্ত্রিসভায় নতুন দুটি মুখকে আনতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন তা করতে পারেন দিদি, তার সপক্ষে তাঁদের যুক্তিও রয়েছে। তাঁদের মতে, শুভেন্দু অধিকারী ও লক্ষ্ণীরতন শুক্ল মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দুটি শূণ্যপদ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ মন্ত্রিসভায় এখন ৪২ জন সদস্য রয়েছেন।

দলের এক নেতার কথায়, ভোটের আগে নতুন কেউ মন্ত্রী হলে কাজ করার হয়তো সুযোগ পাবেন না। কিন্তু মন্ত্রিসভায় দুই জেলার প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। কেননা এমনিতেই শুভেন্দুরা অভিযোগ করছেন, দক্ষিণ কলকাতাতেই সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত। জেলার সঙ্গে অবিচার হয়েছে।
তবে তাঁদের মতে, যদি মন্ত্রিসভায় শপথ গ্রহণ হয় তবে তা পৌষ সংক্রান্তির পরই হবে। এ ব্যাপারে মেদিনীপুরের রামনগর কেন্দ্রের বিধায়ক অখিলি গিরি ও হাওড়া গ্রামীণে তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়কে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। অখিল গিরি শুভেন্দুর বিরোধী বলে পরিচিত। ১৮ তারিখ নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আয়োজক তিনিই।

প্রশ্ন উঠতে পারে, সে জন্য রাজ্যপালের সঙ্গে কেন দেখা করতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী? তারও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তৃণমূলের এই নেতারা। তাঁদের মতে, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করতে গেলে রাজ্যপালকে আগাম জানাতে হবে। তাঁর কবে সময় হবে সেটাও দেখতে হবে। মজা করে তৃণমূলের এক নেতা বলেন, রাজ্যপাল ইদানীং যে রকম পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন তাতে কবে ওনার কী কর্মসূচি রয়েছে সেটাই চিন্তার।
এমনিতেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা রয়েছে যে একুশের ভোট এ বার এগিয়ে আসতে পারে। ৪ মে সিবিএসই বোর্ডে পরীক্ষা শুরু হবে। সুতরাং সে কথা মাথায় রেখে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধ্বেই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে পারে। ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট রয়েছে। তার পর রাজ্যের ভোট অন অ্যাকাউন্ট দিন সাত-দশের মধ্যে পেশ হয়ে যাবে। তার পরই ভোট ঘোষণা হয়ে যাবে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল নির্বাচন কমিশনের ডেপুটি কমিশনার সুদীপ জৈন ১২ ও ১৩ তারিখ দু’দিনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসার কথা। তার ঠিক আগেই দিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যপাল। অনেকের মতে, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেবেন ধনকড়। এমনিতেই তিনি বলে বেড়াচ্ছেন, বাংলায় অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের পরিস্থিতি নেই। হয়তো দিল্লিকে তিনি বোঝাতে চাইবেন, কেন এমন কথা বলছেন তিনি, অবাধ ভোট করাতে গেলে কী করতে হবে।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন ধনখড়। বৈঠকের পর দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলার পরিস্থিতি ভয়ংকর। সর্বভারতীয় মিডিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বিশদে জানা প্রয়োজন। আমলারা সব রাজনৈতিক নেতাদের মতো আচরণ করছেন এখন। বাংলায় আদৌ সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত। রাজ্যে আল-কায়দার জঙ্গিরা ধরা পড়ছে, অবাধে বোমা তৈরির কারখানার রমরমা কারবার চলছে।’ যদিও রাজ্যপালকে পালটা তৃণমূল বলেছিল, ‘রাজ্যপাল যদি প্রতিদিন এভাবে কথা বলেন তাহলে তাঁর রাজনৈতিক নেতা হতে বাধা কোথায়? রাজ্যপাল বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে একটু উত্তরপ্রদেশ এর দিকে তাকান।’

সংঘাত তারপর আরও বেড়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এখন ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। তা নিয়েও গত বুধবার সরব হন ধনখড়। তমলুকে গিয়ে বলেন, ‘সংবিধানে উল্লেখিত ‘‌‌উই, দ্য পিপল’‌–এর অর্থ হল ভারতমাতার যে কোনও সন্তান গোটা দেশের মধ্যে কোনও জায়গাতেই বহিরাগত নন। এখন পশ্চিমবঙ্গে অন্য রাজ্যের মানুষজন এলে তাঁদের বহিরাগত বলা হচ্ছে। এটা সংবিধানকে অপমান করার সামিল। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।’ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করেন। তারপরই মমতা রাজভবনে যান। সেই বৈঠক নিয়ে জল্পনার মাঝেই এবার ধনখড়ের দিল্লি যাত্রা তা আরও বাড়িয়ে দিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here