দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ অনেক দিন পর সর্বভারতীয় রাজনীতি বুঝি এতটা জমে উঠল। বলিউডের শহরে এ যেন এক মহানাটক। আধ ঘন্টাও আগেও যিনি খলনায়ক, হঠাৎ তাঁর শুভবুদ্ধির উদয় হল!

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কাল আস্থাভোট হওয়ার কথা মহারাষ্ট্র বিধানসভায়। তার আগে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অজিত পাওয়ার শুধু ইস্তফা দিলেন তা নয়, এখন শোনা যাচ্ছে কাকা শরদ পাওয়ারের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। এনসিপি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, শরদ পাওয়ারের পরামর্শেই ইস্তফা দিয়েছেন অজিত। আর এ সবের মধ্যে সেতুবন্ধন ঘটিয়েছেন পাওয়ার কন্যা সুপ্রিয়া সুলের স্বামী সদানন্দ সুলে।

নাটক এখানেই শেষ নয়। যে অজিত পাওয়ারের নাম শুনলেই শিবসেনা নেতারা আজ সকালেও শাপ শাপান্ত করছিলেন, তাঁরাই হঠাৎ নরম হয়ে গিয়েছেন। এমনকি শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, “অজিতদাদা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। অজিত দাদা এনসিপিতেই রয়েছেন”।

এর পর বিজেপি তথা দেবেন্দ্র ফড়নবিশের হাতে আর কী রইল! যে অজিত পাওয়ারের সমর্থন নিয়ে মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন, সেই তিনিই বেমালুম হাওয়া। এর পর আস্থাভোটের আর কোনও অর্থ থাকে?

বস্তুত অজিত পাওয়ার যে চুপিচুপি সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তার একটা ইঙ্গিত মঙ্গলবার সকাল থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। এদিন ২৬/১১ তথা মুম্বই সন্ত্রাসের ঘটনার সরকারি স্মরণসভায় অনুপস্থিত ছিলেন অজিত। তখনও সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণাও করেনি। তার পর দুপুর আড়াইটের সময় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন।

এই অবস্থায় এখন নতুন কৌতূহল জাতীয় রাজনীতিতে কুরে খাচ্ছে। তা হল—মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস সরকারেও কি উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন অজিত পাওয়ার।

এনসিপি-র এক নেতা এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, “পাওয়ার সাহেব (শরদ পাওয়ার) দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি ক্ষমতায় থাকুন বা না থাকুন মহারাষ্ট্রে তিনিই বস। নাকে খত দিয়ে যদি অজিত দাদা ফেরত আসেন তা হলে উপমুখ্যমন্ত্রী হোন না, আপত্তি নেই। মাথায় থাকবেন সাহেবই”।

আস্থাভোটে তাঁর পরাজয় যে তার অনিবার্য গতকাল সন্ধ্যাতেই তিনি বুঝেছিলেন- মুম্বইয়ের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের বলরুমে। যখন শিবসেনা-কংগ্রেস ও এনসিপি মিলে ১৬২ জন বিধায়ককে এক জায়গায় এনে ফেলেছিলেন।

ফলে মুম্বইতে আর মুখ পোড়াতে চাইল না বিজেপি। মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, কাল বুধবারই আস্থাভোট করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ-অজিত পাওয়ার সরকারকে। তার আগে এদিন দুপুরে প্রথমে ইস্তফা দেন অজিত পাওয়ার। তার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করেন দেবেন্দ্র ফড়ণবীশও।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করেন তখনও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র। তার পর তিনি বলেন, মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে জনাদেশ বিজেপির অনুকূলে গিয়েছে। শিবসেনা যত আসনে লড়েছে তার মাত্র ৪৪ শতাংশ আসনে জিতেছে।

বড় কথা হল, মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে ভোটের আগে শিবসেনার সঙ্গে আলোচনাই হয়নি। কোনও শর্তও ছিল না। কিন্তু ফল প্রকাশের পরই দরকষাকষি শুরু করে দেয় শিবসেনা। বিজেপি-র সঙ্গে কথা না বলে এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলতে শুরু করে দেয়। যার মোদ্দা কারণ হল, লোভ। স্রেফ ক্ষমতা ও গদির লোভ।

দেবেন্দ্রর কথায়, বিজেপি-র কাঁধে চেপে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ দখল করতে চেয়েছিল শিবসেনা। কিন্তু বিজেপি সেই অনৈতিক দাবি মানতে না চাওয়ায় ওরা এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে অশুভ আঁতাতেও দ্বিধা করেনি। আর কংগ্রেস-এনসিপি ভাবল এই তো মওকা বিজেপিকে আটকানোর।

ফলে তারাও সেই টোপ লুফে নেয়। রাজনৈতিক মতাদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে গলায় গলায় বন্ধুত্ব শুরু হয়ে যায় তিন জনের। যে শিবসেনা নিজেদের হিন্দুত্ববাদী দল বলে দাবি করে তারা সনিয়া গান্ধীর পায়ে পড়তেও এখন রাজি। গতকালই দেখা গিয়েছে তারা সনিয়ার নামে শপথ নিচ্ছে।

দেবেন্দ্র এও জানান, এদিন সকালে অজিত পাওয়ার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। অজিত দাদা জানান তিনি ইস্তফা দিতে চান। সুতরাং অজিত দাদার ইস্তফার পর আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

তাই এই সাংবাদিক বৈঠকের পরই আমি রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তাঁর সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা পত্র পেশ করে দেব।

দেবেন্দ্র বলেন, আমরা ঠিক করেছি বিরোধী আসনে বসব। গঠনমূলক বিরোধিতা করব ও মানুষের কল্যাণের জন্য লড়াই করব।

যদিও পর্যবেক্ষকদের মতে, দেবেন্দ্রর এর অতিরিক্ত কিছু বলার ছিলও না। এমন নয় যে সবটাই তিনি বা তাঁরা নৈতিকতার সঙ্গে করেছেন। রাতের অন্ধকারে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠন করে ফেলা, সাত সকালে শপথ নেওয়া—এসবের মধ্যেই স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার অভাব ছিল। ইস্তফা দিয়ে আরও অস্বস্তির হাত থেকে রেহাই পেতে চাইলেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here