দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রথম দিন বলেছিলেন, ‘স্পিড ব্রেকার দিদি।’ বুধবার বললেন, ‘স্টিকার দিদি’।

বুধবার ইলামবাজার ও রাণাঘাটের তাহেরপুরে নরেন্দ্র মোদীর সভাকে কালো মাথার সমুদ্দুর বললেন অনেকেই।

মোদী তাঁদের নিরাশ করলেন না। অক্ষয় কুমারের নেওয়া সাক্ষাৎকারে এ দিন সক্কাল সক্কাল তিনি শুনিয়েছিলেন, মমতা দিদি-র সঙ্গে তাঁর মিষ্টি-কথা। এও জানিয়েছিলেন, দিদি বেছে বেছে ওঁকে বছরে দু-তিন খানা কুর্তা পাঠান।

কিন্তু বিকেলে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিকেই ফালা ফালা করে দিতে চাইলেন গেরুয়া শিবিরের সর্বাধিনায়ক। বক্তৃতায় এদিন কখনও মমতাকে হুঁশিয়ার করলেন, কখনও বা খোঁচা দিয়ে বললেন, স্টিকার দিদি!

কেন স্টিকার দিদি বলছেন, তা ব্যাখ্যা করে মোদী এ দিন বলেন, দিল্লি থেকে আমরা প্রকল্পের টাকা পাঠাই। দিদি সেই প্রকল্পের উপর স্টিকার মেরে দেন। এই যেমন গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র টাকা পাঠিয়েছে। বাংলায় ষাট লক্ষ পরিবার তার সুবিধা পেয়েছে। দিদি তাতে স্টিকার মেরেছেন। শুধু তা নয়, এই যে দিদি সস্তায় রেশন দেন, সেই টাকাও কেন্দ্র দেয়। গরিবদের বাড়ি বানানোর জন্য টাকা, তাও কেন্দ্র দিচ্ছে। কিন্তু দিদি শুধু স্টিকার লাগায় আর তার উপর তোলাবাজির ট্যাক্স আদায় করে। কেন্দ্র থেকে গরিবরা বাড়ি বানানোর জন্য যে টাকা পায়, তাতেও তৃণমূলের নেতারা বদমায়েশি করেন।

মোদী এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ করেছিলেন। তবে মমতার দাবি, দিল্লি তাঁকে টুকলি করে। তিনি যে প্রকল্প শুরু করেন, তাই টুকলি করে নেয় মোদী সরকার। তবে বিজেপি-র বক্তব্য, স্টিকার মারতে তৃণমূল ওস্তাদ। আসলে কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় দু’টাকা কেজি চাল প্রকল্পের জন্য দিল্লি ভরতুকি দেয়। সেই প্রকল্প গোড়া থেকেই খাদ্য সাথী নাম দিয়ে রাজ্যের বলে চালায় নবান্ন।

এ দিন স্টিকারের প্রসঙ্গ শেষ করেই মোদী হুঙ্কার দিয়ে বলেন, “বুয়া ভাতিজার খেলা বাংলার মানুষ জেনে গিয়েছে। ওদের বিদায় আসন্ন।” এর পাশাপাশি বাংলায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মমতাকে কিন্তু মান সম্মান দিয়েছিল। কিন্তু মমতা সরকার প্রতিদানে কী দিয়েছে? বাংলার পবিত্র মাটিকে রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছে ওরা। গুণ্ডাদের জন্য মমতা দেখাচ্ছে, আর জনগণের জন্য নির্মমতা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদী আঁচ করতে পারছেন বাংলায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগানোর সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে তাঁর সামনে। কারণ, বাংলায় রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেস ও বামেরা অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মানুষের অসন্তোষ রয়েছে। তাঁরা এমন কাউকে বা দলকে চাইছেন, যিনি বা যে দল এর বিরোধিতা করতে পারে। ফলে মমতাকে রাজনৈতিক আক্রমণে এ দিন আর কোনও আগল রাখতে চাননি প্রধানমন্ত্রী।

তবে মেরুকরণের রাজনীতির রসদও এ দিন ভালমতই ছিল মোদীর বক্তৃতায়। রাণাঘাট বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা। উদ্বাস্তু ও শরণার্থী মানুষের সংখ্যা সেখানে প্রচুর। তাঁদের বার্তা দিতে এ দিন ফের নাগরিকত্ব বিলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মোদী। সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশ নিয়ে তৃণমূল সরকারের তুলোধনা করেন। তাঁর কথায়, ২০০৫ সালে বামেরা যখন বাংলায় ক্ষমতায়, তখন অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করে সংসদে গিয়ে কাঁদতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এখন সেই তিনিই অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য উতলা। মানুষ এই তুষ্টিকরণের রাজনীতিও ধরে ফেলেছে। ২৩ মে-তেই বোঝা যাবে তৃণমূলকে পরিত্যাগ করা শুরু করেছে বাংলার মানুষ।এদিনের জনসভায় মোদীর তীব্র আক্রমণ বিরোধীদের কতটা আঘাত হানবে ,তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৩মে পর্যন্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here