দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আরও একধাপ দূরত্ব বাড়ল মমতা-শুভেন্দুর। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর বনিবনা এখন অলীক কল্পনা। মমতার ডাকা মন্ত্রিসভার বৈঠকে না আসায় সেই জল্পনায় সিলমোহর পড়েছে। তবে কি এবার তৃণমূল ছেড়ে আলাদা পথে শুভেন্দু?

এ যেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে অ্যালেক্স ফার্গুসন আর আর্সেন ওয়েঙ্গারের বক্স টু বক্স ফুটবল!


মঙ্গলবার সকালে নন্দীগ্রামের গোকুল নগরে সভা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিকেলে হাজরাকাটায় শুভেন্দুর পাল্টা সভা করেছিল তৃণমূল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পূর্ণেন্দু বসু এবং তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন। বুধবার সন্ধ্যায় আবার সেই পূর্ণেন্দু, দোলার এলাকায় এসে কালী পুজোর উদ্বোধন করে গেলেন শুভেন্দু। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই পুজোর উদ্বোধনে নাকি আমন্ত্রণই পাননি স্থানীয় বিধায়ক।


বাগুইআটির জ্যাংড়ায় আমরা সবাই ক্লাবের কালী পুজোর উদ্বোধনে এসেছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। স্থানীয়দের মতে মঙ্গলবার শুভেন্দুর সভায় যা লোক হয়েছিল আর তৃণমূলের সভার যে জমায়েত, তা তুলনায় আসে না। শুভেন্দুর সভা ছিল আড়েবহরে অনেক বড়। কার্যত জনপ্লাবন।

এদিনের জ্যাংড়ায় কালীপুজোর উদ্বোধন দেখে অনেকেই বলছেন, শুভেন্দু যেন বোঝাতে চাইলেন, তোমাদের এলাকাতেও আমার লোক আছে।
জ্যাংড়া মানে ভিআইপি রোডের লাগোয়া এলাকা। উল্টোডাঙা থেকে এয়ারপোর্টের দিকে যেতে গেলে ডানদিকে পড়ে। এটি পূর্ণেন্দু বসুর বিধানসভা কেন্দ্র রাজারহাট গোপালপুরের মধ্যে পড়ে। অনেকের মতে, অতি বাম রাজনীতির সময় থেকেই পূর্ণেন্দু-দোলা জুটি। ফলে সেই সূত্রে এই এলাকায় দোলারও দাপট আছে বলে অনেকের বক্তব্য।

শুধু তাই নয়, শুভেন্দু যেখানে পুজো উদ্বোধন করেছেন সেটা দেবরাজেরও এলাকা। দেবরাজ তৃণমূলের উত্তর চব্বিশ পরগনার যুব সভাপতি। তিনি যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে দলে পরিচিত।
সব মিলিয়ে বুধবার জমজমাট সন্ধে দেখল জ্যাংড়া। কালীপুজোর উদ্বোধন হয়ে উঠল রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্র।

অতীতেও নির্বাচনের আগে এরকম ঘটনা ঘটেছে। দলের নানা কার্যকলাপের সঙ্গে একমত হতে পারেননি শুভেন্দু অধিকারী। যদিও পরবর্তীকালে মমতার সঙ্গে ভোট ময়দানে লড়েছেন তিনি। কিন্তু রাজ্য রাজনীতির বর্তমান বলেছে, এবার পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের থেকে দূরত্ব রাখছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী।

গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময় দলীয় নেতৃত্বের উপরে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। সম্প্রতি মেদিনীপুরের সভা থেকে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি। শুভেন্দু বলেন,’ দলে তার চলার পথ মসৃণ নয়,  তিনি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।’ অপরদিকে শুভেন্দুর সভাকে চ্যালেঞ্জ করে তৃণমূল একটি সভা করে। সেই সভা থেকেই তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা নাম না করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন।

রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তৃণমূল নেতৃত্বের ওপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বিভিন্ন সভায় তারই প্রতিফলন দেখা গেছে বার বার। মমতার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি অনুপস্থিত থেকে দলনেত্রীকে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি। তবে শুভেন্দু একা নন, মমতার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না মন্ত্রী রাজীব বন্দ্য়োপাধ্যায়। কী কারণে তিনি আসেননি তা জানা যায়নি। যদিও অসুস্থ থাকার জন্য  মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং গৌতম দেব আসতে পারেননি  বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সমাবেশে উপস্থিত হন শুভেন্দু অধিকারী। সেখান থেকেই নাম না করে একাধিক বাক্যবান শানান তিনি। মঞ্চ থেকে নানা ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য উঠে আসে তাঁর মুখে। শুভেন্দু বলেন, ‘১৩ বছর পর নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়ল। ভোটের আগে এসেছেন, ভোটের পরে আসবেন তো।’

ঘটনাচক্রে সেদিনই নন্দীগ্রাম দিবস পালনে এলাকায় যান পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নাম না করে তিনি বলেন, দলে আমিত্ব থাকা উচিত নয়। এখানে আমি বড় নয়, আমরাটাই মূল কথা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here