দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একটা সময়ে এমন হত। প্লেয়ার তুলে নিয়ে লুকিয়ে রাখা হত হোটেলে বা বাগানবাড়িতে।
বিহারে বিরোধী মহাজোটে আরজেডির শরিক দল হল কংগ্রেস ও সিপিএম। তারা আশা করেছিল, রবিবারের ব্রিগেডে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব তাঁদের সভায় উপস্থিত থাকবেন। সকালের ফ্লাইটে তেজস্বী পৌঁছেও গিয়েছিলেন কলকাতায়। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে সোজা গিয়ে ওঠেন শহরের এক অভিজাত হোটেলে। বেলা গড়িয়ে গেলেও ব্রিগেড পরের কথা, হোটেল থেকেই নাকি বেরোননি। অবশেষে সোমবার বিকেলে তাঁকে দেখা গেল নবান্নে। হয়তো ফ্যালফ্যাল করে তা শুধু দেখে গেল কংগ্রেস, বামেরা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে নবান্নে পৌঁছলেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। বিকেল ৪টে নাগাদ নবান্নে এসে পৌঁছন তিনি। সূত্রের খবর, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে চার আসনে প্রার্থী দিতে পারে আরজেডি। এই চার আসনের সমীকরণ নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সমঝোতার কথাও উঠে আসছে। সেই কারণেই মমতার সঙ্গে লালুপুত্রের সাক্ষাৎ বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিন রাজ্য সচিবালয়ের উঠোনে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় তেজস্বী যাদব বলেন, “পূর্ণ শক্তি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা সমর্থন করব। যেখানে আমাদের প্রয়োজন হবে সেখানেই ওঁর পাশে দাঁড়াবো। বিজেপি যত‌ই চেষ্টা করুক না কেন, বাংলা অন্য জায়গা। এখানকার ভাষা, সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্র কে বাঁচাতে হবে”। লালু পুত্র এও বলেন, “বিহারের যেসব মানুষ বা আমি তাদের কাছেও আবেদন করবো যাতে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেন”। করোনা মোকাবিলায় মমতা দিদি-র কাজেরও ভূয়সী প্রশাংসা করেছেন তেজস্বী।

এদিন তেজস্বী যাদব জানান, শুরু থেকে আমাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। লালু জির সঙ্গে বরাবর ভাল সম্পর্ক। বাংলায় হিন্দি ভাষাভাষির অনেকে আছেন। বিহার, উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খন্ডের অনেকে এখানে আছে। এটা ভোটের সময়। অনেকের প্রশ্ন আমাদের অবস্থান কী?

তিনি জানান, লালু জির নির্দেশ, পুরো সমর্থন করতে হবে মমতা দিদিকে। আমাদের যা শক্তি রয়েছে বাংলায়, আমাদের যেখানে শক্তি রয়েছে সাহায্য করব। সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসতে চাইছে। বিজেপি আটকাতে হবে। ওদের স্বপ্নপূরণ হতে দেব না। মূল্যবোধ বাঁচাতে হবে। গণতন্ত্র বাঁচাতে হবে। ভাষা, সভ্যতা বাঁচাতে হবে।

বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, সংবিধান বিপদে। দেশকে ভেঙে ফেলার শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। মমতা করোনার সময় যেভাবে কাজ কেরছেন, তার যতই প্রশমসা করা হোক কম হবে। বিহারের যাঁরা এখানে আছেন, ডবল ইঞ্জিনের সরকার লুঠছে। বিহারের যে মন্ত্রীরা রয়েছেন, তাঁরা সেখানে কাজ না করে এখানে পড়ে রয়েছেন।

গত বছরের শেষে বিহার ভোট হয়েছে। সেই ভোটে বিজেপি-নীতীশের জোটকে রীতিমতো চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তেজস্বী। কারণ, ১৫ বছর এক টানা ক্ষমতায় থাকায় বিজেপি-নীতীশের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়েছিল। বাংলায় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে।


লালু পুত্রের সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা বলেন, “বিহারে তো তেজস্বী যাদব এর জেতার কথা ছিল। কিন্তু ওখানে অনেক গোলোযোগ করে ওকে জিততে দেওয়া হয় নি। আমি আশা করি তেজস্বী ওখানে আবার জিতবে”। দিদির আরও বলেন, “লালু প্রসাদ যাদবের সুস্থতা কামনা করি। ইচ্ছা করে ওনাকে জেলে ঢুকিয়ে রেখেছে। গণতন্ত্রের জন্য ওনার বেঁচে থাকা খুব জরুরি।”

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কৌশলগত কারণেই এদিন তেজস্বীকে নবান্নে হাজির করিয়েছে তৃণমূল। বাংলায় বসবাসকারী বিহারিদের পাশে পেতে যেমন তা করা হয়েছে, তেমনই তৃণমূল এও দেখাতে চাইছে, তামাম ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছে।

এদিন মমতা-তেজস্বীর মিটিংকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, “এক অরাজক আর এক জন অরাজকের প্রশংসা করছেন। কোভিড ব্যবস্থাপনা বাংলায় কেমন হয়েছিল, রাজ্যের মানুষ ভালমতো জানে।” তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে বহিরাগত বলেন, আর আরজেডি হল বাংলার পার্টি, ঘরের ছেলে হলেন তেজস্বী। এটা দ্বিচারিতা কিনা সেও মানুষই বিবেচনা করবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here