দেশের সময ওযেবডেস্কঃ  ক্রমশই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ৷ প্রয়োজন ভ্যাকসিন। অপ্রতুল জীবনদায়ী ওষুধ। এমত পরিস্থিতিতে 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফের চিঠি লিখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট সংখ্যায় ভ্যাকসিন মিলছে না রাজ্যে। রেমডিসিভির, অক্সিজেন ও অন্যান্য নানা ওষুধের জোগানও কম বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এখানেই শেষ নয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে অভিযোগ জানিয়েছেন, ভোটের আবহে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রচারে বাইরের লোকজনের আগমনে রাজ্যে করোনা বাড়ছে, পরিস্থিতি আরও কঠিন হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা চিঠিতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।খ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি একটি চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। তাতে মমতা জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার বিনামূল্যে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করতে চায় রাজ্যেজুড়ে। সেজন্য কেন্দ্রের তরফে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন যেন সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে টিকা কিনে রাজ্যের মানুষকে তা দেওয়ার অনুমতিও চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই চিঠির এখনও কোনও উত্তর মেলেনি বলে আজ লিখেছেন মমতা।

আজ রবিবার ফের মোদীকে লেখা কড়া চিঠিতে মমতা মূলত তিনটি দাবি তুলে ধরেছেন কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দাবি, রাজ্যকে আরও অন্তত ৫.৪ কোটি করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহ করুক কেন্দ্র। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার মোট ২.৭ কোটি মানুষকে টিকা দিতে চায়। সে জন্য দুটি করে ডোজ হিসেবে ৫.৪ কোটি ভ্যাকসিন প্রয়োজন। এব্যাপারে কলকাতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ জনসংখ্যার ঘনত্ব এখানেই সব থেকে বেশি।


মমতার দ্বিতীয় দাবি, কোভিড চিকিৎসার অন্যতম ওষুধ রেমডিসিভিরের সরবরাহ যেন নিয়মিতভাবে বজায় রাখা হয় রাজ্যে। তিনি লিখেছেন, এই মুহূর্তে টলিসিজুমাবের ২ হাজার ভায়াল প্রয়োজন।  প্রয়োজন ৬ হাজার ভায়াল রেমডিসিভর।

মুখ্যমন্ত্রীর তৃতীয় দাবি, যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যের প্রয়োজনমতো অক্সিজেন সরবরাহ করুক কেন্দ্র। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেল-এর নিয়মিত অক্সিজেন সরবরাহ করছে রাজ্যে৷ এই সরবরাহ যাতে অব্যাহত থাকে, তা নিশ্চিত করতেও প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷


তিনি জানিয়েছেন, করোনা অতিমারিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে নিজেদের সব পরিকাঠামো ব্যবহার করে কেন্দ্রকে সব রকম সাহায্যে তৈরি রাজ্য সরকার৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা চিঠিতে মূলত রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের সমন্বয় বজায় রাখার দাবি জানানো হয়েছে।

এই তিনটি দাবির পাশাপাশি করোনা-মোকাবিলায় কেন্দ্রের ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তুষ্টির কথাও প্রকাশ পেয়েছে চিঠিতে। তাঁর বক্তব্য,”করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে ৩টি নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আপনার হয়তো মনে থাকবে ২৪ ফেব্রুয়ারি আমি আপনাকে চিঠি লিখে রাজ্যের জন্য ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা রাজ্যজুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচি চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে এখনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়নি।”

পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরও বলছেন, “এর মধ্যে রাজ্যের করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রচারে বহিরাগতদের আগমনে পরিস্থিতি কঠিন হচ্ছে।”

এদিকে, নজিরবিহীন ভয়াবহতার চিত্র দেখছে দেশ। রবিবার আড়াই লাখ পার করল দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৫০০। মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৫০১ জনের। এদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৩ জন। বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ লাখ এক হাজার ৩১৬।

দেশের বর্তমান চিত্র ভাবাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। ইতিমধ্যেই করোনা নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছেন মোদী। ওই বৈঠক চলাকালীন তিনি জানান, এই বছর আরও দ্রুততার সঙ্গে কোভিডের সঙ্গে লড়াই করবে দেশ। দেশবাসীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন তিনি।

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে শনিবার বাংলায় প্রায় পৌনে আট হাজারে পৌঁছেছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, গত বছর লকডাউনের পরে যে সব বিধি মেনে নাগরিক জীবন চালু হয়েছিল, সেই বিধিগুলি কঠোর ভাবে মানতে হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হচ্ছে।

কঠোর ভাবে এই বিধি কার্যকর করতে পথে নামবে প্রশাসন। কিন্তু সরকারি নির্দেশগুলি কী ভাবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নাগরিক সমাজে। কারণ ভোটের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারে করোনা-বিধি ভঙ্গ হলেও কোথাও তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসন সে ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। আরও অন্তত তিন সপ্তাহ রাজ্যে নির্বাচন বিধি জারি থাকবে। তা হলে আর নাগরিকদের বিধি মানতে বাধ্য করা হবে কোন পথে?

সরকারের সতর্কবার্তা- একনজরে
জনসমক্ষে, গণপরিবহণে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
সপ্তাহে অন্তত একদিন কর্মক্ষেত্র, বাজার স্যানিটাইজেশন।
অফিস, কর্মক্ষেত্রেও মাস্ক-দূরত্ববিধি বাধ্যতামূলক।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক ফর্ম হোম বাড়ানোর পরামর্শ।
মল, হল, মাল্টিপ্লেক্সে স্যানিটাইজেশন, থার্মাল গানের ব্যবস্থা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here