দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃভোটের টিকিট না পেয়ে অভিমানে দল ছেড়েছিলেন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েও টিকিট পাননি সাতগাছিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক সোনালী গুহ। ভোট হয়ে গেছে। ফলও বেরিয়ে গেছে অনেকদিন। এবার ‘ঘরে’ ফেরার পালা।

পুরনো দলে ফিরতে চেয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এদিন আবেদন জানিয়েছেন সোনালী দেবী। টুইটারে শেয়ার করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর লেখা চিঠি। চিঠির পরতে পরতে রয়েছে কৃতকর্মের জন্য ‘অনুশোচনা’।

ঠিক কী লিখেছেন চিঠিতে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম জানিয়ে সোনালী দেবী লিখেছেন, “অত্যন্ত ভগ্ন হৃদয়ে বলছি যে, আমি আবেগপূর্ণ হয়ে চরম অভিমানে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য দলে গিয়েছিলাম। যেটা ছিল আমার চরম ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি।”

এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও লিখেছেন, “মাছ যেমন জল ছাড়া বাঁচতে পারে না তেমনই আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন।” দিদির আঁচলের তলে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেয়েছেন অনুতপ্ত সোনালী গুহ।

বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হলে জনসমক্ষে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন এই সোনালী দেবী। এমনকি কান্নাকাটি করতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছিলেন, সোনালীর শরীর ঠিক নেই, তাই ওকে এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। কিন্তু দল নেত্রীর এই অজুহাতে চিড়ে ভেজেনি। আরও অনেকের সাথেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনিও।

তবে সময় বিশেষে দেখা যায় বিজেপিও টিকিট দেয়নি সোনালী দেবীকে। দলবদলু হিসেবেই থেকে গেছেন তিনি।এরপর ভোটের ফলাফলে বিজেপি দাগ কাটতে পারেনি। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভুল বুঝতে পেরে এখন তাই ঘরে ফেরার বায়না ধরেছেন সাতগাছিয়ার চারবারের বিধায়ক সোনালী গুহ।

প্রসঙ্গত, একুশের ভোটে ঐতিহাসিক জয়ের পর কালীঘাটে সাংবাদিক বৈঠকে দলবদলুদের দলে ফেরার প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আসুক না। কে বারণ করেছে? এলে স্বাগত!’ মমতার এই মন্তব্যের পরই জোর চর্চা শুরু হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। এমনকী, মুকুল রায়কে ঘিরেও জল্পনা ছড়িয়েছিল। যদিও পরে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে মুকুল জানিয়ে দেন, তিনি বিজেপি-র সৈনিক হিসেবেই কাজ করবেন। অন্যদিকে, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরেও জল্পনা ছড়িয়েছে।

 সংবাদ মাধ্যমকে সোনালি গুহ বলেন, ‘যাঁরা অভিমান করে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ফিরবেন’। কে কে ফিরছেন? এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কোনও বার্তা দেননি সোনালি। তবে দীপেন্দু বিশ্বাসের নাম নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সোনালির ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘আগামীদিনে দেখুন না কী হয়’।

এই প্রসঙ্গে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা করব।’ তাহলে কি তৃণমূলে ফিরছেন? রাজীব বাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘ এ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। কে জল্পনা ছড়িয়েছে জানি না।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয়ের অভিনন্দন জানিয়েছেন? রাজীবের উত্তর, ‘সেটা সংবাদমাধ্যমে বলব কেন।’ যে সুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে ফের মন্তব্য করলেন রাজীব, তা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ।

এই প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে সোনালির যে বার্তা এবং তৃণমূলত্যাগীদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে যে ইঙ্গিত দিলেন তিনি, তা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here